বঙ্গবন্ধুর সাল ভিত্তিক জীবন পরিক্রমা

By: রাশেদ শাওন ২০২০-০৮-১৪ ১১:৩৯:৩৬ পিএম আপডেট: ২০২৪-১১-২১ ১:২৬:৪২ এএম ইতিহাস
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু এ দুটি শব্দ যেনো এ সূত্রে গাঁথা। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ যে স্বাধীনতার আমরা পেয়েছি ১৯৭১ সালে, সেই স্বাধীকার আন্দোলনের অদ্বিতীয় নায়ক ও রূপকার শেখ মুজিবুর রহমান।

এই মহাপূরুষের জন্ম ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ। গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সহস্র বছরের শ্রেষ্ঠ এ বাঙ্গালি যখন শৈশব পার করে কিশোর বয়সি তখন থেকেই ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়েন পরাধীন বাংলাকে স্বাধীনতা এনে দেওয়ার মুক্তির সংগ্রামে। ঘটনাবহুল এই আলোচিত রাজনীতীবিদের পুরো জীবনটাই যেনো এক অ্যাডভেঞ্চার। চলুন জেনে নিই, আমাদের জাতির জনকের সাল ভিত্তিক জীবন পরিক্রমা।


১৯২৭

সাত বছর বয়সে গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ছাত্রজীবনের শুরু হয় তাঁর।


১৯২৯ 

গোপালগঞ্জ সীতানাথ একাডেমীর (বা পাবলিক স্কুলে) তৃতীয় শ্রেনীতে ভর্তি করানো হয় তাকে।


১৯৩৪ 

মাদারীপুরে ইসলামিয়া হাইস্কুলে পড়ার সময় তিনি বেরীবেরি রোগে আক্রান্ত হন।


১৯৩৭ 

অসুস্থতার কারণে মাঝে কয়েক বছর লেখাপড়া বন্ধ ছিলো তাঁর। এ বছর আবারও স্কুল শুরু করেন।


১৯৩৮ 

১৬ জানুয়ারি বাংলার তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক গোপালগঞ্জ মিশন স্কুল পরিদর্শনে এলে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
এ বছরেই ১৮ বছর বয়সে বেগম ফজিলাতুননেসাকে বিয়ে করেন।


১৯৩৯ 

সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ সভা করলে বঙ্গবন্ধু প্রথম বারের মতো জেলে যেতে হয়।


১৯৪২

অসুস্থতার কারণে এন্ট্রাস (প্রবেশিকা) পরীক্ষা পাস করেন এবং এই বছরেই কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। একই কলেজের বেকার হোষ্টেলের ২৪নম্বর কক্ষে তিনি থাকতে শুরু করেন।


১৯৪৪

কুষ্টিয়ায় অনুষ্ঠিত নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের সম্মেলনে যোগ দেন। এবং এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি রাজনীতিতে অভিষেক হয় তাঁর। একই বছর ফরিদপুর ডিস্ট্রিক্ট এসোসিয়েশনের সম্পাদক নিযুক্ত হন।


১৯৪৬ 

এ বছর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কলকাতা ইসলামি কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সহকারী নিযুক্ত হন। একই বছর প্রদেশিক নির্বাচনে তিনি মুসলিম লীগের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।


১৯৪৭ 

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেন।

৬ সেপ্টেম্বর, ঢাকায় গণতান্ত্রিক যুব কর্মীদের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।


১৯৪৮ 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন।

২৩ ফেব্রুয়ারি, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন উর্দুকে পাকিস্থানের রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে ঘোষণা করলে বঙ্গবন্ধু তার তৎক্ষনিক প্রতিবাদ করেন।

২ মার্চ, রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাবে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।

১১ মার্চ, রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে সাধারণ ধর্মঘট আহ্বানের সময় গ্রেফতার হন।

১৫ মার্চ, কারাগার থেকে মুক্তিপান।

১১ সেপ্টেম্বর, ফরিদপুরের কর্ডন প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করায় আবারও গ্রেফতার হন।


১৯৪৯
২১ জানুয়ারি কারাগার থেকে মুক্তিপান।

৩ মার্চ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা তাদের দাবী দাওয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে ধর্মঘট ঘোষণা করলে বঙ্গবন্ধু তার প্রতি সমর্থন জানান।

২৯ মার্চ, আন্দোলনে যোগ দেওয়ার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধুকে অযৌক্তিক ভাবে জরিমানা করার পরেও বঙ্গবন্ধু তার প্রতি সমর্থন জানান।

