সবচাইতে দামী ৯ চিত্রকর্ম

By: রাশেদ শাওন ২০১৯-০৯-১৩ ৫:৪১:০১ পিএম আপডেট: ২০২৪-১২-০৩ ১২:২২:১৯ পিএম সাতসতেরো
পিকাসোর আঁকা লে রেভ

ছবি মানেই মনের অনুভূতির প্রকাশ, ভাবের মেলবন্ধন, ভালোবাসার রংয়ের আঁকিবুকি। প্রতিটি শিল্পীর কাছে তার নিজের আঁকা চিত্রকর্ম অনেক বেশি ভালোবাসার, মূল্যবানও বটে।  তবে এমন কিছু ছবি আছে যেগুলো কেবল তার সৃষ্টিকর্তারই নয়, লাখো দর্শকেরহৃদয়ের অনেক কাছে জায়গা করে নিয়েছে। কেবল সুখ্যাতি আর ভালোবাসাই নয়, যা আয় করেছে প্রচুর অর্থও। এমন কিছু বিখ্যাত আর সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়া চিত্রকর্ম নিয়ে এই আয়োজন।

 

ভেসে যাওয়া চিৎকার : দ্যা স্ক্রিম

নরওয়ের চিত্রশিল্পী অ্যাডভার্ড মানচের আঁকা দ্যা স্ক্রিম চিত্রকর্মটির মোট চারটি ধরন রয়েছে। দুটি প্যাস্টেলের, আর দুটি পেইন্টিংসের। এছাড়াও নিজের এই ছবিটির বেশকিছু বিভাগ করেন শিল্পী নিজে। কিন্তু খুবই অদ্ভূতভাবে কেবল ১৮৯৫ সালে দ্যা স্ক্রিমের প্যাস্টেল ছবিটিতেই রংগুলো সবচাইতে ভালো খেলে যায় আর তাক লাগিয়ে দেয় সবাইকে। এই চিত্রকর্মের মাধ্যমেই ১১৯,৯ মিলিয়ন ডলার আয় করেন অ্যাডভার্ড। নিজের আঁকা চিত্রকর্মটি নিয়ে বলতে গিয়ে এই চিত্রশিল্পী জানান যে, একদিন সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ সূর্যের লালচে রং আর চারপাশের প্রকৃতিকে দেখে তার মনে হয়েছিল একটা চিৎকর বুঝি ভেসে যাচ্চে সবখানে। বর্তমানে মানুষের ভেতরে জমে থাকা উদ্বিগ্নতা আর হতাশার চিৎকারকে নিজের দ্যা স্ক্রিম ছবিটির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন বলে জানান অ্যাডভার্ড।

 

ছোট্ট এক শিশু লুইস : গারকন অ্যা লা পাইপ

২৪ বছর বয়সি তরুণ পাবলো পিকাসো তার আঁকা এই চিত্রকর্মটির মাধ্যমেই সবাইকে খুব সহজে বুঝিয়ে দেন যে তার প্রতিভা অল্প বয়স থেকেই বিকশিত হয়েছিল। সেসময় পিকাসো অত বড় আর নামী আঁকিয়ে হননি। তখন পিকাসোর চিত্রকর্মের খুব বড়রকমের ভক্ত ছিল ছোট্ট এক শিশু লুইস। প্রায় ছবি আঁকার সময় পিকাসোর আশপাশে গিয়ে ঘুরে বেড়াতো সে। একসময় এই লুইসকে মডেল হিসেবে ভেবেই একটি চিত্রকর্ম তৈরি করবেন বলে ভাবেন পিকাসো আর করেও ফেলেন। আর সেদিনের সেই চিত্রকর্মটিই হচ্ছে আজ ১০৪ মিলিয়ন ডলারে দামের গারকন অ্যা লা পাইপ। যদিও সমালোচকদের মতে ছবিটি আদতে একটুও পিকাসোর সত্যিকারের উৎকৃষ্ট চিত্রের ধারে কাছেও যায়নি। এ ব্যাপারে হতাশাও প্রকাশ করেন অনেকে।

 

এক অলস রবিবার : ব্যাল ডু মৌলিন ডি লা গ্যালেটে

ফ্রেঞ্চ চিত্রশিল্পী পিয়েরে অগাস্তে রেনোর তৈরি করা এই চিত্রকর্ম ১৮৭৯ থেকে ১৮৯৪ সাল অব্দি ছিল আরেক চিত্রশিল্পীর অধিকারে। পরবর্তীতে সরকারের হাতে চলে আসে ছবিটি। ইংরেজিতে এর নাম দেওয়া হয় ড্যান্স এট লে মৌলিন ডি লা গ্যালেটে। ১৮৭৬ সালে ছবিটি আঁকেন রেনো। সেসময় শ্রমিক শ্রেনীর হয়ে তাদের এক অলস রবিবারকে স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলেন তুলির টানে। একেবারে জীবন্ত এই ছবিটিতে কিছু শ্রমিককে দেখা যায় ছুটির দিনের অবসর সময়ে নিজেদের মতন করে, উৎসব-আনন্দের মাধ্যমে কাটাতো। বিখ্যাত এই চিত্রকর্মটি বিক্রি হয় ৭৮.১ মিলিয়ন ডলারে।

 

