৩৪ বছর পর সুইডেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর হত্যা রহস্য উদঘাটন

By: সুখবর ডেস্ক ২০২০-০৬-১০ ৮:২৩:৫০ পিএম আপডেট: ২০২৪-১২-২১ ১:৩৬:২০ পিএম আন্তর্জাতিক
আততায়ীর হাতে খুন হন সুইডেনের সাবেক প্রধান মন্ত্রী ওলোফ পাম

সুইডেনের কৌঁসুলিরা ৩৪ বছর পর দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ওলোফ পামের খুনের রহস্য উদঘাটন করতে পেরেছেন বলে দাবী করেছেন।

জানা গেছে, আততায়ীর নাম স্টিগ ইংস্ট্রম যে "স্ক্যানডিয়া ম্যান" নামেও পরিচিত ছিল।

আততায়ী ২০০০ সালেই আত্মহত্যা করেছেন বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

 

১৯৮৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে স্ত্রী লিসবেত, ছেলে মার্টিন ও ছেলের বান্ধবীর সঙ্গে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলেন সুইডেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পাম।

সিনেমা শেষে স্ত্রীর সঙ্গে স্টকহোমের রাস্তায় হাঁটার সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন ৫৯ বছর বয়সী এ রাজনীতিক; ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়েছিল।

সেদিন সিনেমা দেখতে যাওয়ার আগেই পাম তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মীদের ছুটি দিয়ে দিয়েছিলেন।

এই সুযোগে খুনি স্টকহোমের ব্যস্ত সড়কে প্রধানমন্ত্রীকে গুলি করে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে .৩৫৭ ম্যাগনাম হ্যান্ডগানের কয়েকটি গুলি পাওয়া গেলেও শেষ পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বন্দুকটির কোনো হদিশ মেলেনি।   

ওই ঘটনার ৩৪ বছর পর খুনিকে শনাক্ত করার কথা জানিয়েছেন সুইডেনের চিফ প্রসিকিউটর ক্রিস্টের পিটারসন। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যু নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম শেষেরও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

ইংস্ট্রমকে শনাক্তের আগে কৌঁসুলিরা পাম হত্যাকাণ্ডের তদন্তে হাজারো মানুষের সাক্ষ্য নিয়েছিলেন।

প্রথম দিকে ছিঁচকে এক অপরাধীকে অভিযুক্ত করা হলেও উপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ না থাকায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। 

স্বামীর প্রকৃত খুনি কে- তা না জেনেই ২০১৮ সালে লিসবেত পাম মারা যান।

 

কে এই আততায়ী?
মি. ইংস্ট্রম স্ক্যানডিয়া নামে একটি বীমা কোম্পানিতে কাজ করতেন, যে কারণে পরে তাকে 'স্ক্যানডিয়া ম্যান' নামেও উল্লেখ করা হতো। ঘটনার দিন তিনি দেরি করে কাজ করছিলেন এবং তার অফিসের সদর দপ্তর ছিল ঘটনাস্থলের খুবই কাছে।

প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে পুলিশ তাকে যখন জেরা করে, তখন ইংস্ট্রম খুনের ঘটনা সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন।

দেশটির একটি পত্রিকাতে ২০১৭ সালে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইংস্ট্রমের সাবেক স্ত্রী জানান পুলিশ তাকেও জেরা করেছিল। তিনি তখন বলেছিলেন ইংস্ট্রম পুরো নির্দোষ।

"সে খুবই ভীতু প্রকৃতির, মানুষ মারা দূরের কথা, সে একটা মাছিও মারবে না," বলেছিলেন মি. ইংস্ট্রমের সাবেক স্ত্রী।

পুলিশ বেশ কিছু মানুষকে জেরা করেও খুনের কোন কিনারা করতে পারেনি। যে বুলেটটি উদ্ধার করা হয়েছিল সেটি দেখে পুলিশ এটুকু বুঝেছিল খুবই শক্তিশালী আগ্নেয়াস্ত্র থেকে ওই গুলি ছোঁড়া হয়।

একজন কর্মকর্তা বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বুলেটপ্রুফ ভেস্ট পরে থাকলেও তিনি মারা যেতেন। "কাজেই যে তাকে গুলি করেছিল, সে শুধু সুযোগ নিতে চায়নি, সে আসলেই পরিকল্পনা করে হত্যার উদ্দেশ্যেই গুলি চালিয়েছিল, " তিনি বলেন।

 

কেন কেউ ধরা পড়েনি?
এক ব্যক্তির জেল হয়েছিল। সে ছিল দাগী অপরাধী। ওই অপরাধীর নাম ছিল ক্রিস্টার পিটারসন (প্রধান কৌঁসুলির নামও এক- তবে অবশ্যই তারা আলাদা ব্যক্তি)। সন্দেহভাজন অপরাধীদের লাইন করে যখন হাজির করা হয়, তখন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী তাকে অপরাধী হিসাবে শনাক্ত করেছিলেন। ১৯৮৯ সালে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল।

পরে অবশ্য অল্পদিনের মধ্যেই এক আপিলে ওই রায় খারিজ করে দেয়া হয়। তার কোন উদ্দেশ্য প্রমাণিত হয়নি। তার কাছে কোন অস্ত্রও পাওয়া যায়নি। ওই ব্যক্তি ২০০৪ সালে মারা যায়।

মি. পামের হত্যায় দোষ স্বীকার করেছিল ১৩০ জনের বেশি। এ তথ্য দিয়েছেন তদন্তকারী দলের প্রধান হান্স মেলান্ডার।