২০ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সৃষ্ট আন্দোলনে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয় এবং জেলে থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধু যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন।

২৭ জুলাই জেল থেকে মুক্তিপান। মুক্তি পেয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে না গিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন।

এ বছর পূর্ব বাংলায় দুর্ভিক্ষ শুরু হলে খাদ্যের অধিকার নিশ্চিত করার দাবীতে তিনি আন্দোলন শুরু করেন।

13.    ১৯৫০
১ জানুয়ারি খাদ্যের অধিকার নিশ্চিত করার আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ও পরিচালনা করার অজুহাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়।


১৯৫২
১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলা রাষ্ট্র ভাষার দাবীতে কারাগারে অনশন শুরু করেন।

২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষার দাবীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবাদ মিছিলে গুলি চলে। শহীদ হন সালাম, রফিক, বরকতসহ অনেকে। জেল থেকে বঙ্গবন্ধু এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেন এবং একটানা ৩ দিন অনশন অব্যাহত রাখেন।

লাগাতার অনশনের কারণে ২৭ ফেব্রুয়ারি তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে স্বাস্থ্যগত কারণে তাকে মুক্তি দেয়া হয়।


১৯৫৩
১৬ নভেম্বর প্রাদেশিক আওয়ামী মুসলীম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

৪ ডিসেম্বর প্রথম সাধারণ নির্বাচনে সব বিরোধী দল মিলে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে।


১৯৫৪ 
১০ মার্চ সাধারণ নির্বাচনে ২৩৭টি আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসনে বিজয়ী হয়। বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জের আসনে বিজয়ী হন।

২ এপ্রিল যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভা গঠিত হয়।

১৪ মে বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভায় বয়:কনিষ্ঠ মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

৩০ মে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রী সভা বাতিল করেন। বঙ্গবন্ধু এ দিনই করাচী থেকে ঢাকায় ফিরে এলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। 

২৩ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু জামিনে মুক্তি পেলে জেল গেটেই তাকে নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয় আবারও।

অবশ্য এ দফায় কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয় দ্রুতই।


১৯৫৫ 

৫ জুন বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

১৭ জুন ঢাকার পল্টনের জনসভা থেকে বঙ্গবন্ধু প্রথম পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসন দাবী করেন।

২১ অক্টোবর আওয়ামী মুসলিম লীগের বিশেষ কাউন্সিল অধিবেশন ধর্ম নিরপেক্ষতা আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দ প্রত্যাহার করে নতুন নামকরণ করা হয় আওয়ামী লীগ। এই কাউন্সিল অধিবেশনে তিনি পুনরায় দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।


১৯৫৮

৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার শাহেদ আলীর উপর আক্রমন এবং তার মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে ইস্কান্দার মির্জা পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করেন।

১২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। এসময় তার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দেয়া হয়।


১৯৫৯

৫ অক্টোবর কারগার থেকে মুক্তি মিললেও তাঁর গতিবিধির উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়। এ সময় তিনি বার বার গ্রেফতার হন এবং ছাড়া পান।


১৯৬২

২ জুন চার বছরের সামরিক শাসনের অবসান ঘটলে ১৮ জুন শেখ মুজিব মুক্তি লাভ করেন।


১৯৬৪

২৫ জানুয়ারি তাঁর বাসভবনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবত করা হয়।

৫ ও ১১ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিুর রহমানের নেতৃত্বে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বিরোধি প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়।

২৬ জুলাই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সম্মিলিত বিরোধি দল কঅপ (কম্বাইন্ড অপজিশন পার্টি গঠিত হয়।)


১৯৬৫

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কঅপ-এর পক্ষ থেকে মিস ফাতিমা জিন্নাহকে প্রার্থী দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু ফাতিমা জিন্নাহর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারনায় অংশ নেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ১৪দিন আগে তাকে গ্রেফতার করা হয়।


১৯৬৬

১৮ মার্চ: আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে ৬ দফা গৃহীত হয়। এরপর তিনি ৬ দফার পক্ষে দেশ ব্যাপী ব্যাপক প্রচারণা শুরু করেন। এ সময় তাকে সিলেট, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বার বার গ্রেফতার করা হয়। ৩ মাসে তিনি ৮ বার গ্রেফতার হন। শেষ বার তাকে গ্রেফতার করে নির্জন কারাবাসে রাখা হয়।


১৯৬৮

৩ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে প্রধান আসামী করে মোট ৩৫জন বাঙ্গালী সেনা ও সিএসপি অফিসারের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে বিছিন্ন করার অভিযোগ এনে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে।

