গরু নাকি গোরু: সমসাময়িক (গো+এষণা) গবেষণা

প্রকাশঃ ২০-০৭-০৯ ৫:০৬:৪৬ এএম
আপডেটঃ ২০২৪-০৪-২৪ ৯:১২:৪০ পিএম
লেখকঃ কে এম রাকিব
গরু নাকি গোরু: সমসাময়িক (গো+এষণা) গবেষণা
অলংকরণ: হ্যাপি কাউ

জীবন্ত প্রাণীর মতো শব্দেরও জবান থাকলে গত দুইদিনে বাংলা অনলাইনে হাম্বা হাম্বা রবে টেকা যাইতো না। ভাগ্যিস শব্দ নিজে আওয়াজ করতে পারে না। 

কিন্তু মানুষ যেহেতু পারে, চতুষ্পদ এই তৃণভোজী প্রাণীটারে নিয়া নানান হাঙ্গামা করে। এই হাঙ্গামার নিউ এডিশন হইতেছে 'গোরু নাকি গরু?' সেই বানান বিতর্ক'।

Cow শব্দের বাংলা ‘গরু’ না ‘গোরু’ এইটা নিয়া অনেকের সংশয়। বানান নিয়া সংশয় অমূলক না।  

প্রবন্ধ-নিবন্ধের ক্ষেত্রে জ্ঞানগর্ভ আলাপের তরিকা হইলো ইতিহাস ধইরা টানাটানি করা। সেই মোতাবেক সিদ্ধান্তে আসা৷ সেই চেষ্টা করা যাক, যদিও অবস্থা খুব ঘোলাটে, জটিল। সিদ্ধান্তে আসা টাফ। 

স্কুলে বাংলা দ্বিতীয় পত্রের সন্ধি-বিচ্ছেদ অধ্যায়ে নিশ্চয়ই পড়ছেন যে, গো+এষণা = গবেষণা, অর্থাৎ গবেষণার আদি অর্থ গরু খোঁজা।

বাংলা ভাষার আদি হইতে গরু/গোরু খোঁজা যাক, অর্থাৎ গবেষণা চালানো যাক। 

বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন চর্যাপদ। পঞ্চাশটি চর্যাপদের মধ্যে ‘গরু’ শব্দ নাই কোথাও। ময়ূর, হরিণ, গুঞ্জারমালাসহ এতো কিছু আছে চর্যাগুলিতে অথচ গরু নাই। কাহ্নপাদ, লুইপাদেরা কি গরুর গুরুত্ব বোঝেন নাই? আশ্চর্য ব্যাপার!

যাহোক, মধ্যযুগের কাব্যে Cow এর বাংলা অর্থ হিসেবে ছয় রকম বানান পাওয়া যায়। 

এইগুলা হইতেছে: গরু, গরুঅ, গরূ, গোরু, গোরো, গো।

১৪৫০ -১৫০০ খ্রিষ্টাব্দে বড়ু চণ্ডীদাস লিখছেন গরু, গরূ, গোরো। বিদ্যাপতির বানান আবার ‘গরুঅ’। ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দে মালাধর বসু লিখছেন ‘গোরু’। ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দে মুকুন্দ দাস লিখছেন ‘গোরু’।

১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে নজরুল ইসলাম লিখেছেন ‘গোরু। ১৯২৯/৩০ খ্রিষ্টাব্দে রবীন্দ্রনাথের লেখাতেও ‘গোরু’ বানান দেখা যায়। 

যেমন: 
ঘাসে আছে ভিটামিন, গোরু ভেড়া অশ্ব
ঘাস খেয়ে বেঁচে আছে, আঁখি মেলে পশ্য।

বা, ওরে গোরু কোথায় রে, ওরে গাড়ি কোথায়

যদিও পরে গুরুদেব ‘গরু’ লিখতে শুরু করেন। অবশ্য রবীন্দ্রনাথ প্রথম দিকে 'গোরু' লেখায়, রবীন্দ্রবিরোধী হিসাবে চিহ্নিত কল্লোল গোষ্ঠী বিরোধিতার খাতিরে লেখতে শুরু করেন 'গরু'। পশ্চিমবঙ্গেও সে সূত্রে গরু প্রচলিত হয়ে যায়। এছাড়া পরে রবীন্দ্রনাথ ‘গরু’ লেখায় ওই বানানটাই বহুল প্রচলিত হয়া পড়ে। যদিও প্রখ্যাত ভাষাবিদ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় লিখতেন গোরু।

