রবীন্দ্র সাহিত্য থেকে চলচ্চিত্র

By: প্রসূন রহমান ২০২০-০৫-০৮ ২:৩৫:৩০ পিএম আপডেট: ২০২৪-১১-২১ ৮:১৮:০৪ এএম মতামত
চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত সিনেমা সুভা (২০০৬)তে অভিনয় করেন শাকিব খান ও পূর্ণিমা

রবীন্দ্র সাহিত্যের ভান্ডার দুই বাংলার জন্যেই সমান ভাবে উন্মুক্ত থাকলেও এই বাংলার চলচ্চিত্রে রবীন্দ্র চর্চাটা অস্বাভাবিক কম হয়েছে।
ঢাকায় রবীন্দ্রনাথের গল্প থেকে এ পযর্ন্ত নির্মিত চলচ্চিত্রের সংখ্যা সবর্সাকূল্যে ৪টি।
(এর বাইরে কারো জানা থাকলে যোগ করবেন প্লিজ।)
১. শাস্তি- চাষী নজরুল ইসলাম, ২০০৪
২. কাবুলিওয়ালা- কাজী হায়াৎ, ২০০৫
৩. সুভা- চাষী নজরুল ইসলাম, ২০০৬
৪. অবুঝ বউ (সমাপ্তি গল্প অবলম্বনে)- নার্গিস আক্তার- ২০১১

২০০৪ এর আগে এখানে রবীন্দ্রনাথের কোনো গল্প নিয়ে কেউ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেননি, ভাবতেই অবাক লাগে। অথচ বিংশ শতকের শেষ দুই দশকে প্রতি বছর এখান থেকে ৫০ থেকে ৮০টি পর্যন্ত চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে।
অন্য গল্প/ উপন্যাসের দীর্ঘ তালিকা বাদ দিয়ে বলছি, ওপার বাংলায় শুধুমাত্র ‘নৌকাডুবি’ উপন্যাস থেকেই পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে মোট ৪ বার-
*নরেশচন্দ্র মিত্র- ১৯৩২,
*নীতিন বসূ- ১৯৪৭,
*অজয় কর- ১৯৭৯,
*ঋতুপর্ণ ঘোষ- ২০১১

এদিকে একা সত্যজিৎ রায় কাজ করেছেন রবীন্দ্রনাথের ৬টি গল্প/উপন্যাস নিয়ে।

আমাদের অগ্রজ নির্মাতাগণ মাঝে মধ্যে শরৎচন্দ্রের দিকে হাত বাড়ালেও কেন জানি মানিক, বিভূতি, তারাশংকর কিংবা রবীন্দ্রনাথের দিকে হাত বাড়ানোর সাহস করেননি কখনোই। স্টুডিও কেন্দ্রিক নির্মাতাদের কথা বাদ দিলেও স্বাধীন ধারার নির্মাতাদের কাউকেও ধ্রুপদী সাহিত্যের দিকে তেমন একটা হাত বাড়াতে দেখা যায়নি। তারা নিজেদের ম্যাচুরিটি অর্জন নাকি দর্শকের ম্যাচিউর হওয়ার জন্যে অপক্ষা করেছেন জানিনা।


তবে সত্য হচ্ছে- রবীন্দ্রনাথের কোনো একটি উপন্যাসকে ধারন করে আজ অবধি কোনো চলচ্চিত্র নির্মাণ এখানে সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতেও কখনো হতে পারে এমন সম্ভাবনা আর দেখিনা।

 

এখন স্যাটেলাইট আর ইউটিউবের কল্যাণে জানা যায়, বোঝা যায়- স্বর্নযুগ বলে এখানে আসলে কখনো কিছু ছিলনা। পুরো ইন্ডাস্ট্রি দাঁড়িয়ে ছিল নকলের উপরে। হাতে গোনা কয়েকজন নির্মাতা কেবল মৌলিক গল্প নিয়ে কাজ করতেন। বাকী সব কোলকাতা, বোম্বে অথবা, লাহোরের ছবি নকল করে গেছেন। শুধু গল্প নয়, সকল কিছুই নকল করতেন।

 

শিক্ষা, মেধা ও রুচির আগে চিন্তার দৈন্যতাই আমাদের পিছু ছাড়ছেনা। চলচ্চিত্র শিল্পকে শুধুমাত্রই বিনোদনের বাজার অথবা চিন্তা বর্জিত সার্কাস ভাবার কারনে, প্রকৃত মেধাবী ও শিল্পসংশ্লিষ্ট মানুষসহ সাহিত্য আর সাহিত্য রচয়িতা বরাবরই চলচ্চিত্রের বাইরে থেকে গেছেন। যার ফলাফল ইন্ডাস্ট্রি নামের মৃত্যুপুরী।

 

অন্য দিকে গোটা বিশেক টিভি চ্যানেলে ঠাকুরের জন্মদিন-মৃত্যুদিন উদযাপনের উসিলায় গল্পগুচ্ছে'র গল্পগুলোর দফারফা অবস্থা করে ছেড়েছেন। গল্পগুচ্ছের বাইরেও যে গল্প আছে সে গল্প তাদের অজানা।
'লিপিকা', 'সে' ও 'গল্পসল্প' নামে আরো ৩টি গল্পগ্রন্থ আছে রবি বাবুর। বেশকিছু আধুনিক গল্প আছে সেখানে। ভবিষ্যতের নির্মাতাগণ সেখান থেকেও কিছু খুঁজে নিতে পারেন। দর্শকও খানিকটা রেহাই পেতে পারে হয়তো।

 

রবি ঠাকুর এই বঙ্গে আরো ৫০ বছর গুরুত্ব দিয়েই পাঠ হবে এমনটা অনায়াসেই ভেবে নেয়া যায়। অন্যান্য রচনা বাদ দিলেও তার গল্প, কবিতা ও গানের আবেদন থাকবে। পরিবর্তিত সময়ের দর্শকের জন্যে এগুলোর নানারকম নীরিক্ষাকেও সবাই স্বাগত জানাবে বলে বিশ্বাস করি।

 

প্রসূন রহমান
৮ মে, ২০২০ (২৫ বৈশাখ, ১৪২৭)