এই ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্বে ছিল সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইফতারের নানা তথ্য। এবারের পর্বে থাকছে মিশর, ইরান, ইরাক ও আলজেরিয়ার ইফতারের ঐতিহ্য বিষয়ে তথ্য।
চলুন জেনে নিই দেশে দেশে ইফতার-এর এবারের পর্বে যা থাকছে সে বিষয়ে।
মিশর
দেশটিতে ইফতারে আঙুর পাতা দিয়ে বানানো এক পদের খাবার এবং কাতায়েফ সবচাইতে প্রসিদ্ধ খাবার। আঙুর পাতার ভেতরে ভাত এবং মাংস পুরে দেয়া হয় এবং পরিবেশনের সময় সাথে লেবুর শরবত এবং জলপাই তেলও ব্যবহার করা হয় স্বাদের জন্য। আর কাতায়েফ হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সবচাইতে ঐতিহ্যবাহী প্যানকেক। যেটা ভেতরটা পনির, কাজু বাদাম এবং কিসমিস দিয়ে বেশ সুস্বাদু করে বানানো হয়ে থাকে।
আপনি জেনে অবাক হবেন যে, মিশরীয়দের ইফতার আয়োজনে অন্যতম প্রধান পদ হচ্ছে লেটুস পাতা। রমজানে এই পাতার কদর আরো বাড়ে। এছাড়া সাধারণত শরবত, দুধ, নানা রকমের ফল, ঐতিহ্যবাহী কেক এবং পিঠা দিয়েই মিশরের লোকেরা ইফতার আয়োজন করে থাকে। আবার, তায়েফ পিঠারও বেশ কদর আছে যেটা বাদাম, কিসমিসসহ আরো নানা উপকরণ সুস্বাদু করে তোলা হয়। এছাড়া, কাবাব, ছোলা, বিরিয়ানি, ফাত্তাহ (ভাত, মাংস, টমেটো দিয়ে তৈরী) এবং মসলাদার মাংসসহ বিভিন্ন ধরনের ভাজাপোড়া তো থাকেই।
ইরান
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের লোকেরা নিজেদের ইফতার আয়োজন যেমন বনাঢ্যভাবেই সাজায়, ঠিক তেমনি ইফতার আয়োজনে লোকেদের আতিথেয়তা করাটাও ইরানের লোকেদের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। ইরানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফলমূল, মিষ্টি জাতীয় খাবার এবং বিভিন্ন ধরনের পানীয় দিয়ে রোজাদাররা ইফতার করে থাকেন। তবে খাদ্যতালিকায় যে সব জিনিস না রাখলেই নয়, সেগুলো হচ্ছে- খেজুর, আখরোট, তরমুজ, তলেবি (বাঙ্গি ফল), আপেল, চেরি, টমেটো, লেটুস পাতার বিশেষ সালাদ, সুগন্ধিযুক্ত পাতা, মধু, পনির, হালুয়া, জুলভিয়া ও বামিয়া (পারস্যের ঐতিহ্যবাহী খাবার), ইরানি জিলাপি ও ইরানি হালিম, রুটি, কাবাব, শামি লেপি (শামি কাবাব দিয়ে বানান খাবার), শোলে জার্দ (বিশেষ ধরনের ক্ষীর বা পায়েস) সহ আরো অসংখ্য পদ।
তবে ঐতিহ্যের দিক থেকে আশ-ই-রিস্তের জনপ্রিয়তা সবচাইতে বেশি। এটা একধরনের ইরানি নুডলসের দিয়ে তৈরি স্যুপ জাতীয় খাবার, যেটা বানানো হয়ে থাকে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি জাতীয় উপাদান দিয়ে। নুডলসের সাথে ছোলা, মটরশুঁটি এবং পুষ্টিকর শাকসবজির মিশ্রণে তৈরি করা হয় এ খাবার।
ইরাক
ইরাক মুসলিম রাষ্ট্র হলেও শিয়া ধর্মের অনুসারীদের সংখ্যাই সেখানে বেশি। তা সত্ত্বেও ইফতার আয়োজনে শিয়া বা সুন্নিদের মধ্যে কোনো বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায় না। আর কেবল ইফতারের ক্ষেত্রেই ইরাকের প্রাচীন সংস্কৃতিকে এখনো আগলে ধরে রেখেছেন সেখানকার অভিবাসীরা।
শুকনো এবং তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করেই শিনেনা নামক টক দই দিয়ে বানান শরবত থাকে ইরাকের খাদ্যতালিকায় সবার উপরে। এরপর নাওয়াসিফ (মূলত শুকনো, অথচ ভারি খাবারের পদ), কাবাব, উরুগ (বিশেষ ধরনের কাবাব), কুব্বা, কুব্বা হালাব (ভাত দিয়ে তৈরী বড়া), আলুর চপ, সামুন বা খুবুজ টানুর (রুটি), মাহাল্লাবি (দুধের তৈরি পুডিং) এবং হালাওয়াত শারীয়াহ (নুডলস জাতীয় খাবার) সহ আরো নানা আয়োজন।
আলজেরিয়া
আফ্রিকার এই দেশটিতে ইফতারকে বেশ গুরুত্বসহকারে পালন করা হয়ে থাকে এবং সেজন্য আলজেরিয়ানরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে, ইফতারের আয়োজনে যেন কমতি না থাকে। খেজুর, শরবত আর বিভিন্ন ফলমূল, জিলাপি এবং মিষ্টি জাতীয় খাবারের সমারোহের পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী আলজেরিয় স্যুপ, খাবজ এদ্দার নামক শুকনো রুটি বিশেষ, মাকুদা (আলু দিয়ে তৈরী চপ বিশেষ), দাজ্জাজ মায়াম্মার (মসলাদার আস্ত মুরগির রোস্ট), রোস্টেড পোট্যাটো (সেদ্ধ আলু এবং সবজি দিয়ে তৈরি সালাদ) সহ আরো অনেক আয়োজন।
তবে প্রসিদ্ধ খাবারের পদের মধ্যে সর্বপ্রথমে নাম আসে বাউরেক নামক একপ্রকার রোল রুটির কথা, যার ভেতরটা মাংসের কিমা দিয়ে পূর্ণ থাকে। এছাড়া, শাকশৌকার কথাও বলা যায়, যেটি মূলত টমেটোর সসের সাথে ডিম পোচ দিয়ে বানানো হয়। এটা সাধারণত খাওয়া হয়ে থাকে খুবজ বা রুটি দিয়ে, এবং এটা এমন আহামরি কোনো ভারি খাবারও না, তাই এর জনপ্রিয়তাও বেশি।
Chairman Of The Board: Syed Shamsul Alam
Editor in Chief: Tahsen Rashed Shaon
SHOKHOBOR24.COM
2994 DANFORTH AVE. | SUITE# 201
TORONTO. ON. M4C 1M7. CANADA
COPYRIGHT © 2019. ALL RIGHTS RESERVED. BY Shukhobor24.com About Us Privecy & Policy Terms & Condition