নতুন সূর্য্য দেখব একদিন: মুনিরা সুলতানা মিলি

By: রাশেদ শাওন ২০২০-০৬-০৪ ৬:০০:৩৫ পিএম আপডেট: ২০২৪-১১-২১ ১:২৬:২৭ এএম সাক্ষাতকার
মুনিরা সুলতানা মিলি

টরোন্টোর দেশি কমিউনিটিতে পরিচিত প্রিয় মুখ মুনিরা সুলতানা মিলি। তিনি একাধারে আবৃত্তিশিল্পী, লেখক, উপস্থাপক ও সংগঠক । জড়িত আছেন স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের সাথে বহুদিন ধরে। শুধু যে যুক্ত তাই-ই নয়, কাজ করে যাচ্ছেন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে। 

কোভিড-১৯ এর এই মহামারির সময়েও ঘরে ও ঘরের বাইরে কাজ করে যাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে।

চলুন, আজ মিলি’র সাক্ষাতকার থেকে জেনে নিই তাঁর নানা কর্মকাণ্ড সম্পর্কে।

 

রাশেদ শাওন: ফেসবুক থেকে জানলাম ত্রিতরঙ্গের প্রযোজনায় বিশ্ব মানবতা শিরোনামে গান প্রকাশ হতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাই।

মুনিরা সুলতানা মিলি: এক মাসের প্রতীক্ষা শেষে ৫ই জুন শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা, ভারতের সময় সন্ধ্যে ৭টা ৩০মিনিটি, ইউএসএ ও কানাডা সময় সকাল ১০টা এবং ইউকে সময় বিকেল ৩টায় অন লাইন ZOOM এ Launching হতে যাচ্ছে পাঁচটি দেশের ১৪ জন শিল্পীর সমন্বয়ে ত্রিতরঙ্গের প্রযোজনা বিশ্ব মানবতার গান ‘কেন মৌনতা, তুমি বাড়াও দু'হাত, বিশ্ব মানবতা কাঁদে চারিদিকে’।

পুরো আয়োজনের সমন্বয়ক শাওন পান্থ। এটি সরাসরি দেখা যাবে ইউটিউব চ্যানেল ‘আমরা করবো জয়’ ও Subarna Rahman ফেসবুক আইডিতে।

পুরো আয়োজনটি সকলের জন্যে একটি সারপ্রাইজ। তাই এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না। লাইভে সবার সাথে পুরো বিষয়টি শেয়ার করব।

 

রাশেদ শাওন: কোভিড-১৯’র এই মহামারিতেও আপনি বিভিন্ন সংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে  যাচ্ছেন অনলাইনে ও প্রত্যক্ষ অংশ গ্রহণের মাধ্যমে। সে বিষয়ে জানতে চাই।

মুনিরা সুলতানা মিলি: মহামারির শুরুর দিকে কিছুটা বন্দী অবস্থায় ছিলাম। তখন বেশকিছু অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ পেলেও ফিরিয়ে দিয়েছি। সত্যি বলতে তখন একটা ঘোরের ভিতরে ছিলাম। এর পর পরিস্থিতি বদলে যায়। সময়ের সাথে নতুন নিয়মের সাথে নিজেকে মানিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে কাজে নামি।  আমি যেহেতু ইর্য়ক ইউনির্ভাসিটিতে কাজ করি, সেখানকার শিক্ষার্থিদের সাথে মিলে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক কাজে যুক্ত হই। এছাড়া অনলাইনে বিভিন্ন সংস্কৃতিক কাজে যুক্ত হই। সাংগঠনিক বিভিন্ন কাজ করছি স্থানীয়ভাবে ও বাংলাদেশের সাথে। এছাড়া বেশ কয়েকটি অনলাইন প্লাটফর্মেে এডমিন ও মডারেটর হিসেবেও কাজ করছি- সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য সরবরাহ করতে। কেননা আমি বিশ্বাস করি, কেউ স্তব্ধ থাকব না। নতুন সূর্য্য দেখব একদিন। নতুন নিয়মের কাজগুলোকে আমি উপভোগও করছি।

 

রাশেদ শাওন: আপনি স্থানীয় বেশ কিছু সংগঠনের সাথে যুক্ত আছেন। বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ কানাডা’র আহ্বায়ক। এছাড়া  কাজ করছেন ত্রিতরঙ্গ প্লাটফর্মে, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান WOS-সহ আরও কিছু সংগঠনের সাথেও কাজ করছেন। ব্যক্তিগতভাবে আপনি একজন উপস্থাপক, আবৃত্তিশিল্পী ও লেখক।  এ সব কয়টি ক্ষেত্রেই আপনার  ব্যস্ত পদচারনা।  কিভাবে কাজগুলো সমন্বয়ন করছেন?

