লক্ষ্যভেদী তিরন্দাজ রোমান

By: রাশেদ শাওন ২০১৯-০৯-১৬ ৯:৩৪:০৭ পিএম আপডেট: ২০২৪-১১-২১ ৪:৪৬:৩৭ এএম খেলাধুলা
তিরন্দাজ রোমান সানা
তিরন্দাজ রোমান সানা
তিরন্দাজ রোমান সানা
তিরন্দাজ রোমান সানা
তিরন্দাজ রোমান সানা
বাংলাদেশের এ সময়ের সেরা তিরন্দাজ রোমান সানা

কদিন আগে ফিলিপিন্সের ক্লার্ক সিটিতে হওয়া এশিয়া কাপ-ওয়ার্ল্ড র‌্যাঙ্কিং টুর্নামেন্টে (স্টেজ-৩) রিকার্ভ পুরুষ এককে চীনের প্রতিযোগীকে ৭-৩ সেট পয়েন্টে হারিয়ে সোনা জেতেন রোমান। পরে দলগত ও মিশ্র দলগততেও পান পদক। এই প্রথম নয়, ২০০৮ সালে শখের বশে যে পথ চলা শুরু, তার বাঁকে বাঁকে অনেক পদকে চুমো এঁকেছেন তিনি।

খুলনা জেলার কয়রা গ্রামে জন্ম তার। ছোটবেলা কেটেছে সেখানেই। ছোট থেকেই দুরন্ত ছিলেন। গুলতি হাতে ঘুরে বেড়াতেন ওদিক-সেদিক। খেলার সাথীদের নিয়ে পাখি শিকার করে বেড়াতেন। যদিও ফুটবল ছিল প্রিয় খেলা। শুধু তাই-ই নয়, গ্রামীণ অনেক খেলার প্রতি আগ্রহ ছিল। পড়াশুনায় মন বসতা না। সারাক্ষণই খেলাধূলা নিয়ে মেতে থাকতেন। এক কথায় দুরন্ত শৈশব কাটিয়েছেন রোমান।

এর পর পরিবারের সাথে খুলনা শহরে আসেন। রূপসা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। গ্রাম থেকে শহরের জীবন, বদলে যায় অনেক কিছু। এরপর দুই দফা স্কুল বদল হলো। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় আর্চারিতে হাতে খড়ি পান ‘হাসান স্যারে’র কথায়। অনেক চড়াই-উৎরাই এসেছে কিন্তু আর্চারি নিয়েই মেতে আছেন তার পর থেকে।

৮ জুন, ১৯৯৫ সাল। খুলনা জেলার কয়রা গ্রামে জন্ম আব্দুল গফুর সানা-বিউটি বেগমের ঘরে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে রোমান সবচেয়ে ছোট। পরিবারের ছোটজন বলে স্বাধীনতা মিলেছে বাকিদের চেয়ে বেশি। সারাদিন খেলায় মেতে থাকা ছেলেটি একদিন হঠাৎ করেই এলো খুলনায় হওয়া আর্চারি ফেডারেশনের অধীনে আর্চার বাছাইয়ের প্রতিযোগিতায়। তির-ধনুকের প্রেমে পড়ে যাওয়ার সেই শুরু। শুরু হলো বন্ধুর পথে চলাও।

শিক্ষক ‘হাসান স্যার’র  কথায় শুরু। তিনি নিজে অন্য ৪/৫ জনের মতো রোমানেরও ফরম পূরণ করে দেন। হাতে ধরে-ধরে শেখান কিভাবে ধনুক থেকে তির ছুটোতে হয়। সপ্তাহ খানিকের ট্রেনিং শেষে যখন দেখলেন তির লাগছে ঠিক জায়গায়। মজা পেয়ে যান। বাছাইয়েও টিকে গেলেন শেষ পর্যন্ত। 

আর্চারিতে মজা পেয়ে যাওয়ায় পড়াশুনা ততদিনে লাটে উঠেছে। ফলে স্কুলের গণ্ডি পেরানোর পরীক্ষায় ফলাফল খারাপা হয়। বাবা-মা তখন ক্যাম্প থেকে তাকে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন নিজেদের কাছে। ২০১০ সালে এসএসসি পাস করে সুন্দরবন আদর্শ কলেজে ভর্তি হন। আবার যোগাযোগ শুরু করেন আর্চারির কর্মকর্তাদের সঙ্গে। এভাবে নতুন জীবনের শুরু হয় তার। 

তবে আবারও ধাক্কা  খেলেন ২০১২।  মটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পা ভাঙেন। সেই ধাক্কা সামলে ৮ মাস পুর্নবাসন শেষে বাংলাদেশ আনসারে হয়ে খেলায় ফেরেন। শুরুতে ঠিক মতো দাঁড়াতে পারতেন না। হাঁটতেও কষ্ট হত। কিন্তু হাল ছাড়েননি।

২০১৩ সালের বাংলাদেশ গেমসে রিকার্ভ একক ও দলগততে সোনা জয়ের পর সাফল্য ধরা দিতে থাকল নিয়মিত। পরের বছর থাইল্যান্ডে এশিয়ান গ্রাঁ প্রিঁতে জিতলেন সোনা। দেশে ও দেশের বাইরে এ পর্যন্ত ব্যক্তিগত ও দলীয় মিলিয়ে ১৭টি সোনার পদক জিতেছেন রোমান।

গত জুনে নেদারল্যান্ডসে হওয়া বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপসে ইতালির মাউরো নেসপোলিকে ৭-১ সেট পয়েন্টে হারিয়ে ব্রোঞ্জ জিতে ২০২০ সালের টোকিও অলিম্পিকের টিকেট এনে দেন রোমান।

নিজের সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বিশ্বমানের আর্চারদের সঙ্গে তুলনা করলে আমি নিজেকে ১০-এর মধ্যে ৯ দিব। কারণ ওয়ার্ল্ড র‌্যাঙ্কিংয়ে আমি এখন ১০ নম্বরে।’

এসএ গেমসের (দক্ষিণ এশিয়ান গেমস) পরের আসর এ বছরের শেষ দিকে নেপালে হওয়ার কথা। এ  আসরে বাংলাদেশ আজও সোনার পদকের স্পর্শ পায়নি। ২০২০ সালে জাপানের টোকিওতে বসবে ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত অলিম্পিক। রোমানের নিশানায় আপাতত এই দুই আসর।

নতুন সে নিশানা ভেদ করতে কাজ করে যাচ্ছেন রোমান সানা। টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামই হয়ে উঠেছে তাদের ঘরবাড়ি-প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ফেডারেশনের ব্যবস্থাপনায় এখানেই সারাবছর চলে নিবিড় প্রশিক্ষণ।