২৮ জানুয়ারি নিজেকে নির্দোষ দাবী করে আদালতে লিখিত বিবৃতি দেন। এই বিবৃতি পাঠের পর তাঁর মুক্তি ও এ মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে আন্দলোন গণঅভ্যূথ্থানে রূপ নেয়। ছাত্র সমাজ ছয় দফার সমর্থনে ১১ দফা দাবী উপস্থাপন করে।


১৯৬৯

৩০ জানুয়ারি উদ্ভুত পরিস্থিতি ঠেকাতে আলোচনার জন্য বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তির প্রস্তাব দেয় পাকিস্তানী জান্তা সরকার। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সে প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেন।

১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের অভ্যন্তরে মামলার অন্যতম আসামী সাজেন্ট জহুরুল হককে নির্মম ভাবে হত্যা করা হলে বিক্ষুব্ধ জনতা বাধ ভাঙ্গা বন্যার মতো রাস্তায় নেমে আসে।

২২ ফেব্রুয়ারি তীব্র গণআন্দোলনের মুখে সরকার রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য শিরোনামে মিথ্যা মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয়।

২৩ ফেব্রুয়ারি ডাকসু এবং পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ রেসকোর্স ময়দানে এক সম্বর্ধনা সভার আয়োজন করে। ঐ সভা থেকে শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

১০ মার্চ রাজনৈতিক সংকট নিরসনে আইয়ুব খান গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করেন। গোল টেবিলে ৬ দফার পক্ষে বঙ্গবন্ধু দৃঢ় অবস্থান নেন। তবে তা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়।

২৫ মার্চ রাওয়াল পিন্ডি গোল টেবিল বৈঠক ব্যর্থ হবার প্রেক্ষিতে আইয়ুব খান ইয়াহিয়া খানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ইয়াহিয়া সামরিক শাসন জারী করেন।

২৮ নভেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে এক বেতার ভাষণে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ এর ১ জানুয়ারি থেকে রাজনৈতিক কর্মকান্ডের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষনা দেন। ঐ বছরের শেষ ভাগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথাও ঘোষণা করেন।


১৯৭০

১ জানুয়ারি ১৯৫৮ সালের পর প্রথম রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। বঙ্গবন্ধু প্রথম দিন থেকেই ৬ দফার পক্ষে দেশব্যাপী ব্যাপক প্রচারণা শুরু করেন।

৪ জুন নির্বাচনকে সামনে রেখে মতিঝিল ইডেন হোটেল প্রাঙ্গনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়। কাউন্সিলে আওয়ামী লীগ এককভাবে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

৫ জুন পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচনী এলাকা বিষয়ে সরকারের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়। পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদে ৩১০টি আসন আর জাতীয় পরিষদে ১৬৯টি আসন নিদির্ষ্ট করা হয়।

১৫ আগষ্ট প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন যথাক্রমে ৭ ও ১৭ ডিসেম্বর।

৮ অক্টোবর ইসলামাবাদ থেকে ১৯টি রাজনৈতিক দলের প্রতীক ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আওয়ামী লীগকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। 

২৮ অক্টোবর বেতার ও টেলিভিশনে নির্বাচনী ভাষণ দেন শেখ মুজিব। তিনি দেশবাসীর কাছে ছয় দফার পক্ষে ভোট চান।

১২ নভেম্বর পূর্ব বাংলায় ভয়াবহ ঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসে বহু লোকের প্রাণহানী হয়। বঙ্গবন্ধু তার নির্বাচনী প্রচারণা স্থগিত করে ত্রাণ কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

৭ ডিসেম্বর বন্যা-দুর্গত এলাকা বাদে জাতীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগ ১৬৭টি আসন পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে। পাকিস্তান পিপলস পার্টি পায় ৮৮টি আসন।

১৭ ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তান ২৯৮টি আসন লাভ করে।


১৯৭১

৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সকল নির্বাচিত সদস্য ৬ দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র প্রণয়ন তথা ৬ দফা বাস্তবায়নের শপথ গ্রহণ করেন।

১০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তিন দফা বৈঠক করেন। ৪দিন পর ফিরে আসার সময় তিনি বলেন, শেখ মুজিব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন।

২৭ জানুয়ারি জুলফিকার আলী ভূট্টো ঢাকা এসে বঙ্গবন্ধুর সংগে কয়েকদফা আলোচনা করেন। কিন্তু ভূট্টোর সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ হয়।

১৩ ফেব্রুয়ারি এক সরকারী ঘোষণায় বলা হয় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় ৩ মার্চ ১৯৭১ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেছেন।

