- ● ‘গান্ধী শান্তি পুরস্কার’-এ ভূষিত বঙ্গবন্ধু
- ● শনিবারের কলমে হিমাদ্রী: মায়ের “শেখসাব”
- ● সুখী দেশের তালিকায় কানাডা ১৫তে, শীর্ষে ফিনল্যান্ড
- ● গিনেস বুকে ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’
- ● দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দশ তরুণ নেতাদের তালিকায় মাশরাফি
- ● ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ ২০২১ পাচ্ছেন যারা
- ● প্রসংশায় ভাসছে জিয়া হাসানের সাথে ঘরোয়া’র স্বত্বাধিকারীর আলাপচারিতা
- ● "বাংলা ভাষা নিয়ে লজ্জা, সংকোচ, হীনমন্যতার কিছু নেই"
- ● করোনা’র টিকাদানে ভারত, পাকিস্থানের চেয়েও এগিয়ে বাংলাদেশ
- ● আলোচনায় নাদিম ইকবালের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘শিকড়ের ভাষা’
বৈশাখ আর বাঙালি অভিন্ন ক্যানভাস

বৈশাখ আর বাঙালির সংস্কৃতি এক অভিন্ন চিরন্তন আবেগের ক্যানভাস। যেখানে আমাদের উৎসব আছে আঁকা। রবীন্দ্রনাথ বলতেন, “উৎসব তো আমরা রচনা করতে পারি নে, যদি সুযোগ হয় উৎসব আমরা আবিষ্কার করতে পারি।”
সত্য যেখানে সুন্দর হয়ে প্রকাশ পায় সেখানেই উৎসব। সে প্রকাশ কবেই বা বন্ধ আছে। পাখি তো রোজ ভোর রাত্রে ব্যস্ত হয়ে উঠে তাদের সকাল বেলার গীতোৎসবের নিমন্ত্রণ রক্ষা করার জন্য, প্রভাতের আনন্দ সভাকে সাজিয়ে তোলার জন্য।
আমি দেখতে পাই জগতের আনন্দ যজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ নেয়া আছে ঠিকই তবে সময় করতে পারি কই? কুড়িয়ে নেওয়ার, নিখিলের আনন্দ আয়োজনকে নিজের করে তোলার? তাই একটা বিশেষ দিনকে সামনে রেখে আমরা উৎসব আবিষ্কার করি।
আবহমান কালের বাংলায় বৈশাখের আছে দীর্ঘ ইতিহাস। বৈশাখ ছিলো গ্রামবাংলার মেলায়, খেলায়, হাওয়াই মিঠাই আর নাগর দোলায়। রাত জেগে ঝালড় কাটা হালখাতার প্রস্তুতি, মহাজনী দেনা চুকিয়ে মিষ্টি মুখ, কাঁচা বয়সে আপ্রাণ চেষ্টায় বেলুন ফুলানোর অনাবিল সুখ, আমের বোলে, চৈত্র সংক্রান্তির চড়ক আর গাজনের ঢোলে। সবই ছিলো তবে নিজ নিজ উৎসবে। সেই নিজের নিজের আনন্দের প্রয়াসকে একত্রিত করে বর্তমানের পহেলা বৈশাখ সম্মিলিত ভাবনায় আনন্দ উৎসব হয়ে উঠে ১৯৮৯ সালেন চারুকলার হাত ধরে। এর পরের বছর শিল্পী ইমদাদ হোসেন ভাষা সৈনিক এবং সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব ওয়াহিদুল হক এর নামকরণ করেন 'মঙ্গল শোভাযাত্রা'। ২০১৬ সালে ইউনেস্কোর মানবতার অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহের তালিকায় বাংলাদেশের নবর্ষের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বৈচিত্র্যময় ও বর্ণিল উৎসব হিসাবে স্থান করে নেয়। আবারও অতীত ঐতিহ্য দিয়েই গর্বিত বাংলাদেশি বাঙালি হিসাবে আমরা পরিচিত হলাম। ঐ একটি দিন যেন আমরা অভেদ ধর্মজাতি। আমাদের ভিতরের সমস্ত ঐশ্বর্যকে বাহিরে নিয়ে আসি। সারা বছরের ক্লেদ গ্লানি আর যাপনের সমস্যা টুকরো করে উড়িয়ে দেই হাওয়ায়, নিজের আনন্দের সরূপকে দেই ছুটি। বাঙলার কৃষ্টি, বাংলার সংস্কৃতি, লোকজ ঐতিহ্য বহন করে হাঁটি। তারপর থেকেই শুরু হলো আমাদের নতুন করে বৈশাখ যাত্রা। অন্তরে জ্বলে উঠে মঙ্গলদীপ, শুধু সতেরো কোটি মানুষ নয় জগতের মঙ্গল চেয়ে, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’।
সাম্যের ঐ একটি দিনকে ঘিরেও বছর বছর চলে আসছে অন্ধকারের গোপন আয়োজন। মিলনের শক্তি আর দেশপ্রেমের প্রবলতায় সংগঠিত হয়ে সংস্কৃতি চর্চাকে বেগবান করা ছাড়া গতি নেই। সংস্কৃতির শক্তি অসীম।
অনেক দশক আগে কোন এক বৈশাখে সকালে শান্তি নিকেতনের আম্র কুঞ্জে গুরুদেব ভাষণ দিলেন এবং বিকেলে বৈকালিক চা পর্বের শেষে হঠাৎ ঘন মেঘে আকাশ অন্ধকারে ছেয়ে যায় দিক দিগন্ত ধুলোয় ঢেকে ছুটে আসছিলো ঝড়। দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুর চিৎকার করে বলছিলেন ঐ দেখো রবিকাকা আসছেন। এবং দেখা গেলো ঝড়ের মধ্য দিয়ে ছুটে আসছেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর চুল উড়ছে, জোব্বাটাকে চেপে ধরেছেন বাঁহাতে আর ডান হাতে চশমা। গলা ছেড়ে গাইছেন তাপসনিশ্বাস বায়ে মুমূর্ষুরে দাও ওড়ায়ে বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক।
আমাদের জীবনেও সকল সুস্কতার শেষে ঝড়ের মতো আশে বৈশাখ। বছরের অসুস্থ ভাবনার আকাশে কালো মেঘ বজ্রপাতে পড়ে ঝড়ে ভেসে যায় দূরে বঙ্গপোসাগরে। মঙ্গলের বার্তা ছড়ায়ে, মঙ্গলশোভা যাত্রার উকিল নোটিশ তুড়ি মেরে উড়ায়ে, তুচ্ছতার উর্দ্ধে উঠে, সমস্ত কর্কশ কঠিনের উপর দাঁড়ায়ে লক্ষ-কোটি প্রাণের ডাক ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’।
লেখক: হিমাদ্রী রয়।
এপ্রিল-১৩,২০২৩।