- ● যেভাবে ‘টেসলা’য় কর্মরত বাংলাদেশের রাফা
- ● A Decade of Recitation Elegance: Bachonik Celebrates 10 Years of Artistic Brilliance
- ● বর্ণাঢ্য আয়োজনে বুয়েট নাইট অনুষ্ঠিত
- ● ‘গান্ধী শান্তি পুরস্কার’-এ ভূষিত বঙ্গবন্ধু
- ● শনিবারের কলমে হিমাদ্রী: মায়ের “শেখসাব”
- ● সুখী দেশের তালিকায় কানাডা ১৫তে, শীর্ষে ফিনল্যান্ড
- ● গিনেস বুকে ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’
- ● দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দশ তরুণ নেতাদের তালিকায় মাশরাফি
- ● ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ ২০২১ পাচ্ছেন যারা
- ● প্রসংশায় ভাসছে জিয়া হাসানের সাথে ঘরোয়া’র স্বত্বাধিকারীর আলাপচারিতা
ডেন্টোনিয়া পার্কের ইতিহাস
টরন্টোর বাংলাদেশি-কানাডিয়ান কমিউনিটির সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িয়ে রয়েছে ডেন্টোনিয়া পার্কের নাম। শহরে আসা বহু প্রবাসীর প্রথম শুরু হয়েছে এই নেইবারহুড থেকে। সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা সহজলোভ্য হওয়ায় এখনও বাংলাদেশ থেকে আসা ইমিগ্রান্টদের প্রথম পছন্দের নাম ক্রিসেন্ট প্লেস ও এর সংলগ্ন নেইবারহুড। ঐতিহাসিকভাবে আলোচিত এলাকাটির রয়েছে আর্থসামাজিক তাৎপর্যও। চলুন জেনে নিই ডেন্টিানিয়া পার্কের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
যা নিয়ে ডেন্টিানিয়া পার্ক ও ক্রিসেন্ট টাউনে:
টরন্টোর ক্রিসেন্ট টাউনের একটি বিনোদন কেন্দ্র ডেন্টোনিয়া পার্ক। ছয় হেক্টর জায়গা জুড়ে অবস্থিত মনোরম এ পার্কে রয়েছে খেলার জায়গা ও অবসর কাটানোর সুন্দর স্থান। বেসবল খেলার স্থান, ১৮ হোল বিশিষ্ট গলফ কোর্স ছাড়াও এতে রয়েছে সুইমিংপুল, ইনডোর ট্যাক, টেনিস/স্কোয়াস কোর্ট, পরিপূর্ণ ব্যায়ামাগার নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ক্রীড়া কমপ্লেক্স। শুধু তাই নয়, সকল বয়সের ব্যক্তিদের নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের করার জন্য এর সংলগ্ন একটি কমিউনিটি সেন্টারও রয়েছে।
শুরুর কথা :
সরকারি তথ্য ও কয়েকটি সূত্র মতে, ক্রিসেন্ট টাউন গড়ে ওঠে ১৮৮৭ সালে। তবে সে সময় এটি ছিল একটি খামার। ডাউয়িস ও ভিক্টোরিয়া পার্ক অ্যাভেনিউয়ের মাঝে ২৪০ একর জমি কিনে একটি খামার বাড়ি প্রতিষ্ঠান করেন ওয়াল্টার মেসি। পরে ‘দ্য মেসি' খামারটির নামকরণ করা হয় ‘ডেন্টোনিয়া’। মিসেস মেসির পারিবারিক নাম থেকেই এই নামকরণ। এই খামার থেকে ডিম, মুরগী, তাজা ট্রট মাছ বিক্রি হতো। কানাডায় প্রথম পাস্তুরিত দুধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবেও পরিচিতি পায় এ খামার বাড়ি।
যেভাবে প্রতিষ্ঠত হয় মেসির খামার বাড়ি:
