- ● যেভাবে ‘টেসলা’য় কর্মরত বাংলাদেশের রাফা
- ● A Decade of Recitation Elegance: Bachonik Celebrates 10 Years of Artistic Brilliance
- ● বর্ণাঢ্য আয়োজনে বুয়েট নাইট অনুষ্ঠিত
- ● ‘গান্ধী শান্তি পুরস্কার’-এ ভূষিত বঙ্গবন্ধু
- ● শনিবারের কলমে হিমাদ্রী: মায়ের “শেখসাব”
- ● সুখী দেশের তালিকায় কানাডা ১৫তে, শীর্ষে ফিনল্যান্ড
- ● গিনেস বুকে ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’
- ● দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দশ তরুণ নেতাদের তালিকায় মাশরাফি
- ● ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ ২০২১ পাচ্ছেন যারা
- ● প্রসংশায় ভাসছে জিয়া হাসানের সাথে ঘরোয়া’র স্বত্বাধিকারীর আলাপচারিতা
দেশে দেশে ইফতারের ঐতিহ্য (পর্ব- এক)
রমজান মাস চলছে। পবিত্র ও বরকতময় এই মাস মুসলমানদের জন্যে বয়ে আনে আনন্দ ও সৌভাগ্য। এই মাসে মুসলামরা যেমন এক আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকেন তেমনি মাসটিকে ঘিরে যেনো এক আনন্দময় আবহ তৈরি হয়। বিশেষ করে সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারের সময়কে ঘিরে ঘটে এক এলাহি কাণ্ড। ইফতারের সময় রোজা ভাঙ্গার যে বন্দোবস্ত হয় তা সকল মুসলিমরা একই নিয়মে পালন করে থাকলেও দিনশেষে খানাপিনার আয়োজন সব দেশে এক রকম নয়। ভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতির কারণে তা আমূল বদলে যায়।
যদিও রোজার মূল প্রতিপাদ্যই হচ্ছে সংযম করা। যার জন্য দৈনন্দিন জীবনের রুটিনটা এই একটা মাসের জন্য ভিন্ন হয়ে যায়। এই যেমন ভোর রাতে উঠে সেহরি খাওয়া, সারাদিন দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি ধর্মীয় ইবাদত এবং সংযমকে প্রাধান্য দেয়া; সন্ধ্যার সময় পরিবার, আত্মীয়স্বজন অথবা বন্ধুপরিজনের সাথে ইফতার করা এবং এরপর তারাবীহ নামাজ আদায় করা।
সারাদিন রোজা রেখে এবং ইবাদত করে একজন রোজাদারের কাছে ইফতারের সময়টাই প্রধান আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। কমবেশি সবাই চায় ইফতারটাকে বর্ণাঢ্য সাজে সাজাতে। আবার, ইফতারেরও আছে নিজস্ব কৃষ্টি আর সংস্কৃতি। যেমন- ইসলামের প্রবর্তক মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ খেজুর দিয়ে ইফতার পালন করতেন; তাই মুসলিমদের কাছে ইফতারের আয়োজনে খেজুর রাখাটা শুধু ঐতিহ্য কিংবা সংস্কৃতিই নয় বরং এটা নবীর সুন্নত। সাধারণত মুসলিম প্রধান দেশে খেজুর বা পানি দিয়ে ইফতার শুরু করার চল।
স্বাস্থ্যকর আর পুষ্টিসম্পন্ন এবং শরীরের জন্য উপকারী ফলগুলোই থাকে ইফতারের আয়োজনে। বিভিন্ন ধরণের শরবতও থাকে। এছাড়া, ইফতারের তালিকায় থাকে ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, হালিম, বিভিন্ন রকমের কাবাব, জিলাপি সহ আরো রকমারি আয়োজন। ইফতারের সময় খাবার তালিকায় এই পদগুলো ঘুরে ফিরে আসে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে বসবাসকারী প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে।
