- ● যেভাবে ‘টেসলা’য় কর্মরত বাংলাদেশের রাফা
- ● A Decade of Recitation Elegance: Bachonik Celebrates 10 Years of Artistic Brilliance
- ● বর্ণাঢ্য আয়োজনে বুয়েট নাইট অনুষ্ঠিত
- ● ‘গান্ধী শান্তি পুরস্কার’-এ ভূষিত বঙ্গবন্ধু
- ● শনিবারের কলমে হিমাদ্রী: মায়ের “শেখসাব”
- ● সুখী দেশের তালিকায় কানাডা ১৫তে, শীর্ষে ফিনল্যান্ড
- ● গিনেস বুকে ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’
- ● দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দশ তরুণ নেতাদের তালিকায় মাশরাফি
- ● ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ ২০২১ পাচ্ছেন যারা
- ● প্রসংশায় ভাসছে জিয়া হাসানের সাথে ঘরোয়া’র স্বত্বাধিকারীর আলাপচারিতা
বিতর্কিত দাস ব্যবসায়ী কলস্টন
মিনিয়াপলিসে পুলিশ হেফাজতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে। এরই জেরে, যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টল শহরে বিক্ষোভের সময় প্রতিবাদকারীরা শহরের কেন্দ্রস্থলে স্থাপিত সপ্তদশ শতাব্দীর বিতর্কিত ক্রীতদাস ব্যবসায়ী এডওয়ার্ড কলস্টনের মূর্তি টেনে নামিয়ে তা নদীতে ফেলে দেয়। ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলার জন্য অনেক দিন ধরেই ব্রিস্টলের বহু লোক দাবি জানাচ্ছিলেন। শুধু তাই নয়, যুক্তরাজ্যে ঘটনাটি যেমন চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে, তেমনি ব্রিটেনে নানা জায়গায় বর্ণবাদ ও দাস ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট আরো অনেকের ভাস্কর্য অপসারণ করার কথাও উঠেছে।
কলস্টন কে ছিলেন?
পৃথিবীর প্রায় সব দেশের মিডিয়াতেও নদীতে কলস্মটনের মুর্তি ছুড়ে ফেলার খবরটি পরিবেশিত হওয়ার পর থেকেই অনেকে তার সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। কে ছিলেন এডওয়ার্ড কলস্টন, কেন তার ভাস্কর্যটি ব্রিস্টল শহরের মানুষদের মধ্যে এমন ক্ষোভ সৃষ্টি করেছিল?
আদতে দক্ষিণ পশ্চিম ইংল্যান্ডের এ্যাভন নদীর মোহনায় গড়ে ওঠা ব্রিস্টল শহরটির বিকাশ ও সমৃদ্ধির ইতিহাসের সাথেই জড়িয়ে আছে দাস ব্যবসা।
সেই দাস ব্যবসার সাথে জড়িয়ে আছে এডওয়ার্ড কলস্টনের নাম। ব্রিস্টল শহরে কয়েক শতাব্দী ধরে তার স্মৃতিকে সম্মানিত করা হয়েছে। ব্রিস্টলকেই তার নিজের শহর মনে করতেন তিনি, যদিও তিনি লন্ডনে বাস করেছেন বহু বছর।
ব্রিস্টলের এক বণিক পরিবারের সন্তান কলস্টন ছিলেন একজন ধনী ব্যক্তি এবং তার সম্পদ তিনি গড়ে তুলেছিলেন মানুষের উৎপীড়ন ও দুর্দশার ওপর ভিত্তি করে।
এডওয়ার্ড কলস্টন ছিলেন রয়াল আফ্রিকান কোম্পানির একজন কর্মকর্তা। তখন ব্রিটেনে দাস ব্যবসার একচেটিয়া কর্তৃত্ব ছিল এই কোম্পানির হাতে। ১৬৮৯ সালে কলস্টন এই কোম্পানির ডেপুটি গভর্নর হয়েছিলেন।
আফ্রিকা থেকে ধরে আনা দাস কেনাবেচার যুগ সেটা। ১৬৭২ সাল থেকে ১৬৮৯ সাল পর্যন্ত কলস্টনের জাহাজে করে প্রায় ৮০ হাজার কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ, নারী ও শিশুদের আমেরিকায় পাঠানো হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
এই কৃষ্ণাঙ্গদের কেনা হতো পশ্চিম আফ্রিকা থেকে। তাদের গায়ে সিল মারা হতো আর এ সি কোম্পানির নামে। তার পর তাদের আমেরিকাগামী জাহাজে তোলা হতো ।
শেকল দিয়ে বাঁধা অবস্থায় তাদের শুইয়ে দেয়া হতো জাহাজের খোলের মধ্যে। ক্যাপ্টেনদের বলে দেয়া হতো একেকটি জাহাজ যত ক্রীতদাসকে সুবিধাজনকভাবে বহন করতে পারবে - ততজনকেই যেন নেয়া হয়।
