- ● যেভাবে ‘টেসলা’য় কর্মরত বাংলাদেশের রাফা
- ● A Decade of Recitation Elegance: Bachonik Celebrates 10 Years of Artistic Brilliance
- ● বর্ণাঢ্য আয়োজনে বুয়েট নাইট অনুষ্ঠিত
- ● ‘গান্ধী শান্তি পুরস্কার’-এ ভূষিত বঙ্গবন্ধু
- ● শনিবারের কলমে হিমাদ্রী: মায়ের “শেখসাব”
- ● সুখী দেশের তালিকায় কানাডা ১৫তে, শীর্ষে ফিনল্যান্ড
- ● গিনেস বুকে ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’
- ● দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দশ তরুণ নেতাদের তালিকায় মাশরাফি
- ● ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ ২০২১ পাচ্ছেন যারা
- ● প্রসংশায় ভাসছে জিয়া হাসানের সাথে ঘরোয়া’র স্বত্বাধিকারীর আলাপচারিতা
মাস্ক পরিধানে কড়াকড়ি, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে বিভিন্ন দেশের সরকার জারি করেছে নানা বিধি নিষেধ। বিশেষ করে মুখে মাস্ক পরার জন্যে কড়াকড়ি দেখা যাচ্ছে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই। এই কড়াকড়ি আরোপে কানাডার সরকার যেনো সবার থেকে এগিয়ে। আর টরোন্টো সিটি কর্পোরেশনতো মাস্ক পরিধানের গুরুত্ব বোঝাতে সাময়িক সময়ের জন্যে আইনই তৈরি করেছে। তবে বিশ্বের ইতিহাসে এবারই প্রথম নয় এমন ঘটনা। এর আগেও মহামারি থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহার হয়েছে।
জানা যায়, তখনও স্কুল বন্ধ রাখা, মাস্ক ব্যবহার করা, কারো মুখের সামনে কাশি বা হাঁচি না দেওয়া, বড় বড় অনুষ্ঠান, গণজমায়েত এড়িয়ে চলা এবং যেখানে-সেখানে থুথু না ফেলার ব্যাপারে কড়া হুশিয়ারি জারি ছিল।
১৯১৮ সালে স্প্যানিশ ফ্লু’র দ্বিতীয় ধাক্কা বিশ্বকে একবারে পর্যুদস্ত করে ফেলে। ফেব্রুয়ারি ১৯১৮ থেকে শুরু হয়ে ১৯২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল এই মহামারি। ৫০০ মিলিয়ন মানুষ এই মহামারিতে আক্রান্ত হয়, মৃতের সংখ্যা নিয়ে মতানৈক্য আছে, বলা হয় ১৭ মিলিয়ন থেকে ৫০ মিলিয়ন লোক মারা যায়। সেই স্প্যানিশ ফ্লুর বিস্তার রোধে তখন যে সাবধানতা নেওয়া হয়েছিল, তার অনেকগুলো আবার ফিরে এসেছে, বর্তমানে কোভিড-১৯ মহামারী নিয়ন্ত্রণে বা সংক্রমণ ঠেকাতে যে পদক্ষেপগুলোর অনুসরণ করা হচ্ছে, তখনও এরকমই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।
তখনও, স্কুল বন্ধ রাখা, মাস্ক ব্যবহার করা, কারো মুখের সামনে কাশি বা হাঁচি না দেওয়া, বড় বড় অনুষ্ঠান, গণজমায়েত এড়িয়ে চলা এবং যেখানে-সেখানে থুথু না ফেলার ব্যাপারে কড়া হুশিয়ারি জারি ছিল।
বিশ্বের ফ্লু আক্রান্ত সব দেশেরই স্বাস্থ্য ও নগর কর্তৃপক্ষ উপরের নির্দেশনাগুলো পালনের জন্য তখন বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায়, ‘থুতু মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে’ লেখা পোস্টার লোকজনকে সতর্ক করতে ব্যবহার করা হয়েছিল। নিউ ইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষ আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে থুতু না ফেলার অধ্যাদেশ জারি করে এবং বাসিন্দাদের কাশি বা হাঁচি দেওয়ার সময় রুমাল ব্যবহার করার জন্য নির্দেশ দেয়। এমনকি শহরের স্বাস্থ্য বিভাগ লোকদের রুমাল ছাড়া যখনতখন চুম্বন না করারও পরামর্শ দেয়।
ওই একই সময়ে বিশ্বের অনেক দেশের শহরগুলোতেই মাস্ক ব্যবহার করার অধ্যাদেশ জারি করা হয়। মাস্ক পরাকে দেশপ্রেমিকের দায়িত্ব হিসেবেও প্রচার করা হয়।
১৯১৮ সালের অক্টোবর মাসে আমেরিকার ‘সান ফ্রান্সিসকো ক্রনিকল’ একটি জনসেবামূলক সংবাদে পাঠকদের উদ্দেশে ঘোষণার মতো আহ্বান করে লিখেছিল: পুরুষ-মহিলা, শিশু যারা মাস্ক পরে না তারা বিপজ্জনক, অলস, উদ্যমহীন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, ওই ধরণের ‘ভাবলেশহীন নির্বিকার লোকেরা তখনও যুদ্ধের প্রয়াসকে অবজ্ঞা করেছে, আক্রান্তদের, ভুক্তভোগীদের সাহয্যে এগিয়ে আসেনি। আর ক্যালিফোর্নিয়ায় সরাসরি হুমকি দেওয়া হয়েছিল এই বলে যে, ‘হয় মাস্ক পরো না হয় জেলে যাও।’