বন্ধুত্বের গল্প : থ্রি স্টাডিজ অব লুসিয়ান ফ্রয়েড

আইরিশ চিত্রকর ফ্রান্সিস বেকনের খুব ভালো বন্ধু ছিলেন আরেক চিত্রশিল্পী লুসিয়ার ফ্রয়েড। নিজেদের চিত্রকর্মের জন্যে প্রায় সময়েই একে অন্যের মডেল হতেন বলে এই দুই বন্ধু। তিনটি প্যানেলে বন্ধুর ওপরে এই ছবিটি সম্পন্ন করেন বেকন। যার ভেতরে নিজেদের সম্পর্ক আর বন্ধুত্বকেই প্রকাশিত করেছেন তিনি বলে মনে করেন সমালোচকেরা। ১৯৬৯ সালে আঁকেন বেক চিত্রটি। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি যে এর পরের বছর, ১৯৭০রের মাঝামাঝি সময়েই ভেঙে যায় তাদের বন্ধুত্ব। এক এক করে বিক্রি হয়ে যায় ছবিগুলো বিভিন্ন মনুষের কাছে। তবে এতে মোটেও স্বস্তি পাননি বেকন। পরবর্তীতে তিনটি ছবিকেই আবার একত্র করেন তিনি। একত্রে ছবি তিনটি থেকে আয় বিক্রি হয় ১৪২.৪ মিলিয়ন ডলার।

 

বধূ ব্লিচ বাওয়ারের প্রতিকৃতি : পোট্রেট অব আদেলে ব্লচ-বাওয়ার -ওয়ান

বিখ্যাত অস্ট্রিয়ান চিত্রকার গুস্তাভ ক্লিমটের আগ্রহের সবটা ছিল নারীকে ঘিরে। নারীদের আঁকতে পছন্দ করতেন এই শিল্পী। সেই আগ্রহকে কেন্দ্র করেই আদেলে ব্লচ বাওয়ারের ছবিটি আঁকেন তিনি। মূলত চিত্রকর্ম ও বিশেষ করে গুস্তাভের চিত্রকর্মের প্রতি বেশ আগ্রহ ছিল ব্লিচ বাওয়ারের। তাই নিজ থেকেই গুস্তাভের ছবির মডেল হন তিনি। ১৯০৭ সালে এ ছবিটি আঁকেন গুস্তাভ। আর সেই প্রথমবার ও শেষবারই তিনি কোন নারীকে দুইবার আঁকেন। আদেলে ব্লচ-বাওয়ার -টু নামেও আরেক চিত্রকর্ম আঁকেন এই চিত্রকর। বিশ্বযুদ্ধের পর অস্ট্রিয়া মোটেও এই চিত্রকর্মকে সঠিক মালিকের কাছে ফিরিয়ে দিতে রাজী হয়নি। অনেক মামলার পর অবশেষে একে নিলামে তোলে প্রকৃত মালিক। তখন অবিশ্বাস্যভাবে ১৩৫ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয় এটি।

 

স্ত্রী ইত্র-এর চিত্রকর্ম : লে রেভ

পিকাসোর আরেকটি চিত্রের নামও চলে আসে বিশ্বের দামী চিত্রকর্মগুলোর তালিকায়। ১৯৩২ সালে নির্মিত এ চিত্রটিতে পিকাসোর মডেল হন তার স্ত্রী। তবে কম বয়সি স্ত্রীর ইত্র আঁকতে গিয়ে বেশকিছু সমালোচনার মুখোমুখি হন পিকাসো এ ছবিটির মাধ্যমে। তবে সবকিছু বাদ দিলেও মোট ১৫৫ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয় ছবিটি।

 

উজ্জ্বল রঙের নারী : উইম্যান

উইলিয়াম ডে কুনিং এর আঁকা উইম্যান সিরিজের এই ছবিটি তৈরি হয় ১৯৫১ থেকে ১৯৫৩ সালের ভেতরে। এই সিরিজের সবগুলো ছবিরই মূল বিশেষত্ব ছিল নারী। আর নাম শুনেই সেটা বুঝে ফেলাটা খুব স্বাভাবিক। পুরুষের যৌনাবেদন বাড়াতেই হয়তো ছবির নারীকে সবদিক দিয়ে খানিকটা উগ্রতা দিয়েছিলেন কুনিং। নানারকম পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ব্যবহার করেছিলেন উজ্জ্বল সব রং। কুনিংএর এই ছবিটি বিক্রি হয় ১৩৭.৫ মিলিয়ন ডলারে।

 

হলুদ আর বাদামী রং-এর বাড়ি : নং ৫, ১৯৪৮

আমেরিকার অত্যন্ত বিখ্যাত বিমূর্ত চিত্রকর জ্যাকসন পোলক তার নং ৫, ১৯৪৮ চিত্রটি সৃষ্টি করেন ১৯৫০ সালের দিকে। প্রথমটায় কিছু না বোঝা গেলেও খানিক ক্ষণ তাকিয়ে থাকলে চিত্রটিতে হলুদ আর বাদামী রংএর একটি বাড়ি নজরে পড়বে আপনার। ১৪০ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয় ছবিটি। প্রথমটায় ছবির মালিক ডেভিড মার্টিনেজকে ভাবা হলেও পরবর্তীতে জানা যায় ছবিটি আসলে ডেভিড কেনেননি। তবে ডেভিড না কিনে থাকলে কে কিনেছে সেটাও অবশ্য জানা যায়নি।

 

কৃষকদের তাসের আড্ডা : দ্যা কার্ড প্লেয়ার্স

পল সেজানের এই চিত্রকর্মটি নির্মিত হয় ১৮৯০ সালে। পাঁচটি ধাপে নিজের ছবিটি শেষ করেন পল। এর ভেতরেই একটিকে কিনে নেয় কাতারের এক রাজপরিবার। সেখানে এটি বিক্রি হয় ২৫০- ৩০০ মিলিয়ন ডলারে! তালিকার প্রথমে থাকা সবচাইতে বেশি দামে বিক্রি হওয়া চিত্রকর্মটিতে দেখা যায় স্থানীয় কৃষককে তাস খেলতে দেখা যায়।