সদ্য সাহিত্যে নোবেল জয়ী কবি ল্যুইস গ্লিক’র কিছু কবিতার বাংলা অনুবাদ

By: সুখবর ডেস্ক ২০২০-১০-১০ ৯:৫২:১৯ এএম আপডেট: ২০২৪-০৩-২৯ ৬:১৪:৫৭ এএম সাহিত্য
সাহিত্যে নোবেল জয়ী কবি ল্যুইস গ্লিক

কুহকিনী 

যেই না প্রেমে পড়লাম, অমনি আমি অপরাধী হয়ে গেলাম।

তার আগে আমি ছিলাম একজন ওয়েট্রেস। 

আমি তোমার সাথে শিকাগো যেতে চাইনি।

চেয়েছিলাম তোমাকে বিয়ে করতে, আমি চেয়েছি

তোমার স্ত্রী কষ্ট পাক। 

কোন ভাল নারী বুঝি ভাবে এমনটা? নিজের সাহসের

জন্য আমার প্রশংসা পাওয়া দরকার। 

তোমার বাসার সামনের বারান্দায় আমি অন্ধকারে বসেছিলাম।

সব কিছু আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠছিল:

তোমার স্ত্রী যদি তোমাকে যেতে না দ্যায়,

তার মানে সে তোমাকে ভালবাসেনি।

তোমাকে ভালবাসলে সে কি চাইতো না 

তুমি সুখী হও? 

আজকাল মনে হয়

যদি কম ভাবতাম,

তবে হতে পারতাম শ্রেয়তর মানুষ। 

আমি ছিলাম রেস্তোরাঁর এক ভাল ওয়েট্রেস।

একসাথে আটটি মদের পেয়ালা বইতে পারতাম। 

আগে প্রায়ই তোমাকে আমার স্বপ্নগুলো বলতাম। 

গত রাতে আমি দেখেছি এক নারী একটি অন্ধকার বাসে বসা-

স্বপ্নে সে কাঁদছিল যখন কিনা বাসটা দূরে সরে যাচ্ছিল।

সে তার এক হাত নাড়ছিল; আর একটি হাতে 

শিশু ভরা একটি ডিমের ঝুড়ি সে নাড়ছিল। 

এই স্বপ্ন বাঁচাবে না এই কুমারীকে। 

 

 

একটি উপকথা 

জ্ঞানী সেই রাজার কাছে 

একই দাবি নিয়ে এসেছিল দুই নারী,

দুই নারী তবে একটিই শিশু। 

রাজা জানতেন এদের একজন মিথ্যে বলছে। 

তাই বললেন শিশুটিকে দ্বি-খন্ডিত করা হোক;

যেন একজনও শূণ্য হাতে ফিরে না যায়। 

এই বলে যেই না সেই রাজা তরবারী খুললেন

খাপ থেকে, একজন দাবি ছেড়ে দিল। 

আর এটাই ছিল সঙ্কেত ও শিক্ষা। 

ঠিক যেমন তুমি যখন দ্যাখো 

তোমার মা দ্বি-খন্ডিত হয়ে যাচ্ছেন

তাঁর দুই কন্যার মাঝে:

আর তখন মা'কে বাঁচাতেই

তুমি তোমার দাবি ছেড়ে দিলে: 

নিজেকে ধ্বংসের ঝুঁকি নিয়েও, 

তোমার মা ঠিকই জেনে যাবেন 

যে কে ছিল তাঁর ন্যায়পর দুহিতা,

যে সহ্য করতে পারেনি মায়ের 

এই দ্বি-খন্ডিত হওয়া। 

 

রূপোলী লিলি ফুল 

রাতগুলো আবার শীতল হয়ে উঠেছে, ঠিক যেন

বসন্তের শুরুর রাত্রি, রাতগুলো হয়ে উঠেছে শান্ত। 

এমন সময় কথা বলা হলে তুমি কি বিরক্ত বোধ করবে?

আমরা একাকী এখন; এখন ত' আমাদের নীরব রইবার

কোন যুক্তিই নেই আসলে। 

তুমি কি দেখতে পাচ্ছ, উদ্যানের মাথায় জেগেছে

পুরো চাঁদ?

এর পরের চাঁদ আর দেখা হবে না আমার। 

বসন্তে যখন জেগেছিল চাঁদ, তখন বোধ হয়েছিল

যেন এই সময় অনন্ত। তুষারকণা মুখ খুলছে আবার

বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, মেপলের জমাট বাঁধা বীজেরা

ঝরে পড়ছে শৈত্য প্রবাহে।

শুভ্রতার উপরে শুভ্রতা, যখন বার্চ গাছের মাথায় জাগে চাঁদ

আর গাছ যেখানে দ্বিধা-বিভক্ত,

সেই তুষারের খাড়িতে জমেছে প্রথম ড্যাফোডিলের পাতায়,

চাঁদের আলোয় জেগেছে লিলি ফুলের নরম সবুজ-রূপোলী অবয়ব। 

 

 

শুকতারা ('একদা আমি তোমাকে বিশ্বাস করতাম...')

সে অনেক অনেক দিন আগে আমি তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম; 

আর আমি রোপণ করেছিলাম একটি ডুমুর চারা।

এখানে, ভারমন্টে, কোন গরমকাল নেই। 

ডুমুর গাছ রোপণ ছিল আসলে একটি পরীক্ষা:

গাছটি যদি বাঁচে তার মানে তুমি আছো। 

গাছটি না বাঁচলে তুমি নেই। অথবা তুমি

বাঁচো শুধুই গরম আবহাওয়ায়,

তপ্ত সিসিলি অথবা মেক্সিকো কি ক্যালিফোর্নিয়ায়, 

সেই সব গরম দেশে অকল্পনীয় সংখ্যায় জন্মায়

যত মিষ্টি খুবানী আর ভঙ্গুর পিচ ফল। 

হয়তো সিসিলিতে তারা তোমার মুখশ্রী দেখতে পায়;

এখানে আমরা কোনমতে দেখতে পারি তোমার পোশাকের প্রান্ত। 

জন ও নোয়ার সাথে টমেটোর আবাদ ভাগ করে নিতে 

আমাকে হতে হবে যথেষ্ট শৃঙ্খলাপরায়ণ। 

যদি অন্য কোন ভুবনে থেকে থাকে কোন ন্যায়বিচার,

যেখানে আমার মতই যাদের প্রকৃতি জোর করে রেখেছে 

কঠোর মিতাচারে, অন্য পৃথিবীতে আমাদের পাওয়া উচিত

সব কিছুর সিংহভাগ, যাবতীয় ক্ষুধার বস্তÍ ও বাসনা 

তোমার প্রশংসা হয়ে ওঠে। আর আমার চেয়ে

তীব্রতায় তোমার প্রশংসা করেনা আর কেউ,

আর কে এত বেদনার সাথে দমিত রেখেছে তার বাসনা,

আর কে বেশি আমার চেয়ে তোমার ডান পাশে বসার অধিকারী?

যদি সে থাকে, সেই চির অমর ডুমুর গাছ,

তার নশ্বর ফলের ভাগীদার হওয়া,

যে ডুমুর গাছ আহা কোনদিন 

কোথাও ভ্রমণ করে না। 

 

কবিতাগুলোর অনুবাদক বাংলাদেশের সাহিত্যিক, লেখকঅদিতি ফাল্গুনী