এদিকে ২২শে অক্টোবর সান ফ্রান্সিসকোতে মেয়র, নগরীর স্বাস্থ্য বোর্ড, আমেরিকান রেড ক্রস এবং আরও কয়েকটি বিভাগ সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নেয় নভেম্বরের ১ তারিখে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে, সেই মতে প্রচার করা হয়, ‘মাস্ক পরুন, জীবন বাঁচান’। একই দিনে ২২ অক্টোবর, সকাল ১১টায় সান ফ্রান্সিসকোতে রেড ক্রসের সদর দফতরে জনগণের জন্য ৫০০০ মাস্ক সরবরাহ করা হয়। দুপুরের মধ্যেই সব মাস্ক নিঃশেষ হয়ে যায়।
‘আমেরিকা’স ফরগটেন প্যানডেমিক: দ্য ইনফ্লুয়েঞ্জা অফ ১৯১৮’ বইতে প্রয়াত ইতিহাসবিদ আলফ্রেড ডব্লু ক্রসবি সেই দিনের স্মৃতিচারণ করে লিখেছেন, ‘পরদিন দুপুরে রেড ক্রস সদর দফতর আরও ৪০ হাজার মাস্ক বিতরণ করেছে। ২৬ তারিখ নাগাদ ১ লাখ বিতরণ করা হয়েছে জনসাধারণের মধ্যে। এছাড়াও, মাস্ক পরার ডাকে সাড়া দিয়ে সান ফ্রান্সিসকানরা নিজেরাও হাজার হাজার মাস্ক তৈরি করছিল।’
আর ঘরে বসে লোকজন কীভাবে নিজের মাস্ক নিজেই তৈরি করতে পারে, তার বিভিন্ন পদ্ধতি, পরামর্শ সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করছিল। সঙ্গে নির্দেশ অমান্য করলে শাস্তির কথাও প্রচার করা হচ্ছিল, এরকম একটি হল- 'যারা নিয়ম মেনে চলবেন না, তাদের জেলে যেতে হবে়। জরিমানার পাশাপাশি খবরের কাগজে তাদের নামও প্রকাশিত হবে। সেই সাথে তারা ‘মাস্ক স্ল্যাকার’ হিসেবে বিবেচিত হবেন।
ক্রসবি লিখেছেন, ‘নভেম্বরের প্রথম দিকে সান ফ্রান্সিসকোতে ফ্লু’র প্রকোপ কমতে শুরু করে। তারপরও, বেশির ভাগ বাসিন্দারা তাদের ৫ নভেম্বর নির্বাচনের সময়ও মাস্ক পরেছিলেন। যে নির্বাচনে উড্রোউইলসন দ্বিতীয়বারের মতো জয়লাভ করেন। ১১ নভেম্বরের যুদ্ধবিরতির পর সান ফ্রান্সিসকোতে মাস্ক পরার অধ্যাদেশটি স্থগিত করা হয়। তবে ১৯১৯ সালের জানুয়ারিতে নতুন করে আবার মহামারি হাজির হলে শহরটিকে দ্বিতীয় ‘মাস্কিং’ অধ্যাদেশ বাস্তবায়নের যেতে হয়।
এই সময়েও পত্রিকার পাতায় আবার সচেতনতামূলক লেখা, কার্টুন ফিরে আসে। ‘কাশি ও হাঁচি যেভাবে রোগ ছড়ায় তা বিষাক্ত গ্যাস শেলে চেয়েও বিপজ্জনক’, আরেক ঘোষণায় বলা হয় এই ফ্লু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের হুমকির ভয়ঙ্কর। সংবাদপত্রগুলো বিশেষ বুলেটিন প্রকাশ করে। এরকম প্রকাশিত এক লেখায় গণজমায়েতেরে ব্যাপারে সর্তক করে লেখা হয়, ‘যখন ভিড় এড়ানো যায় না তখন মুখ এমনভাবে ঘুরিয়ে রাখুন বা দূরে রাখুন যাতে অন্য ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাসের বাতাস সরাসরি শ্বাসের মাধ্যমে আপনার ভেতরে চলে না যায়। যে ব্যক্তি মুখ এবং নাক না ঢেকে কাশি বা হাঁচি দেয়, তার ব্যাপারেও সচেতন হওয়া বিশেষত জরুরি।’
পত্রিকায় মাস্কধারী এক মহিলার বিশাল ছবির সঙ্গে এরকম একটা ঘোষণা দেওয়া হয়, ‘কোনো ব্যক্তির নিঃশ্বাস নিজের ভেতরে নেবেন না’।
সিনসিনাটি শহরে, স্ট্রিটকার্গুলোয় পোস্টার সাটানো হয়। তাতে লেখা ছিল: ‘আপনার বেডরুমের জানালা খোলা রাখুন’। সঙ্গে ফ্লুর বিরুদ্ধে সতর্কতা। এবং সচেতনতা নিউমোনিয়া এবং যক্ষ্মার মতো সংক্রামক রোগের বিস্তারও রোধ করতে পারে, তাও বলা হয়েছে।
ক্লিফোর্ড টি বেরিম্যান নামের এক কার্টুনিস্টের একটি পোস্টার খুব জনপ্রিয় হয়। কার্টুনে ছোট একটি ছেলে হাঁচি দেওয়ায়ি এক বয়স্ক ব্যক্তি ছোট ছেলেটির দিকে তাকিয়ে রুমাল এগিয়ে দিয়ে বলছে: ‘রুমালটি ব্যবহার করো, আমাকেও বাঁচাও! এটা তোমার দায়িত্ব, তুমি পালন করো’।
সূত্র: হিস্ট্রি ডটকম।