১৯ শতকের শেষ ও বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে টরন্টোর দুধ সরবরাহ হুমকির মুখে পড়ে। সে সময় দুধে যক্ষ্মা, টাইফয়েড, ডিপথেরিয়ার জীবাণু পাওয়া যায়। এখানেই শেষ নয়! সে সময় দুধের রং ঠিক রাখার জন্য চকের গুড়া মেশাতেন কেউ কেউ। আবার কিছু লোক দুধে পানিও মেশাত। এই দুধ খেয়ে অনেক শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
সে সময় স্বপ্রণোদিত হয়ে সংকট সমাধানে এগিয়ে আসেন মেসি। নিজ উদ্যোগে বিজ্ঞানসম্মতভাবে গড়ে তোলেন এ খামার। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্যতম বড় খামারজাত পণ্য উৎপাদনকারী মেসি হ্যারিস কোম্পানি খামারটি কিনে নেয় ১৮৯৭ সালে।
খামার বাড়িতে যা ছিল:
এক সময় ডেন্টোনিয়া গলফ কোর্সে চড়ে বেড়াত রঙ-বেরঙের গুয়ের্নসে, জার্সি ও আয়ারশায়ার গরু। ১০০ হেক্টর আয়তনের এই ফার্মের খুব ক্ষুদ্র একটি অংশে ছিল এই গলফ কোর্স। এই ফার্মের গরু থেকে দুধ সরবরাহ করা হতো টরন্টো সিটি ডেইরি কোম্পানিতে। কানাডায় পাস্তুরিত দুধ বিক্রির বাধ্যতামূলক আইন প্রণয়ন হয় ১৯১৪ সালে। কিন্তু তারও এক দশক আগে ১৯০৩ সালে এই কোম্পানি প্রথম কানাডায় পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন শুরু করে। এর সবই কানাডিয়ান ব্যবসায়ি ওয়াল্টার মেসির দুরদর্শিতার ফল। ড্যানফোর্থ অ্যাভিনিউয়ের উত্তরে এবং ডওজ রোডের পূর্বদিকে ডেন্টোনিয়া পার্কের পশ্চিম পার্শ্বে একটি ফলকে এ সব তথ্য খোদিত রয়েছে।
বিজ্ঞান ও গবেষণায় ওয়াল্টার মেসির প্রচুর আগ্রহ ছিল। সে থেকে তিনি খামারের অনেক উন্নয়ন করেন এবং মুরগী, শুকর, শাকসবজি ও মাছ চাষ করেন। তার প্রধান লক্ষ্য ছিল একটি মডেল ডেইরি খামার তৈরি, যেখানে পরিচ্ছন্ন পরিবেশে গবাদি পশুপালন করা হত।
চারতলার ফার্মটি সেই সময়ের অন্যান্য ফার্ম থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ছিল। এতে ছিল আলো-বাতাস চলাচলের সুব্যবস্থা। দিনের আলো যেন ফার্মে প্রবেশ করতে পারে এজন্য উত্তর ও দক্ষিণে কাচের দেয়াল ছিল। এতে একসঙ্গে ৮০টি গরু রাখার মতো জায়গা ছিল এবং গরুগুলোর দুধ দোয়ানো হতো কনক্রিটের মেঝেতে।
মেসি পরিবারের অবকাশযাপনের স্থানও ছিল এটি। ওয়াল্টারের ভাই চেস্টার, তার স্ত্রী সন্তান— ভিনসেন্ট (কানাডার প্রথম নেটিভ বর্ন গভর্নর জেনারেল) এবং রেমন্ড (বিখ্যাত অভিনেতা) এই এস্টেটে বসবাস করতেন। বিস্তৃর্ণ চারণভূমি, পুকুর, জঙ্গল, ঝর্ণা সবই ছিল সেখানে। সুজানের সন্তানরাও (রুথ, মেডলিন, ডোরোথি ও ডেন্টন) এখানে থাকতেন। ১৯২১ সালে এখানে দ্য গোল্ডিং এস্টেট তৈরি করেন ডোরোথি মেসি গোল্ডিং।
ক্রিসেন্ট টাউন নেইবারহুড:
