কাবাঘর গড়ে ওঠার ইতিহাস

By: সুখবর ডেস্ক ২০২৩-০৪-০৪ ৮:২৭:১৩ এএম আপডেট: ২০২৪-১১-২১ ১:২৪:০৮ এএম ইতিহাস
সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত কাবাঘর

পবিত্র কাবা কখন নির্মিত হয়েছিল এ নিয়ে বিভিন্ন বর্ণনা এসেছে। সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মত অনুযায়ী, মহান আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতারাই সর্বপ্রথম কাবাঘরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। বায়তুল মামুরের ঠিক নিচে কাবাকে স্থাপন করা হয়। পৃথিবীর সূচনা হয় কাবাঘর নির্মাণের মাধ্যমে।

إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَهُدًى لِّلْعَالَمِينَ

মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর ঘরকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর, যা মানুষের জন্য নির্ধারিত হয়েছে, সেটিই হচ্ছে এই ঘর, যা বাক্কায় (মক্কা নগরীতে) অবস্থিত এবং সারা জাহানের মানুষের জন্য হেদায়েত ও বরকতময়।’ (সূরা ইমরান: ৯৬)।

হজরত আদম (আ.) ও হজরত হাওয়া (আ.)-এর পৃথিবীতে মিলন হলে তারা উভয়ে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ইবাদতের জন্য একটি মসজিদ হজরত আদম (আ.) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল করেন এবং বাইতুল মামুরের আকৃতিতে পবিত্র কাবাঘর স্থাপন করেন। এখানে হজরত আদম (আ.) সন্তুষ্টচিত্তে আল্লাহর ইবাদত করতে থাকেন।

অনেক তফসিরবিদদের মতে, মানব সৃষ্টির বহু আগে মহান আল্লাহ তায়ালা কাবাঘর সৃষ্টি করেন। তফসিরবিদ মুজাহিদ বলেন, ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বাইতুল্লাহর স্থানকে সমগ্র ভূপৃষ্ঠ থেকে দু’হাজার বছর আগে সৃষ্টি করেন।’ মুসলিম শরিফের একটি হাদিসে হজরত আবু-যর গিফারি হতে বর্ণনা হয়েছে, রাসূল (সা.) তাঁর একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, ‘বিশ্বের সর্বপ্রথম মসজিদ হলো মসজিদে হারাম। এর পরের মসজিদ হলো মসজিদে আকসা। মসজিদে হারাম নির্মাণের ৪০ বছর পর মসজিদে আকসা নির্মিত হয়।’

হজরত আদম (আ.) কাবাঘর আল্লাহর আদেশে পুনর্নির্মাণ করেন। এরপর বহুদিন অতিক্রম হলো। শত শত বছর অতিবাহিত হলো। আল্লাহর বান্দারা কাবাঘর জিয়ারত করত, আল্লাহর কাছে হাজিরা দিত এ কাবাঘরে সমবেত হয়ে। কাবাঘরে এসে মহান আল্লাহর পবিত্রতা ও অংশীদারহীনতা ঘোষণা দিত। ‘লাববাইক আল্লাহুম্মা, লাববাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নেয়ামাতা, লাকাওয়াল মুলক, লাশারীকা, লাকা লাববাইক।’ এভাবে চলতে চলতে দিন গত হতে থাকল। এরপর হজরত শিষ (আ.) কাবাঘর পুনর্নির্মাণ করলেন। দিন দিন একত্ববাদীর সংখ্যা বাড়তে থাকল।

এরপর কাবা শরিফ নির্মাণ বা পুনর্নির্মাণ করেন হজরত ইব্রাহিম (আ.)। হজরত ইব্রাহিম (আ.) হজরত ইসমাঈল (আ.)-কে সঙ্গে নিয়ে কাবাঘর নির্মাণ বা পুনর্নির্মাণ করেন। হজরত ইব্রাহিম (আ.) কাবাঘর সংস্কার করে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন। ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাদের উভয়কে আজ্ঞাবহ কর। আমাদের বংশ থেকে একটি অনুগত দল সৃষ্টি কর। নিশ্চয়ই তুমি দয়ালু। হে প্রতিপালক! তাদের মধ্য থেকেই তাদের কাছে একজন পয়গম্বর প্রেরণ করুন। যিনি তাদের কাছে তোমার আয়াত তেলাওয়াত করবেন। তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেবেন এবং পবিত্র করবেন। নিশ্চয়ই তুমি মহাপরাক্রমশালী।’ আল্লাহ রাববুল ইজ্জত হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাঈল (আ.) এর বংশ হতে হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে শেষ নবি ও রাসূল হিসেবে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন।

শতাব্দীর পর শতাব্দী অতিবাহিত হলো। মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর নবুয়ত প্রাপ্তির ৫ বছর আগে কাবাঘর সংস্কার করে মক্কার বিখ্যাত কোরাইশ বংশ। এ কুরাইশ বংশেই মহানবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) ৫৭০ খৃস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। কুরাইশরা কাবা শরিফ সংস্কারের পর হাজরে আসওয়াদ স্থাপন নিয়ে মতভেদ দেখা দেয়। সবার সম্মতিক্রমে আল্লাহর রাসূল (সা.) কাবা গৃহে হাসরে আসওয়াদ স্থাপন করেন। মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.) জীবিত অবস্থায় ৬ হিজরিতে আব্দুল্লাহ ইবনে জোবায়ের (রা.) কাবা শরিফ সংস্কার করেন। হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ৭৪ হিজরিতে কাবা শরিফ সংস্কার করেন। সুদীর্ঘ ১৪ শ’ বছরে কাবাগৃহে কোনো সংস্কারের প্রয়োজন হয়নি। শুধুমাত্র কাবাঘরের চারপাশে অবস্থিত মসজিদে হারামের পরিবর্ধন, সংস্কার বা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর পর কাবাঘর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেয় সৌদি রাজপরিবার। সৌদি সরকারের প্রধান (বাদশাহ) কাবা শরিফের মোতাওয়াল্লির দায়িত্বে থাকেন।

ইতিহাসে সর্বপ্রথম নির্মাণ থেকে সর্বশেষ সময় পর্যন্ত অনেকবার কাবাঘরের সংস্কার ও সম্প্রসারণ হয়েছে। 

১. সর্বপ্রথম কাবাঘর ফেরেশতাগণ নির্মাণ করেন।

২. এরপর পুনর্নির্মাণ করেন যথাক্রমে হজরত আদম (আ.),

৩. হজরত শিষ (আ.), ৪. হজরত ইব্রাহিম (আ.),

৫. আমালিকা সম্প্রদায়,

৬. জুরহাম সম্প্রদায়,

৭. কুসাই বিন কিলাব,

৮. মোযার সম্প্রদায়,

৯. মক্কার কুরাইশগণকে নিয়ে হজরত মুহাম্মদ (সা.)। এ সময় তিনি হাজরে আসওয়াদকে বর্তমান স্থানে স্থাপন করেছিলেন। এরপর ৬৪ হিজরিতে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রা.), ৭৪ হিজরিতে হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ এবং ১২তম বার ১০৪০ হিজরিতে ওসমানিয়া খলিফা তুরস্কের বাদশা চতুর্থ মুরাদ। এটাই আজ পর্যন্ত কাবাঘরের সর্বশেষ সংস্কার কাজ। এরপর ছোটখাট সংস্কার ছাড়া কেউ কাবাঘরে হাত দেয়নি।