এইবার একটু ব্যাকরণের কচকচি করবো। আমি যে বাংলা গ্রামার স্কুল-কলেজে ভালো পারতাম সেইটা জাহির করার সুযোগ মিস করতে চাই না।

গো (সংস্কৃত, গম+ও) / গোরু/গরু (সংস্কৃত, গরূপ) অর্থ হলো: জ্ঞান, ঐশ্বর্য, ধনু, গাভি, ষাঁড়, বৃষ, নিরেট বোকা/মূর্খ প্রভৃতি। 

বাংলাদেশের বাংলা একাডেমি উচ্চারণ অভিধান ও ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে ‘গরু’ লেখা হয়েছে। কারণ সংবৃত অ-ধ্বনির পরে ই/ঈ/উ/ঊ-কার থাকলে অ-ধ্বনি ও-ধ্বনি উচ্চারিত হয়। যেমন: গরু>গোরু। 

অনেকে ভাবতেছেন, ইদ-এর মতো, কুরবানির আগ গিয়া বাংলা একাডেমি হয়তো এই জিনিস চালু করছে। ব্যাপারটা তেমন না। কারণ ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের আগেও লেখা হইছে গরু। কিন্তু ২০১৬ সালে প্রকাশিত জামিল চৌধুরী সম্পাদিত ‘বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান’ (২০১৬ সাল) লিখছে ‘গোরু’। এখন ব্যাপারটা অনলাইনে জাস্ট ভাইরাল হইছে, এই যা।

আবার 'বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান'ই কিন্তু প্রথম অভিধান না যারা গোরু বানানের পক্ষে মত দিছেন। দুইটা উল্লেখ করি: 

১. বাঙ্গালা ভাষার অভিধান (প্রথম ভাগ [অ-ধ]), জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস, সাহিত্য সংসদ, দ্বিতীয় সংস্করণ (১ম মুদ্রণ: জুলাই ১৯৮৬, ১২তম মুদ্রণ: জুলাই ২০১৭), পশ্চিমবঙ্গ

২. ব্যবহারিক বাংলা বানান-অভিধান, পবিত্র সরকার, লতিকা প্রকাশনী, প্রথম সংস্করণ, বইমেলা, ২০১৮, পশ্চিমবঙ্গ।

তবে কথা হইতেছে, যদি গরুর বানান যদি উচ্চারণের সাথে মিলায়ে গোরুই হয়, তাইলে মরু, তরু, জরু ইত্যাদিও কি মোরু, তোরু, জোরু হওয়া উচিত? এইখানে একাডেমির পরিষ্কার বক্তব্য নাই। সবচাইতে বড় কথা, গরু-তে কী সমস্যা ছিলো?

এই বিষয়ে জনৈক ব্যক্তি বলছেন, গরুতে আসলে কোনো সমস্যা ছিলো না। প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলা একাডেমি কোনো কামের না। সরকারি টাকা-পয়সা দেদারসে খরচ হইতেছে। কিছু একটা তো করতে হবে! তাই তারা কিছুদিন পর পর এইসব গোরুত্বপূর্ব কাজকর্ম করে। 

Chairman Of The Board: Syed Shamsul Alam

Editor in Chief: Tahsen Rashed Shaon

SHOKHOBOR24.COM

2994 DANFORTH AVE. | SUITE# 201

TORONTO. ON. M4C 1M7. CANADA

COPYRIGHT © 2019. ALL RIGHTS RESERVED. BY Shukhobor24.com About Us Privecy & Policy Terms & Condition