পশ্চিম আফ্রিকা উপকুল থেকে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে আমেরিকায় পৌঁছতে সে যুগে জাহাজের সময় লাগতো ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ পর্যন্ত। এই সময়টা শত শত লোককে জাহাজের খোলে নিজেদের ময়লার মধ্যেই শুয়ে থাকতে হতো। এক একটি জাহাজে যত লোক নেয়া হতো – তাদের ১০ থেকে ২০ শতাংশ আমেরিকায় পৌঁছানোর আগেই রোগ, আত্মহত্যা বা হত্যার কারণে জাহাজেই মারা যেতো।
আমেরিকায় দাস পাঠানো ছাড়াও লন্ডনে কলস্টনের ছিল কাপড়, মদ, ও চিনির ব্যবসা। তিনি মারা যান ১৭২১ সালে এবং তার সম্পদ তিনি দিয়ে যান বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানে।
তিনি একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, আর তার অর্থ সাহায্য পেয়েছে আরো অনেক স্কুল, গির্জা, হাসপাতাল ও ব্রিস্টল নগর কর্পোরেশন। কিছুদিনের জন্য পার্লামেন্টে ব্রিস্টলের এমপিও ছিলেন তিনি।
তার জীবদ্দশায় লন্ডনই ছিল দাস ব্যবসার প্রধান কেন্দ্র, তবে কলস্টনের মৃত্যুর পরে ১৭৩০ ও ১৭৪০ সালে ব্রিস্টলই দাস ব্যবসার ক্ষেত্রে লন্ডনের জায়গা নিয়ে নেয়। ১৬৯৮ থেকে ১৮০৭ সাল পর্যন্ত ব্রিস্টল থেকে মোট ২,১০০টি জাহাজ কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসদের নিয়ে আমেরিকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল। আরো পরে লিভারপুল শহরও এ ব্যবসার অন্যতম কেন্দ্র ছিল।
কলস্টন মারা যান লন্ডনে, তবে তার কবর হয় ব্রিস্টলের অল সেইন্টস চার্চে। ব্রিস্টল শহরের বেশ কিছু রাস্তার নামকরণ হয়েছে তার নামে।
কলস্টন এভিনিউতে তার ব্রোঞ্জ ভাস্কর্যটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৯৫ সালে তবে এই মূর্তির নিচে ব্রিস্টল শহরের সবচাইতে জ্ঞানী-গুণী সন্তানদের অন্যতম হিসেবে তার বন্দনা থাকলেও দাস ব্যবসার সাথে তার সংশ্লিষ্টতার কুখ্যাত অতীতের কোন উল্লেখ করা হয় নি।
অবশ্য সম্প্রতি স্থির হয়েছিল যে এখানে একটি ফলক স্থাপন করা হবে যাতে দাস ব্যবসায় তার ভুমিকার কথা উল্লেখ করা হবে।
ব্রিস্টল শহরে তার নামে প্রতিষ্ঠিত কলস্টন হলের নাম পরিবর্তন করার ব্যপারেও ঐকমত্য হয়েছিল।
অবশ্য তার আগেই এই মূর্তির গলায় দড়ি দিয়ে টেনে নামিয়ে পানিতে ফেলে দেবার ঘটনাটি ঘটলো।
শত বছর আগ থেকেই কলস্টন বিতর্কিত:
এর আগে ব্রিস্টলে ১৯২০ সাল থেকেই কলস্টন এবং তার অবস্থান সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা হয়। তবে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত বিষয়টি উপেক্ষার শিকার হয়েছিল।
সে বছর ওয়েস্ট ইংল্যান্ড বিশ্ববিদ্যলয়ের অধ্যাপক ম্যাজ ড্রেসার কথা বলেন কলস্টন এবং দাস ব্যবসায় তার ভূমিকা সম্পর্কে।
পরের দিনই দেখা যায়, তার মূর্তির গায়ে যে যেন লিখে রেখে গেছে “দাস ব্যবসায়ী“ – যদিও নগর কর্তৃপক্ষ সেটা মুছে ফেলে।
তবে এর দু বছর পর কাউন্টারিং কলস্টন নামে একটি সংগঠন একাধিক বিক্ষোভের আয়োজন করে।
এই সংগঠনের অন্যতম নেতা রস মার্টিন বলেন, এই শহরের যারাই আসে তাদেরই মনে প্রশ্ন আসে - কে এই কলস্টন? কেন এ শহরের এত বেশি ভবন, রাস্তা, স্কুল এই লোকটির নামে?
তাদের প্রতিবাদের পর কলস্টন হল ঘোষণা করে তারা এই দাস ব্যবসায়ীর সাথে সব রকম যোগাযোগ ছিন্ন করছে এবং তাদের নামও পরিবর্তন করা হবে। এর পর অন্য আরো কিছু সংগঠন একই রকম পদক্ষেপ নেয়।
কলস্টনের নামে গির্জায় এক বিতর্কিত বিশেষ প্রার্থনা গত বছর বাদ দেয়া হয়।
সূত্র: বিবিসি