পরবর্তীতে এই সম্পত্তি ডেভোলপারদের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়, যা আজকের ক্রিসেন্ট টাউন নেইবারহুড হিসেবে পরিচিত। পার্কের আশেপাশে আকাশ ছোঁয়া ভবনগুলোতে প্রায় ১০ হাজার মানুষ বসবাস করে এখন। ক্রিসেন্ট টাউনের উত্তর দিকে রয়েছে বিখ্যাত টেইলর ক্রিক পার্ক। প্রকৃতিপ্রেমিদের জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান এটি। গাছপালা ঘেরা সরু উপত্যকাটিতে পাখি দেখা ও ফটোগ্রাফির জন্য অনন্য স্থান। এ ছাড়া গ্রীষ্মের বিকেলে দলবেঁধে পিকনিক অথবা হাঁটাহাঁটি, দৌড়ানোর জন্য চমৎকার একটি স্থান এটি। আর বরফ শীতল পানিতে হাঁসেদের খেলা দেখতে হলে এ স্থানের জুড়ি নেই।
বিশিষ্টদের অভিমত:
সিটি ডেইরি ও এই খামারের উপর গবেষণা করেছেন লেখক ও ইতিহাসবিদ পল হান্টলি (সিটি ডেইরি টরন্টো: অ্যা ইয়োলো ওয়াগন অন এভরি স্ট্রিট, ২০১১)। তার মতে, ডেন্টোনিয়া ডেইরিতে দুধ পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরি, স্টিম-সাপ্লাইড স্টেরালাইজেশন রুম এবং বোতলজাত, ক্যাপিং ও সিলিংয়ের জন্য আলাদা কক্ষ ছিল। সে সময় প্রতিষ্ঠানটি মিল্ক কমিশন অব দ্য অ্যাকাডেমি অব মেডিসিনের পক্ষ থেকে ‘সার্টিফাইড মিল্ক’ খেতাব পায়। ১৯০০ সালের দিকে এ খামার থেকে দিনে ২৫০ কোয়ার্টস দুধ সরবরাহ হতো। দুগ্ধ খামারটি সপ্তাহের ছয় দিন জনসাধারণের জন্য খোলা থাকত। তাছাড়া জনসাধারণ খামারটি ঘুরে দেখতে ও দুধ কিনতে পারতেন।
টরন্টো স্টারের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ডেন্টোনিয়া পার্ক ফার্মে মেসি তার বেশিরভাগ অবসর সময় কাটাতেন। তিনি চেয়েছিলেন এটিকে একটি আদর্শ খামার হিসেবে তৈরি করতে। তবে এ খামারের শ্রমিকদের সম্পর্কে খুবি বেশি জানা যায়নি।
হান্টলির ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যমতে, ১৯০১ সালের শুরুতে সিটি ডেইরির পথচলা শুরু। ফার্মে স্টেরালাইজড পদ্ধতিতে তিন ধাপে বোতল পরিষ্কার করা হতো। দর্শনার্থীরা কাঁচের দেওয়ালের বাহির থেকে দুধ বোতলজাতকরনের সব দৃশ্যই দেখতে পেতেন। ল্যাবরেটরির দায়িত্বে থাকতেন একজন প্রধান ব্যাকটেরিওলজিস্ট। আরো জানা যায়, খামারে দ্য স্পাডিনা ক্রেস. মেশিনের মাধ্যমে মিনিটে ১৬০টি বোতল পরিষ্কার করা হত এবং দুধ ভরা হতো তাতে।
খামারের পতন:
টাইফয়েডে আক্রন্ত হয়ে ওয়াল্টার মেসি মারা যান। তারপর তার স্ত্রী ফার্মটি পরিচালনার ভার নেন। ১৯২৬ সালে সুজান তার স্বামীর স্মরণে ২৫ হেক্টর জায়গা টরন্টো সিটিকে পাবলিক পার্ক তৈরির জন্য দান করেন, যা পরবর্তী সময়ে ‘ডেন্টোনিয়া পার্ক’ নামকরণ করা হয়। এছাড়া ১৯১৪ সালে তৈরি করা বাড়িটি সুজান ১৯৩৩ সালে ক্রিসেন্ট স্কুলের নামে দান করেন। ১৯৩৮ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মেয়ে মেডলিনের সঙ্গে ডেন্টোনিয়াতেই থাকতেন সুজান। ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ডেন্টোনিয়াতেই ক্রিসেন্ট স্কুল পরিচালনা হয়। পরবর্তিতে তা স্থানান্তরিত হয়। এরপর শহরের বিভিন্ন উন্নয়ন ঘটতে থাকে এবং তা বর্তমান রূপ নেয়।