নোবেল জয়ী আরেক বাঙালি অভিজিৎ

By: রাশেদ শাওন ২০১৯-১০-১৪ ৫:৩৩:১৩ এএম আপডেট: ২০২৪-০৫-০৩ ৬:০৫:৫৯ এএম আন্তর্জাতিক
নোবেল জয়ী আরেক বাঙালি অভিজিৎ ব্যানার্জি

১৯১৩ সাল। সে বছর গীতাঞ্জলি (ইংরেজি অনুবাদ, ১৯১২) কাব্যগ্রন্থের জন্য বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। সর্বপ্রথম বাঙালি হিসাবে তিনিই প্রথম  নোবেল জয়ী।

১৯৯৮ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হন ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। দুর্ভিক্ষ, মানব উন্নয়ন তত্ত্ব, জনকল্যাণ অর্থনীতি ও গণদারিদ্রের অন্তর্নিহিত কার্যকারণ বিষয়ে গবেষণা এবং উদারনৈতিক রাজনীতিতে অবদান রাখার জন্য তিনি অর্থনৈতিক বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

২০০৬ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন আরেক বাঙালি। তিনি হলেন বাংলাদেশের ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ‘দারিদ্র্য নিরসনের মাধ্যমে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা’র জন্য সে বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয় তাকে।

আর এ বছর চতুর্থ বাঙালি হিসেবে অর্থনীতিতে নোবেল পুরষ্কার পেলেন অভিজিৎ।

রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস সোমবার অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী হিসেবে তিনজনের নাম ঘোষণা করে। এরা হলেন- অভিজিৎ ব্যানার্জি, এস্তার দুফলো ও মাইকেল ক্রেমার। তাদের মধ্যে অভিজিৎ ব্যানার্জি ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাঙালি।

কলকাতায় জন্ম নেওয়া অভিজিৎ-ই শুধু নন, তাঁর স্ত্রী ফরাসি বংশোদ্ভূত মার্কিন অর্থনীতিবিদ এস্তার দুফলোও একই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

অভিজিতের জন্ম মুম্বাইয়ে ১৯৬১ সালে। তাঁর মা-বাবা দুজনেই অর্থনীতির স্বনামধন্য অধ্যাপক। ছেলেও অর্থনীতির শিক্ষক। বাবা-মার কর্মজীবন কেটেছে কলকাতাতেই। সোমবার এই বঙ্গসন্তানের প্রাপ্তির মুকুটে যুক্ত হলো নোবেল। যাঁর কথা বলা হচ্ছে, তাঁর পুরো নাম অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়।

এখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) অধ্যাপক। এছাড়া আব্দুল লতিফ জামিল পোভার্টি অ্যাকশন ল্যাবের সহ প্রতিষ্ঠাতা তিনি। ইনোভেশন ফর পোভার্টি অ্যাকশনের গবেষক। তিনি কনসোর্টিয়াম অন ফাইন্যান্সিয়াল সিস্টেমস অ্যান্ড পোভার্টির সদস্য।

তাঁর মা নির্মলা কলকাতার সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেসের অর্থনীতির অধ্যাপক। বাবা দীপক ব্যানার্জি কলকাতার বিখ্যাত প্রেসিডেন্সি কলেজের অর্থনীতির অধ্যাপক ছিলেন।

অভিজিতের শৈশব-কৈশোর কেটেছে কলকাতাতেই। কলকাতার সাউথ পয়েন্ট স্কুলে লেখাপড়া করেছেন। পরে পড়েছেন প্রেসিডেন্সি কলেজে। দিল্লির জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটিতেও কেটেছে শিক্ষাজীবনের একটি অংশ। এরপর ১৯৮৮ সালে তিনি হাভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেছেন।

সুইডিশ রয়্যাল একাডেমি অর্থনীতিতে নোবেলের জন্য এই তিনজনের নাম ঘোষণা দিয়ে বলেছে, ‘বৈশ্বিক দারিদ্র্য নিরসনে এই ত্রয়ী আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছেন। মাত্র দুই দশকে তাদের পরীক্ষামূলক গবেষণা উন্নয়ন অর্থনীতির মোড় পরিবর্তনে সহায়তা করেছে। এটা গবেষণার একটি নতুন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।’

একাডেমি আরও বলেছে, এই তিনজনের পরীক্ষামূলক গবেষণা পদ্ধতি ৫০ লাখের বেশি ভারতীয় শিশুকে উপকৃত করেছে।

অভিজিৎ ব্যানার্জির প্রথম স্ত্রী অরুন্ধতী তুলি ব্যানার্জি এমআইটির প্রভাষক। তিনিও কলকাতাতেই বেড়ে ওঠেন। কবির ব্যানার্জি নামে দুজনের একটি ছেলেও ছিল। পরে অভিজিৎ-অরুন্ধতীর বিচ্ছেদ হয়। ২০১৬ সালে মারা যান এ দম্পতির ছেলে কবির। গবেষণার সঙ্গী এস্তার দুফলো ২০১৫ সালে অভিজিতের জীবনসঙ্গী হন।

বিশ্বের নামী সব সাময়িকীতে অসংখ্য লেখা প্রকাশ হয়েছে অভিজিৎ ব্যানার্জির। বই আছে নিজের লেখা চারটি। এর মধ্যে অভিজিৎ ও এস্তারের লেখা ‘পুওর ইকনোমিকস’ বইটি জিতেছে গোল্ডম্যান স্যাকস বিজনেস বুক অব দ্য ইয়ার পুরস্কার।

অভিজিতের নোবেল পাওয়ার খবরে উদ্বেল ভারতীরা। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ইন্ডিয়া আফটার গান্ধীর’ লেখক রামচন্দ্র গুহ টুইটারে লিখেছেন, ‘লেখাপড়ায় অসামান্য তিনি। এর পাশাপাশি হাতের রান্নাও দারুণ। আর ভারতীয় ধ্রুপদি সংগীতের একনিষ্ঠ ভক্ত তিনি। ভারতীয় সংস্কৃতির সর্বোত্তম দিকগুলোই তিনি তুলে ধরেন।’

অভিজিতের নোবেল জয়ে আনন্দিত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইট বার্তায় মমতা লিখেছেন , ‘নোবেল জয়ে সাউথ পয়েন্ট স্কুল ও প্রেসিডেন্সি কলেজের সাবেক এই শিক্ষার্থীকে হৃদয় নিংড়ানো অভিনন্দন জানাই। আরেক বাঙালি জাতিকে আবার গর্বিত করল। আমরা আপ্লুত।’