যে কারণে সাকিব নয় বিশ্বকাপ সেরা উইলিয়ামসন

By: রাশেদ শাওন ২০১৯-০৭-২৪ ৫:৪৬:০৯ পিএম আপডেট: ২০২৪-১২-২১ ৯:০১:৫৪ পিএম স্পেশাল
কেন িউইলিয়ামসন এবং সাকিবআল হাসান

ক্রিকেট বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়, অর্থাৎ ম্যান অফ দা টুর্নামেন্টের পুরষ্কার পেয়েছেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। এটি বেশ পুরোনো খবর। তবে এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপের শুরু থেকেই আলোচনার শীর্ষে ছিলেন বাংলাদেশ টিমের প্রাণ ভোমরা সাকিব আল হাসান। তবে শেষ পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সেরা হয়েছেন নিউজিল্যান্ডের হয়ে আলোচিত খেলোয়াড় কেন উইলিয়ামসন।

ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক নাসের হুসেইন যখন ম্যান অফ দা টুর্নামেন্টের নাম ঘোষণা করেন, তখন তিনি জানিয়েছিলেন যে আরও তিনজন এই খেতাবের জন্য বিবেচিত হয়েছিলেন, আর বিবেচনা করেছিল ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের একটি দল।

সাকিব আল হাসানের সাথে এই পুরষ্কারের জন্য বিবেচনায় ছিলেন ভারতের রোহিত শর্মা আর অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক।

বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের মধ্যে অবশ্য আগে থেকেই প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল যে সাকিব আল হাসান ম্যান অফ দা টুর্নামেন্ট পুরষ্কার পাবেন।

বাংলাদেশী ক্রিকেট ভক্তরা তাদের এই প্রত্যাশার কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও জানিয়েছেন।

এই প্রত্যাশা তৈরি হওয়ার হয়তো একটি কারণ ছিলো আইসিসির ফ্যান্টাসি লিগ, তাতে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট সাকিব আল হাসানের।

টেলিভিশন সম্প্রচারকরা এবং বিশ্লেষকরাও যখনই ম্যান অফ দা টুর্নামেন্টের আলোচনা করেছেন, তখন সাকিবকে সবার ওপরে রেখেছিলেন।

কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে উইলিয়ামসন শেষ পর্যন্ত ম্যান অফ দা টুর্নামেন্টের পুরস্কার পান।

 

কেন উইলিয়ামসনের ব্যাটিং

টুর্নামেন্টের সেরা রান সংগ্রাহকদের তালিকার দিকে তাকালে উইলিয়ামসনের রান খুব বেশি মনে নাও হতে পারে। তবে তিনি যে রান করেছেন তাতে নিউজিল্যান্ড দলের ত্রাণকর্তা আর্বিভূত হয়েছেন বেশ কয়েকবার।

১০ ম্যাচ খেলে ৫৭৮ রান তোলেন কেন উইলিয়ামসন, যা এই বিশ্বকাপের চতুর্থ সর্বোচ্চ।

নিউজিল্যান্ড এই টুর্নামেন্ট শুরু করে দুর্দান্তভাবে টানা তিন ম্যাচ জিতে।

প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১০ উইকেটে জয় ছাড়া নিউজিল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটি তেমন উল্লেখ করার মতো রান করতে পারেনি।

ব্যাট হাতে নিউজিল্যান্ডের ত্রাতার ভূমিকায় ছিলেন কেন উইলিয়ামসন।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৭৯, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১০৬ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৪৮ রান তোলেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক।

মূলত প্রথম পাঁচ ম্যাচের জয় নিউজিল্যান্ডকে সেমিফাইনালে উঠতে সাহায্য করে।

সেমিফাইনালেও ভারতের বিপক্ষে ৬৭ রানের একটি ইনিংস খেলেন, যা পরবর্তীতে ম্যাচ জেতাতে সাহায্য করে।

ফাইনাল ম্যাচে ৩০ রানে আউট হন কেন উইলিয়ামসন।

 

সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন কেন উইলিয়ামসন

কেন উইলিয়ামসনের অধিনায়কত্বের বেশ প্রশংসা শোনা গিয়েছে পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে। বিশেষত প্রথম তিন ম্যাচ জয়ের পর, যখন কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ে নিউজিল্যান্ড।  দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৮০ রানে ৪ উইকেট যাওয়ার পর হাল ধরেন উইলিয়ামসন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও ৭ রানে ২ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড, এদিনও কেন উইলিয়ামসন এসে ইনিংস মেরামতের কাজ করেন।

বেন স্টোকস ও কেন উইলিয়ামসনকে শুভকামনা জানান সাচিন টেন্ডুলকার

ব্যাট হাতে নেতৃত্বের পাশাপাশি দল যাতে পরবর্তী ধাপগুলোতে ঠিকঠাক পৌঁছায় সেজন্য কম পুঁজি নিয়েও দারুণ অধিনায়কত্ব করেন উইলিয়ামসন।

বিশ্বকাপে একমাত্র দল নিউজিল্যান্ড, যারা একবারও ৩০০ রান ছুঁতে পারেনি।

কিন্তু তিনটি লিগ পর্বের ম্যাচে মাথা ঠান্ডা রেখে দল পরিচালনা করেন উইলিয়ামসন।

বাংলাদেশের বিপক্ষে ২ উইকেটের জয়, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৪ উইকেটের জয় ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫ রানের জয়ে উইলিয়ামসন শেষ পর্যন্ত দৃঢ়তার সাথে ফিল্ডিং সাজানো ও বোলিং পরিবর্তনের কাজ করেন যা কাজে দেয়।

ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনালেও ফিফটি সহ, ২৪০ রানের পুঁজি ডিফেন্ড করতে দারুণভাবে দলকে উজ্জীবিত করেন তিনি।

রাভিন্দ্রা জাদেজা ও মাহেন্দ্র সিং ধোনির জুটি যখন জয়ের দিকে এগুচ্ছিল, তখন তিনি মিচেল স্যান্টনারকে দারুণভাবে ব্যবহার করেন।

কেন উইলিয়ামসন মার্টিন ক্রোর পর নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে এই পুরষ্কার পেয়েছেন

 

সেরার পুরষ্কার যে কারণে হাতছাড়া সাকিবের

সাকিব আল হাসান এই বিশ্বকাপ তো বটেই, ক্রিকেট বিশ্বকাপের ইতিহাসে এ যাবৎ অলরাউন্ডারদের মধ্যে সেরা পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাকিব আল হাসানের দল বাংলাদেশ আট নম্বরে জায়গা পায়।

সেটাই হয়তো নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায় সাকিবের টুর্নামেন্ট-সেরা না হওয়ার পেছনে।

ম্যান অফ দা টুর্নামেন্টের একটা অন্যতম বিশেষ দিক হলো ব্যক্তির সাফল্য দলের সাফল্যে কতটা প্রভাব পড়েছে সেটা - যেমনটা এর আগে দেখা গিয়েছে।

১৯৯২ সাল থেকে ম্যান অফ দা টুর্নামেন্ট দেয়া হচ্ছে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে।

১৯৯২ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত যত বিশ্বকাপ হয়েছে, সেখানে অন্তত সেমিফাইনাল যারা খেলেছে তাদের মধ্য থেকেই বিশ্বকাপের সেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হয়েছেন।

 

আগের ইতিহাস কী বলছে?

১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে ম্যান অফ দা টুর্নামেন্ট জিতেছিলেন মার্টিন ক্রো, ৪৫৬ রান করেছিলেন তিনি। তার দল খেলেছিল সেমিফাইনালে।

১৯৯৬ সালে টুর্নামেন্ট সেরা হন সনাৎ জয়াসুরিয়া, সেবার চ্যাম্পিয়নও হয়েছিল শ্রীলঙ্কা - ২২১ রানের সাথে ৭টি উইকেট নেন শ্রীলঙ্কান এই ক্রিকেটার।

১৯৯৯ সালে ম্যান অফ দা টুর্নামেন্ট হন ল্যান্স ক্লুজনার, তার দল দক্ষিণ আফ্রিকা সেমিফাইনালে নাটকীয়ভাবে হেরে যায় - ২৮১ রান করার পাশাপাশি ক্লুজনার নিয়েছিলেন ১৭টি উইকেট।

বিশ্বকাপ না জিতলেও ল্যান্স ক্লুজনার দলকে সেমিফাইনালে তুলতে ভূমিকা রেখেছেন ১৯৯৯ সালে

২০০৩ সালে ব্যাটিং ইতিহাসে বিশ্বকাপের সেরা একটি পারফরম্যান্স দেখান সাচিন টেন্ডুলকার, ৬৭৩ রান নিয়েছিলেন তিনি - ফাইনালে খেলে হেরে গিয়েছিল তার দল ভারত।

২০০৭ সালে চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার ফাস্ট বোলার গ্লেন ম্যাকগ্রা ২৬টি উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্ট সেরার পুরষ্কার পান।

২০১১ সালে যুবরাজ সিং - ৩৬২ রান ও ১৫ উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপের সেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হন, সেবার বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত।

সাকিব আল হাসানের এবারের পারফরম্যান্সের আগে যুবরাজ সিংয়ের এই পরিসংখ্যান ছিল বিশ্বকাপের সেরা অলরাউন্ড পারফরম্যান্স।

২০১৫ সালে আবারো অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ন হয়, আবারো এক অস্ট্রেলিয়ান পেস বোলার পান বিশ্বকাপের সেরা ক্রিকেটারের পুরষ্কার - ২২টি উইকেট নিয়েছিলেন মিচেল স্টার্ক।

 

এই বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসানের পরিসংখ্যান

সাকিব মোট আটটি ম্যাচে ব্যাট হাতে মাঠে নামেন, ৬০৬ রান তুলেছেন, ৮৬.৫৭ গড়ে। সাকিবের গড় টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ।

বল হাতে সাকিব ৮ ম্যাচে নিয়েছেন ১১টি উইকেট।

অর্থ্যাৎ বল ও ব্যাট উভয় মাধ্যমেই সাকিব দলের তিনটি জয়ে ভূমিকা রেখেছেন।

প্রথম দুটি জয়ের একটিতে সেঞ্চুরি করেছেন, একটিতে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন।

আট ম্যাচ খেলা সাকিব ৭টি ইনিংসেই ন্যুনতম ৫০ রান অতিক্রম করেছেন

ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও সেঞ্চুরি করেছেন।

মোট আট ম্যাচ খেলা সাকিব ৭টি ইনিংসেই ন্যুনতম ৫০ রান অতিক্রম করেছেন।

বিশ্বকাপে তার সর্বনিম্ন সংগ্রহ ৪১ রান।

বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইতিহাসে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ৬০০ এর ওপর রান ও ১০টিরও বেশি উইকেট নিয়েছেন সাকিব আল হাসান।