মুনিরা সুলতানা মিলি: বেশির ভাগ কাজ হচ্ছে অনলাইনে। সবার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে কাজগুলো করছি। তবে স্যোসাল ডিসটেন্স মেনে কিছু স্বেচ্ছাশ্রমের কাজে যুক্ত হতে পেরে আমি বেশ পুলকিত। স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করতে গিয়ে বেশকিছু তরুণ শিক্ষার্থীর সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছে আমার। কেউ মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়লে তাকে মোটিভেশন করা, তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা, ভালোমন্দের খোঁজ খবর করাসহ বিভিন্ন পরামর্শ দিই। তাদের সাথে নিয়মিত যোগ করি ও ফলোআপে রাখি।

এছাড়া করোনা ভাইরাস কমিউনিটি সাপোর্ট এন্ড সার্ভিস (সিসিএসসএস) এর সাথে কাজ করছি করোনা বিস্তারের শুরু থেকেই। অসহায় ও বয়স্কদের বাজার করে দেওয়া, যারা নিঃসঙ্গ তাদের খবরাখবর নেওয়া, বিনামূল্যে মাস্ক বিতরন করার মতো কাজগুলো করছি নিয়মিত।  দেশে, বিশেষ করে আমার এলাকা চট্টগ্রামের জন্যে তহবিল সংগ্রহ করছি ত্রিতরঙ্গ এর হয়ে। সেখানে সংস্কৃতিক কর্মিদের তালিকা করে তিন দফায় উপহার সামগ্রী বিলি করা হয়েছে।

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান WOS-এর কর্মিরা একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করছি। বিভিন্ন রকমের কাজের পরিকল্পনা চলছে। সব মিলিয়ে খুব ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছি আমি।

 

রাশেদ শাওন: সবাই যেখানে ঘরে বন্দী হয়ে বসে আছে, সেখানে আপনি ঘরে ও ঘরের বাইরে সমানভাবে ব্যস্ত। আমরা জানি আপনি লেখালেখিতেও নিয়মিত। পরিবার ও কাজ এই দুয়ের সমন্বয় করছেন কিভাবে?

মুনিরা সুলতানা মিলি: দেশে যে কাজগুলো করছি সেগুলো সাধারণত রাতে করি। আমি যেহেতু কবিতা আবৃত্তি করি, তাই দিনের একটা সময় চর্চাও করতে হয়। সেটাও সাধারণত রাতে করি। অন্য কাজ দিনের নানা সময়ে ভাগাভাগি করে করছি।

আর পরিবার থেকে সাহায্য না পেলে আমি আসলে কিছুই করতে পারতাম না। আমার হাজবেন্ড মোহাম্মদ আজম, আমার তিন সন্তান আলিফ, আরিকা, আনিশা তো আছেই; আমার বাবামা, ভাই, ভাইয়ের বউ জাসরুন চৌধুরী, সবাই আমার কাজগুলোকে এগিয়ে নিতে আন্তরিকভাবে সাহায্য করছেন। 

এখানে আরও যোগ করতে চাই, পরিবার ও আশেপাশের সব বন্ধু প্রিয়জনদের অনুপ্রেরণা পাওয়াতেই আমি আমার সব কাজগুলো গুছিয়ে করতে পারছি। এ জন্যে বিশেষভাবে ধন্যবাদ দিতে চাই সিসিএসএস-এর সমন্বয়ক নওশের আলী ভাই, চট্টগ্রাম সমিতির উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম, ভাইস প্রেসিডেন্ট সেলিনা হোসেন আপা, WOS-এর ইফতেখার কামাল, শেখ আনোয়ার হোসেন, বাংলা স্কুলের শাকিল, বন্ধু অনুশ্রী বড়ুয়াকে। সেই সাথে কমিউনিটির সব মানুষের প্রতি আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই। সবাই যেনো ভালো থাকে সেই দোয়া করছি এবং আমার জন্যে সবার কাছ দোয়া চাইছি।

 

রাশেদ শাওন: ধীরে ধীরে লকডাউন শিথিল হচ্ছে। আমাদের দৈনন্দিন কাজেও নানা পরিবর্তন আসছে। সামনের দিনগুলো নিয়ে কোনো পরিকল্পনা কি করছেন?

মুনিরা সুলতানা মিলি: আমি সব সময় মনে করি পরিকল্পনা খুবই জরুরী। শিশু কিশোর ও তরুণদের নিয়ে আমাদের কিছু পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিল। অসময়ের জালে পড়ে সবই ভেস্তে গেছে। সেসব নিয়ে কাজের পরিকল্পনা এখনও বাদ দিইনি। তাছাড়া ডাব্লিউওএস এর বেশকিছু প্রোডাকশন করার কথা ছিল আমাদের। সেসব নিয়ে এখন ভিন্নভাবে ভাবতে হচ্ছে। সেসব পরিকল্পনাগুলোকে এগিয়ে নিতে চাই সামনের দিনগুলোতে।

 

রাশেদ শাওন: সুখবর নিয়ে কিছু বলতে চান কি?

মুনিরা সুলতানা মিলি: কাজে এগিয়ে যাওয়াটাই আসল কথা। সুখবর অনেকের মতো চুপ করে বসে না থেকে চেষ্টা করছে কমিউনিটির পাশে থাকার। এটাই বড় পাওয়া আমাদের। তাদের এই এগিয়ে যাওয়াকে সাধুবাদ জানাই।

 

রাশেদ শাওন: সুখবরকে সময় দেওয়ার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।