১ মার্চ জাতীয় পরিষদ অধিবেশনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক শুরু হয় হোটেল পূর্বানীতে। ঐ দিনই আকস্মিকভাবে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন। সারা বাংলা ক্ষোভে ফেটে পরে। বিক্ষুদ্ধ জনসমুদ্রে পরিণত হয় রাজপথ। বঙ্গবন্ধু এটাকে শাসকদের আরেকটি চক্রান্ত বলে চিহ্নিত করেন। তিনি ২ মার্চ ঢাকায় এবং ৩ মার্চ সারা পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল আহবান করেন।

২ মার্চ ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বত:স্ফুর্ত হরতাল পালিত হয়। 

৩ মার্চ বিক্ষুদ্ধ জনতা কারফিউ উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে আসে। সামরিক জান্তার গুলিতে মারা যান ৩জন আহত হন কমপক্ষে ৬০জন।

৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে এক যুগান্তকারী ভাষনে ঘোষণা করেন, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষনে ষ্পষ্ট হয়ে যায় স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যত। সারাদেশে শুরু হয় এক অভূতপূর্ব অসযোগ আন্দোলন।

১৬ মার্চ বিস্ফোরণমুখ বাংলাদেশে আসেন ইয়াহিয়া খান। বঙ্গবন্ধুর সংগে তার দীর্ঘ আলোচনা শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু তার গাড়ীতে কালো পতাকা উড়িয়ে হেয়ার রোডে প্রেসিডেন্ট ভবনে আলোচনার জন্য যান।

১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫১তম জন্মদিনের দিন ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা আলোচনা থেকে ফিরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেন, এদেশে জন্ম দিনই বা কি আর মৃত্যু দিনই বা কি আমার জনগনই আমার জীবন।

২৩ মার্চ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ প্রতিরোধ দিবস পালনের ঘোষনা দেন। সমস্ত সরকারী এবং বেসরকারী ভবনে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু এদিন সরকারী ছুটি ঘোষণা করেন।

পৃথিবীর ইতিহাসে এক নৃশংসতম কালো রাত্রি ২৫ মার্চ। এদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে মানুষের ঢল নামে। সন্ধ্যায় খবর পাওয়া যায় ইয়াহিয়া ঢাকা ত্যাগ করেছেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সাথে বৈঠক করেন। তার সাড়ে এগারটায় শুরু হয় অপারেশন সার্চ লাইট। ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা।

২৬ মার্চ ১২-৩০ মিনিট ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হবার আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাবার্তা ওয়ারলেস যোগে চট্টগ্রামের জহুরুল আহমেদ চৌধুরীকে প্রেরণ করেন। চট্টগ্রাম বেতার থেকে আওয়ামী লীগ নেতা হান্নান বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার বাণী স্বকণ্ঠে প্রচার করেন। পরে ২৭ মার্চ চট্টগ্রামে অবস্থিত অষ্টম ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর জিয়াউর রহমান ঐ ঘোষণা পূণ:পাঠ করেন। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে করাচীতে নিয়ে যাওয়া হয়।

২৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ এবং স্বাধীনতার ঘোষণার আলোকে বীর বাঙালী গড়ে তোলে স্বত:স্ফুর্ত প্রতিরোধ। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের এক গৌরবজ্জল অধ্যায়।

১৭ এপ্রিল তৎকালীন মেহেরপুর মহকুমার ভবের পাড়ার (বৈদ্যনাথ তলা) আমবাগানে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারে নতুন মন্ত্রীসভা গঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি এবং তার অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ি রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়।

২৫ মে সংগঠিত হয় প্রবাসী সরকার। ঐ দিন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র চালু হয়।

৩ আগষ্ট পাকিস্তান টেলিভিশন থেকে বলা হয় ১১ আগষ্ট থেকে সামরিক আদালতে বঙ্গবন্ধুর বিচার শুরু হবে। এই ঘোষণায় বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ এবং উদ্বেগের ঝড় বয়ে যায়। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রবাসী বাঙালীরা আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আইনজীবী সন ম্যাকব্রাইডকে ইসলামাবাদে পাঠান। কিন্তু পাকিস্তানি জান্তা সরকার বিদেশি আইনজীবী নিয়োগে অস্বীকৃতি জানায়।

১০ আগষ্ট পাকিস্তানি জান্তা সরকার বঙ্গবন্ধুর পক্ষ সমর্থনের জন্য আইনজীবী এ. কে. ব্রোহীকে নিয়োগ দেয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে যখন ২৬ মার্চ ইয়াহিয়া খানের ভাষণের টেপ শোনানো হয় তখন তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনে অস্বীকার করেন এবং ব্রোহীকে অব্যহতি দেন। 

