করোনাকালে কোরবানি : কি বলছে ইসলাম

By: সুখবের ডেস্ক ২০২০-০৭-১৯ ১০:৪৩:০১ এএম আপডেট: ২০২৪-০৪-১৮ ৬:৩৬:৫০ এএম লাইফস্টাইল
অনলাইন থেকে সংগৃহীত ছবি

সামর্থ্যবান প্রতিটি মুসলমানদের জন্য কোরবানি৷ তিন দিনে কোরবানি দেওয়ার মতো অর্থ বা সম্পদ থাকলে ইসলামে কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব৷ করোনাকালে, এবার কোরবানি কেমন হবে? চলুন জেনে নিই ইসলামি স্কলারদের কাছ থেকে।


কাদের জন্যে কোরবানি

আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান মুসলমানরা কোরবানি দেবেন৷ এই সামর্থ্য বলতে কী বোঝায় তা নিয়ে কিছুটা দ্বিমত আছে ইসলামি চিন্তাবিদদের মধ্যে৷ শোলাকিয়ার ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ বলেন, ‘‘কোরাবানির তিন দিনে কোনো মুসলামানের কাছে যদি জাকাত দেওয়ার ‘নিসাব' পরিমাণ অর্থ অতিরিক্ত থাকে, তাহলে তাকে কোরবানি দিতে হবে৷ জাকাত ফরজ হতে সারাবছর ধরে ওই পরিমাণ অতিরিক্ত অর্থ সম্পদ থাকতে হয়৷ এটাই হলো কোরবানির সাথে জাকাতের পার্থক্য৷ আর হজ এবং কোরবানি একই সময়ে হলেও হজের সাথে কোরবানির সরাসরি সম্পর্ক নেই৷ যারা হজে যাবেন, তারা কোরবানি দেবেন৷ কিন্তু হজ তার জন্যই যার হজে যাওয়া-আসার মতো টাকা আছে৷ কিন্তু কোরবানি ওয়াজিব হতে হজে যাওয়ার সক্ষমতার প্রয়োজন নেই৷”

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাইফুর রহমান বলেন, ‘‘যার কাছে কোরবানির সময় কোরবানির পশু কেনার মতো টাকা থাকবে, তাকেই কোরবানি দিতে হবে৷ জাকাতের নিসাব পরিমাণ অতিরিক্ত টাকা ওই সময় থাকতে হবে তা নয়৷”

ইসলামের বিধান মতে, সারা বছর ধরে যে মুসলমানের কাছে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে সাত তোলা রূপা থাকবে, তাকেই জাকাত দিতে হবে৷ ‘‘আর নিয়ম হলো, যেটার আর্থিক মূল্য কম সেটা ধরেই সামর্থ্য বিবেচনা করতে হবে৷ তাই সাড়ে ৫২ তোলা রুপার সমপরিমাণ অর্থ সম্পদ থাকলেই জাকাত দিতে হবে,'”  জানান ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গবেষণা বিভাগের পরিচালক মুফতি মাওলা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ৷


কোনো অবস্থাতে কি কোরবানি বন্ধ রাখা যায়?

মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদের মতে, “সামর্থ্যবানরা এই করোনার সময়েও কোরবানি বাদ দিতে পারবেন না৷ এই ওয়াজিব বাদ দিলে গুনাহ হবে৷ যদি কোনো মুসলামান কোরবানি না করে সেই টাকা দান করে দেন? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘না তা-ও করা যাবে না৷ নামাজ বাদ দিয়ে শুধু রোজা রাখলে তাতে নামাজের ফরজ আদায় হয় না৷ নামাজও পড়তে হবে৷”

তার মতে, অফিস, হাট-বাজার সবই চলছে৷ তাহলে কোরবানি কেন হবে না৷ ইসলামের ইতিহাসে কোরবানি বাদ দেয়ার কোনো নজির নাই৷

তবে তিনটি পরিস্থিতিতে ব্যাক্তিগতভাবে কোনো মুসলমান কোরবানির সময় কোরবানি না-ও দিতে পারেন৷ কিন্তু পরে তাকে কাফফারা আদায় করতে হবে৷ সুবিধামতো সময়ে কোরবানির টাকা দিয়ে একটি পশু কিনে গরিবের মধ্যে বিলিয়ে দিতে হবে বলে জানান মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ৷ ওই তিনটি পরিস্থিতি হলো: সাধারণ শঙ্কা, প্রবল আশঙ্কা এবং নিশ্চিত ক্ষতি৷ করোনার সময় কোরবানি দিলে শারীরিক ক্ষতি অথবা ক্ষতি হবে এমন তথ্যগত প্রমাণ পেলে কিংবা নিশ্চিতভাবে জীবনহানির আশঙ্কা হতে পারে এমন ক্ষেত্রে কোরবানির সময় কোরবানি না-ও দিতে পারেন৷

অধ্যাপক ড. সাইফুর রহমান বলেন, ‘‘আরো অনেক কারণে কেউ ব্যক্তিগতভাবে কোরবানির সময় কোরবানি করতে না-ও পারেন৷ যেমন, কোরবানির কোনো পশু পাওয়া না গেলে বা দুর্যোগের শিকার হলে৷ এরকম হলে পরে কোরবানির পশু কেনার টাকা দান করে দিলেই হবে৷” তবে রাষ্ট্রীয়ভাবে বা সব মুসলমান মিলে কোরবানি বাদ দেয়ার মতো পরিস্থিতি বাংলাদেশে হয়নি বলে তিনি মনে করেন৷

তারা তিনজনই বলেন, মসজিদ তালা মেরে রাখা যাবে না৷ কিন্তু  যেকোনো পরিস্থিতিতে মসজিদেই নামাজ পড়তে হবে, এমন নয়৷ আর ঘরে নামাজ পড়লে ফরজ আদায় হয়৷ এবারের হজ ও মসজিদে সীমিত নামাজের সাথে কোরবানির তুলনা করা তারা সঠিক মনে করেন না৷

ফরিদ উদ্দিন মাসউদ বলেন, ‘‘তবে এবার কোরবানিতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানতে হবে৷ কোরবানির পশুর হাট থেকে শুরু করে পশু জবাই সবক্ষেত্রে৷এটার ব্যাবস্থা যেমন সরকার করবে৷ তেমনি নাগরিক হিসেবেও আমাদের দায়িত্ব আছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার৷”