বিশ্ব ক্ষুধাসূচকে ১৩ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ

By: সুখবর ডেস্ক ২০২০-১০-১৭ ২:২৫:২০ এএম আপডেট: ২০২৪-০৪-১৮ ১২:০৮:২৫ এএম বাংলাদেশ
অনলাইন থেকে নেওয়া ছবি

ক্ষুধা মেটানোর সক্ষমতায় গত বছরের চেয়ে আরও এগিয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত এই সূচক বলছে, গত বছরের চেয়ে ১৩ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। যদিও সূচকের স্কোর অনুযায়ী বাংলাদেশে ক্ষুধার মাত্রা ‘গুরুতর পর্যায়ে’ রয়েছে।

কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ও ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফে যৌথভাবে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সের (জিএইচআই) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, ২০২০ সালের বিশ্ব ক্ষুধাসূচকে ১০৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৫তম। গত বছর একই সূচকে ১১৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৮৮। তবে সে বছর কিছুটা পিছিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। এই সূচকে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ছিল ৮৬তম।

জিএইচআইয়ের তথ্য বলছে, ক্ষুধা মেটানোর ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। এই সূচকে ভারতের এবারের অবস্থান ৯৪তম ও পাকিস্তানের ৮৮তম। গত বছরও ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। গত বছরের সূচকে ভারত ১০২তম ও পাকিস্তান ৯৪তম অবস্থানে ছিল।

সূচকে মোট ১০০ স্কোরের মধ্যে বাংলাদেশের এবারের স্কোর ২০ দশমিক ৪। সেই হিসাবে বাংলাদেশে ক্ষুধার মাত্রা ‘গুরুতর পর্যায়ে’ আছে। ২০০০ সালে এই সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৩৪ দশমিক ১। অর্থাৎ গত ২০ বছরের কম সময়ে ক্ষুধা নিবারণে জাতীয় পর্যায়ে অনেকখানি অগ্রগতি হয়েছে বাংলাদেশের। বিশ্ব ক্ষুধাসূচকে শূন্য পেলে বুঝতে হবে, ওই অঞ্চলে ক্ষুধা নেই। আর এই সূচকে ১০০ পেলে, তা ক্ষুধার সর্বোচ্চ মাত্রা বোঝাবে।

বিশ্ব ক্ষুধাসূচকের মাধ্যমে বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ের ক্ষুধার মাত্রা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। অপুষ্টির মাত্রা, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের উচ্চতা অনুযায়ী কম ওজন, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের বয়স অনুযায়ী কম উচ্চতা এবং শিশুমৃত্যুর হার হিসাব করে ক্ষুধার মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বৈশ্বিক, আঞ্চলিক বা জাতীয়—যেকোনো পর্যায়ে ক্ষুধার মাত্রা নির্ণয় করতে এই সূচকগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

বিশ্ব ক্ষুধাসূচকের এবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোট ১৭টি দেশের স্কোর ৫–এর কম। অর্থাৎ এসব দেশে ক্ষুধার মাত্রা সবচেয়ে কম। এসব দেশের মধ্যে আছে বেলারুশ, বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা, ব্রাজিল, চিলি, চীন, কোস্টারিকা, ক্রোয়েশিয়া, কিউবা, এস্তোনিয়া, কুয়েত, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, মন্টেনিগ্রো, রোমানিয়া, তুরস্ক, ইউক্রেন ও উরুগুয়ে।

এই সূচক অনুযায়ী, বিশ্বের মধ্যে দক্ষিণ সাহারা ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে ক্ষুধা ও অপুষ্টির সর্বোচ্চ মাত্রা বিরাজ করছে। এ ছাড়া বিশ্বের তিনটি দেশে ক্ষুধার মাত্রা উদ্বেগজনক পর্যায়ে আছে। এগুলো হলো চাদ, পূর্ব তিমুর ও মাদাগাস্কার। এই সূচকে অস্থায়ীভাবে আরও আটটি দেশে ক্ষুধার মাত্রা উদ্বেগজনক হতে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দেশগুলো হলো বুরুন্ডি, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, কোমোরোস, কঙ্গো, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান ও ইয়েমেন।

এবারের বিশ্ব ক্ষুধাসূচক প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বব্যাপী ৬৯ কোটি মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে। ১৪ কোটি ৪০ লাখ শিশুর উচ্চতা অনুযায়ী দেহের ওজন কম। ৪ কোটি ৭০ লাখ শিশু প্রচণ্ড অপুষ্টিতে ভুগছে। এ ছাড়া ২০১৮ সালে ৫৩ লাখ শিশু বয়স ৫ বছর হওয়ার আগেই মারা গেছে।

তবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবারের সূচকের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ মহামারির নানাবিধ প্রভাবকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। করোনাভাইরাসের (কোভিড–১৯) মহামারির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্ষুধা ও অপুষ্টিসংক্রান্ত অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

বিশ্ব ক্ষুধাসূচক বলছে, বিশ্বজুড়ে ক্ষুধার মাত্রা এখন সহনীয় পর্যায়ে আছে। তবে পৃথিবীর সব অঞ্চলে তা সমান নয়। বিশেষ বিশেষ দেশ, অঞ্চল বা সম্প্রদায়ে ক্ষুধার মাত্রা মারাত্মক পর্যায়ে আছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ক্ষুধার মাত্রা শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণের সঠিক পথে নেই বিশ্ব। এটি টেকসই উন্নয়নের দ্বিতীয় লক্ষ্যমাত্রা। তবে বর্তমান গতিতে এগোতে থাকলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না।