১১ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুকে ইয়াহিয়া খানের সামনে হাজির করা হয়। ইয়াহিয়ার সঙ্গে ছিলেন ভূট্টো এবং জেনারেল আকবর। ইয়াহিয়া করমর্দনের জন্য হাত বাড়ালে বঙ্গবন্ধু বলে দুঃখিত ও হাতে বাঙালীর রক্ত লেগে আছে ও হাত আমি স্পর্শ করবো না। 

২ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের মুক্তির সংগ্রাম যখন বিজয়ের দ্বাড়প্রান্তে তখন লায়ালাপুর কারাগারে ইয়াহিয়া বঙ্গবন্ধুর সংগে সমঝোতার প্রস্তাব দেন। কিন্তু ঐ সমঝোতা প্রস্তাব বঙ্গবন্ধু ঘৃনাভরে প্রত্যাখান করেন।

১৬ ডিসেম্বর আসে বাংলাদেশের চূড়ান্ত বিজয়। বাঙালি জাতি মুক্ত হয় পরাধীনতার শৃংখল থেকে। তবে সেদিনও স্বাধীনতার স্থাপতি ছিলেন নির্জন কারাগারে।


১৯৭২

৩ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে জুলফিকার আলী ভূট্টো করাচীতে ঘোষণা করেন শেখ মুজিবকে বিনা শর্তে মুক্তি দেয়া হবে।

৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু কারাগার থেকে মুক্তি পান। পিআইয়ের একটি বিশেষ বিমানে বঙ্গবন্ধুকে লন্ডনে পাঠানো হয়। ঐ দিন ভোরে বঙ্গবন্ধু লন্ডনে পৌছান।

১০ জানুয়ারি সকালে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হীথের আগ্রহে ব্রিটেনের রাজকীয় বিমান বাহিনীর এক বিশেষ বিমানে বঙ্গবন্ধু নয়া দিল্লী পৌছালে রাষ্ট্রপতি ভি. ভি. গিরি এবং প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরাগান্ধী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানান।

ঐ দিন বিকেলে ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিমান বন্দরে অবতরণ করেন। ঐ রাতেই তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

১২ জানুয়ারি দেশে রাষ্ট্রপতি শাসনের পরিবর্তে সংসদীয় শাসন কাঠামো প্রবর্তন করে নতুন মন্ত্রী পরিষদ গঠন করে শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।

১২ মার্চ থেকে মিত্র বাহিনীর সৈন্য প্রত্যাহার শুরু হয়।

২০ এপ্রিল শুরু হয় গণপরিষদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা সম্পর্কিত প্রস্তাব উত্থাপন করলে তা সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়।

৪ নভেম্বর গণপরিষদে বাংলাদেশের খসড়া শাসনতন্ত্র অনুমোদিত হয়।

১৬ ডিসেম্বর নতুন সংবিধান কার্যকর করা হয়। বাতিল করা হয় গণপরিষদ। 

৭ মার্চ নতুন সংবিধানের আওতায় বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জাতির জনকের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ৩০০টির মদ্যে ২৯২টি আসনে বিজয়ী হয়।


১৯৭৩

৩ সেপ্টেম্বর আওয়ামীলীগ, সিপিবি ও ন্যাপের সমন্বয়ে ত্রিদলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয়।


১৯৭৪ 

২৩ সেপ্টেম্বর প্রথম বাঙালী নেতা হিসেবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলা ভাষায় বক্তৃতা দেন।


১৯৭৫

২৫ জানুয়ারি দেশে বিরাজমান পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু জাতীয় সংসদে চতুর্থ সংশোধনী বিল পাশ করেন। এই বিলের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়।

২৫ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি এক ডিগ্রীর মাধ্যমে সমস্ত রাজনৈতিক দলের সম্মিলনে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ নামে একটি নতুন একক রাজনৈতিক দল গঠন করেন।

১৫ আগষ্ট স্বাধীনতা বিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের ষড়যন্ত্রে স্বপরিবারে শহীদ হন।

 

 

তথ্য সূত্র: 
১. উইকিপিডিয়া
২. কারাগারের রোচনামচা- শেখ মুজিবুর রহমান
৩. অসমাপ্ত আত্মজীবনী- শেখ মুজিবুর রহমান
৪. বাংলাপিডিয়া
৫. স্যামহোয়্যারইন ব্লগ