তাই আজ বাঙালিদের ইফতার নিয়ে নয়, বরং বিশ্বের মুসলিমপ্রধান বা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অন্যান্য দেশ সমূহের জনপ্রিয় ইফতার আইটেম নিয়ে ধারবাহিক এই আয়োজন।
এর প্রথম পর্বে থাকছে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধান ইফতার প্রসঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোচনা।
সৌদি আরব
ইসলাম ধর্মের সূতিকাগার হচ্ছে এই দেশ। তাছাড়া দেশটিতে রয়েছে কাবা শরীফ, মুসলমানদের মতে আল্লাহ্র ঘর। সঙ্গত কারণে সৌদি আরবের মানুষ কি দিয়ে ইফতার করেন, সে বিষয়ে সকলেই কৌতুহলী হবেন এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া মসজিদে হারেম এবং মসজিদে নববীতে প্রায় দশ লক্ষাধিক মানুষ একত্রে ইফতার করে থাকেন প্রতিদিন। তবে স্থানীয় সৌদিরা নিজ ঘরেই পরিবার পরিজনের সাথে ইফতার করতে পছন্দ করেন।
রোযার মাসে সৌদি আরবের বেশিরভাগ অফিস আদালতই ছুটি থাকে। সৌদিরা সাধারনত ইফতারের পর সেহরি পর্যন্ত জেগে থাকে। তাই সৌদি ইফতারের আয়োজনটাও হয় অনেক জাঁকজমক পূর্ণ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সৌদিদের ইফতারে ভেড়া আর মুরগির মাংস দিয়ে তৈরি খাবসা (আমাদের দেশের বিরিয়ানির মতোই) এবং লুকাইমাত (আমাদের দেশের তালের পিঠার মতোই) সবচাইতে বেশি প্রসিদ্ধ এবং জনপ্রিয়। আরবদের মধ্যে সবচাইতে জনপ্রিয় ইফতার আইটেম এই লুকাইমাত। এর বাইরে দিয়ে যতটা মুচমুচে, ঠিক ততটাই নরম আর চটচটে ভেতরের দিকটা। মিষ্টি খেজুরের সিরাপে পুডিংটাকে বেশ অনেকক্ষণ ডুবিয়ে রাখা হয় এবং পরে তিলের বীজ দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করা হয়। শুধু সৌদিই নয় বরং আরব বিশ্বে এই লুকাইমাত অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খাবারের। এছাড়া নানা পুষ্টিকর খাবারে পরিপূর্ণ থাকে সৌদিদের ইফতারের খাবার তালিকা। ইফতারে থাকে উন্নত মানের খেজুর, ভিমতো (আঙ্গুর রসের শরবত), লাবান, বিভিন্ন ধরনের স্যুপ, তামিজ ( একধরনের রুটি), বোরাক ( মাংসের পিঠা), মানডি ( মুরগী ও ভাত দিয়ে তৈরি এক ধরনের খাবার) প্রভৃতি।
সংযুক্ত আরব আমিরাত
সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরবের ইফতার আয়োজনের মধ্যে বেশ মিল লক্ষ করা যায়। দুধ এবং খেজুরবিহীন ইফতার কখনোই করা হয় না সংযুক্ত আরব আমিরাত বা দুবাইয়ের লোকেদের। ভেড়ার মাংস এবং মসুরির ডাল দিয়ে বানান হারিরা নামক স্যুপ অতি সুস্বাদু এবং জনপ্রিয় ইফতার আইটেম। এরপর মালফুফ (মাংস এবং সবজির দিয়ে তৈরি রোল), ওউজি (ভেড়ার মাংস দিয়ে তৈরী বিশেষ খাবার), সায়াদায়া ফিশ (সমুদ্রের মাছ ভাজা), কউশা মাহাশি (মাছ দিয়ে বানান খাবার) এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার হিসেবে নাফেহ, বাকলাভাহ (পেস্ট্রি জাতীয়) এবং উম আলী (পুডিং জাতীয় খাবার) নামক খাদ্য দিয়ে শেষ হয়।
তবে ঐতিগ্যগত খাবার হচ্ছে হারিস। বিভিন্ন শস্যদানা হাল্কা আঁচে গরু কিংবা মুরগীর মাংস দিয়ে রান্না করা হয়, যতক্ষণ না এটি গলে একেবারে জাউ হয়ে যায়। এরপর নামিয়ে বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করা হয়।