- ● যেভাবে ‘টেসলা’য় কর্মরত বাংলাদেশের রাফা
- ● A Decade of Recitation Elegance: Bachonik Celebrates 10 Years of Artistic Brilliance
- ● বর্ণাঢ্য আয়োজনে বুয়েট নাইট অনুষ্ঠিত
- ● ‘গান্ধী শান্তি পুরস্কার’-এ ভূষিত বঙ্গবন্ধু
- ● শনিবারের কলমে হিমাদ্রী: মায়ের “শেখসাব”
- ● সুখী দেশের তালিকায় কানাডা ১৫তে, শীর্ষে ফিনল্যান্ড
- ● গিনেস বুকে ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’
- ● দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দশ তরুণ নেতাদের তালিকায় মাশরাফি
- ● ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ ২০২১ পাচ্ছেন যারা
- ● প্রসংশায় ভাসছে জিয়া হাসানের সাথে ঘরোয়া’র স্বত্বাধিকারীর আলাপচারিতা
রম্যগল্প: লুঙ্গিপড়া চোরের লকডাউনে ঈদ
বাসার ছাদে ঈদ পুণর্মিলনীর দাওয়াত পেয়েছি। লকডাউনের দুইমাস বাসায় ঘাপটি মেরে ছিলাম। দেখা হয়নি কারো সাথে। ঈদ উপলক্ষে অন্য ফ্লাটের লোকজনের সাথে দেখা হবে অনেকদিন পর।
ঈদের দিন বিকেলে বউ বললো, আমি ছাদে যাচ্ছি তুমি তাড়াতাড়ি আসো। তাড়াহুড়া করে ছাদে গিয়ে দেখি চারিদিকে অপরিচিত লোকজন। আশ্চর্য লাগলো, নতুন ভাড়াটে আসছে নাকি সব ফ্ল্যাটে?
একটা চেয়ারে শ্বেত শুভ্র চুল আর লম্বা সাদা দাড়ির এক মুরব্বি বসে ছিলেন। চেহারায় শেষ বয়সের রবীন্দ্রনাথের মতো প্রশান্তি। আমি গিয়ে সালাম দিলাম,
- আংকেল আস সালামু আলাইকুম, নতুন ভাড়া আসছেন বুঝি?
এই সাধারণ প্রশ্নেই আংকেল গরম চোখে তাকালেন।
- মেহেদী ভাই, ইয়ার্কি মাঝে মাঝে একটু বেশি কইরে ফেলান।
আমি থতমত খেয়ে গেলাম। ভালো করে লক্ষ্য করে দেখি আরে এতো ছয়তলার শাহীন ভাই। কিন্তু বয়স হঠাৎ করে বিশ বছর বাড়লো কেমনে? ব্যাটা তাইলে এতোদিন কলপ দিয়ে ইয়াং ভাব নিয়ে ঘুরতো? এখনতো দেখি শরীরের কোন লোমই কালো নাই। একটু খোঁচা দিয়ে বললাম, স্যরি শাহীন ভাই আমার চাচার ঠিক এইরকম সাদা দাড়ি ছিল, তাই ভুল হয়ে গেছে।
শাহীন ভাই গম্ভীর চোখে তাকাচ্ছে। ব্যাটা রাগ করছে মনে হয়। উনি ফ্লাট এসোসিয়েশনের সভাপতি, আমার সার্ভিস চার্জ আবার বাড়িয়ে না দেয়। পরিস্থিতি খারাপ দেখে ওখান থেকে কেটে পড়লাম।
আমার বউরে খুঁজতে গিয়ে দেখি একটা কাজের বুয়া আসছে, বেশ চকচকে একটা শাড়ি পরা, নিশ্চয়ই ঈদে কোনো ভাবি উপহার দিয়েছে তাকে।
ডেকে বললাম, এই খালা আমরা তিন তলায় থাকি, আমার স্ত্রীকে একটু ডেকে দাও তো।
কাজের বুয়া হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে পড়লো, কড়া চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘আমাকে দেখলে কি কাজের বুয়ার মতো লাগে?’
গলা শুনে চমকে গেলাম। ভালো করে তাকিয়ে দেখি, পাঁচ তলার ভাবি। মুখে মেকআপ নাই। সেই ফর্সা সুন্দর মুখের বদলে এক আদিবাসী রমনীর মুখ বসানো এখন। উনাকে দেখে কে বলবে উনি সেই ভাবি যাকে দেখলে আমি ভাবতাম, হায় খোদা আমার বউরে এই রকম সুন্দর করে দাও। ভাগ্য ভালো দোয়া কবুল হয় নাই, সত্যি, খোদা যা জানে আমরা তা জানি না। লকডাউন কত লক যে খুলে দিচ্ছে। তবে উনার মেকাপম্যানের প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে গেল আমার, কি চেহারারে মেকাপ দিয়ে বলিউড নায়িকা করার আশ্চর্য ক্ষমতা তার!
ছাদের এদিক ওদিক বউকে খুজছি, সাত তলার ভাবি এগিয়ে এলো। চমৎকার হাসিখুশি মহিলা, এই লকডাউনেও চেহারা বদলায়নি। আমাকে দেখে হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেল। হাজার টাকার তিনটা নোট আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
- এই ভাই যাও তো মিস্টি আর দই নিয়ে আসো দৌড় দিয়ে।
আমি একটু ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম। আমি একটু ইতস্তত করছি দেখে ভাবী ধমক দিলো।
কি ব্যাপার ভ্যাবলার মতো দাড়ায় আছো কেন? সামনের মোড়েই দোকান, যাও, এক দৌড়ে যাবা এক দৌড়ে আসবা।
আমি যন্ত্রের মতো নামলাম, তিনতলায় নেমে ভাবলাম বৌ আসছে কিনা দেখি। নিজের ঘরে ঢুকে দম নিচ্ছি এই সময় বউ বাইরে থেকে ঢুকলো।
- কই, তুমি রেডি হও নাই এখনো? তাড়াতাড়ি কর। লুংগী খুলে পায়জামা পাঞ্জাবি পর। ছাদে চল তাড়াতাড়ি, ছাদে চোর আসছে।
- কি? চোর?
- হু। আরে সাততলার ভাবির তিন হাজার টাকা চুরি করেছে।
- আমি ঢোক গিললাম, কেমনে?
- আর বইলো না, ভাবীর কাছ থেকে মিস্টি দই কেনার কথা বলে টাকা নিয়ে ভাগছে।
- ভাবী টাকা দিলো কেন?
বউ মাথা নাড়লো, ভাবিরে বলছে সে নাকি নতুন দড়োয়ান। ভাবি বললো দেখাও যায় নাকি সেইরকম। ময়লা লুংগী আর ছেড়া গেঞ্জি পরা। উষ্কখুষ্ক চুল দাড়ি। চিমসে চেহারার চোর। এইদিকে নতুন দাড়োয়ান হাজির, সে গাট্টাগোট্টা লোক।
আমি বলতে চাইলাম পুরাই মিথ্যা, আমি মোটেই নিজেরে দাড়োয়ান বলি নাই, মহিলা জোর করে টাকা দিছে।
কিন্ত ঘরের আয়নায় নিজের চেহারা দেখে চুপ করে গেলাম। হায়রে লকডাউন, চেহারা আর কন্ট্রোলে নাই, লুংগী পরার অভ্যাসও।
সংগৃহীত।