স্বপ্নের দেশ, দুঃস্বপ্নের দেশ

প্রকাশঃ ২০-০৬-১১ ৮:১৫:৫৯ পিএম
আপডেটঃ ২০২৪-১২-০৪ ২:১০:৫৯ পিএম
লেখকঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল
স্বপ্নের দেশ, দুঃস্বপ্নের দেশ
মুহম্মদ জাফর ইকবাল

১.

করোনার এই দুঃসময়ে খবর মানেই মন খারাপ করা খবর, সংবাদ মানেই দুঃসংবাদ। তার মাঝেই হঠাৎ করে পৃথিবী থেকে একটা খবর নির্মল শীতল বাতাসের মতো এসে আমাদের সবার হৃদয় জুড়িয়ে দিয়ে গেল। হঠাৎ করে আমরা আবার মানুষের উপর বিশ্বাস ফিরে পেতে শুরু করেছি, অনুভব করতে শুরু করেছি আমার দেশ, মুখের ভাষা, গায়ের রং ভিন্ন হতে পারে কিন্তু পৃথিবীতে আমরা সবার আগে একজন মানুষ। এই পৃথিবীতে আমাদের সবার সমান অধিকার।

পুরো ব্যাপারটা শুরু হয়েছিল আমেরিকার একটা দৈনন্দিন ‘নিয়মিত’ ঘটনা দিয়ে। জর্জ ফ্লয়েড নামে একজন কালো মানুষ গ্রেপ্তার হওয়ার সময় সাদা পুলিশের হাতে মারা গিয়েছে। আমেরিকার জন্য এটি এমন কোনো বড় ঘটনা নয়, সেই দেশে প্রতিবছর পুলিশের হাতে হাজারখানেক মানুষ মারা যায়। সেখানে কালো মানুষের সংখ্যা তেরো শতাংশ থেকেও কম, কিন্তু পুলিশের হাতে মারা যাওয়ার সময় কালো মানুষের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি, গড়ে দিনে এক আধজন প্রায় নিয়মিতভাবেই মারা যায়। ব্যাপারটা প্রায় সবাই মেনেই নিয়েছে। মার্চ মাসের ১৩ তারিখ ব্রিওনা টেইলর নামে একটা কালো মেয়েকে কেন্টাকিতে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে। একজন মাদক ব্যবসায়ীকে ধরার জন্য ভুল বাসায় দরজা ভেঙে ঢুকে পুলিশ ২৭ বছরের এই হাসিখুশি ইমারজেন্সি স্বাস্থ্যকর্মীকে গুলি করে মেরেছে, একটা বা দুটো নয়, তার শরীর আটটা বুলেট দিয়ে ঝাঁজরা করে ফেলা হয়েছিল। যে মাদক ব্যবসায়ীকে ধরার জন্য ভুল করে তার বাসায় এই অপারেশন চালানো হয়েছিল সেই মানুষটি কিন্তু আগেই গ্রেপ্তার হয়েছিল।

এতো বড় ঘটনার পরেও কিন্তু পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমেরিকায় শুধু যে পুলিশেরা মোটামুটি ইনডেমনিটি নিয়ে যখন খুশি একজন কালো মানুষকে মেরে ফেলতে পারে তা নয়, আমেরিকার সাধারণ সাদা মানুষেরাও প্রায় নিয়মিতভাবে কালো মানুষদের গুলি করে মেরে ফেলতে পারে। ফেব্রুয়ারি মাসে জর্জিয়াতে একজন ৬৪ বছরের বাবা এবং তার ৩৪ বছরের ছেলে মিলে আহমদ আরবেরি নামে ২৬ বছরের একজন কালো যুবককে শুধু অপরাধী সন্দেহ করে প্রকাশ্যে গুলি করে মেরে ফেলেছে। পুরোপুরি নিরপরাধ নিরীহ এই কালো যুবকটি তখন জগিং করছিল। বাবা এবং ছেলের গায়ের রং সাদা তাই প্রথমে কিছুই হয়নি, যখন একটা ভিডিওতে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড প্রকাশ পেয়েছে এবং একটা হৈ চৈ শুরু হয়েছে তখন শেষ পর্যন্ত আড়াই মাস পরে বাবা এবং ছেলেকে খুনের দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আমেরিকায় এরকম উদাহরণের শেষ নেই। তাই সন্দেহভাজন একজন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করার সময় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে তার মারা যাওয়ার ব্যাপারটি আমেরিকাতে খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। কেউ এ নিয়ে অবাক হয় না। ঠিক একইভাবে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুও খুবই স্বাভাবিক একটা ঘটনা হিসেবে সবার চোখের আড়ালে থেকে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঘটনাক্রমে সেটি হয়নি। তার একমাত্র কারণ পথচারীদের একজন পুরো ঘটনাটি ভিডিও করে ইন্টারনেটে দিয়ে দিয়েছে। পৃথিবীর মানুষ এক ধরনের আতঙ্ক এবং অবিশ্বাস নিয়ে দেখেছে যন্ত্রণাকাতর একজন মানুষ কাতর গলায় বলছে, ‘আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না, আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না’, কিন্তু তারপরেও একজন নির্বিকার সাদা পুলিশ হ্যান্ডকাফ দিয়ে দুই হাত পেছনে বাধা থাকা অবস্থায় হাটু দিয়ে জর্জ ফ্লয়েডের ঘাড়ে চাপা দিয়ে ধীরে ধীরে তাকে মেরে ফেলছে। ভিডিওটি অনেকেই দেখেছে, আমি দেখিনি, আমার দেখার সাহস হয়নি। হলিউডের সিনেমাতে গুলি খেয়ে একজনকে মরে যেতে দেখা এক ব্যাপার কিন্তু সত্যি সত্যি একজন মানুষের ঘাড়ে হাঁটু দিয়ে চেপে ধরে তাকে নিঃশ্বাস নিতে না দিয়ে ধীরে ধীরে হত্যা করার ঘটনাটি দেখা সম্পূর্ণ অন্য ব্যাপার। যারা দেখেছে তারা দৃশ্যটি কোনোভাবে ভুলে যেতে পারছে না। তাদের কাছে শুনেছি পুরো হত্যাকাণ্ডের সময় চারজন পুলিশের কর্মকাণ্ড ছিল আশ্চর্যরকম হৃদয়হীন, মানুষ একটা পশুকেও এত অবহেলায় হত্যা করে না। 

আমেরিকার মানুষ ঘটনাটি দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভুলে যেতে পারতো— অতীতে অনেকবার তারা ভুলে গেছে কিংবা ভুলে যেতে বাধ্য হয়েছে। এবারে কিন্তু সেটি ঘটেনি। কীভাবে কীভাবে জানি এই ঘটনাটি মনুষত্বের মূল জায়গাটিকে স্পর্শ করেছে। করোনার অবরুদ্ধ পরিবেশেও মানুষ প্রতিবাদ করতে শুরু করেছে। ফেসবুকের অর্থহীন প্রতিবাদ নয়, রাজপথের দৃপ্ত প্রতিবাদ। শুধু কালো মানুষ নয়, তাদের পাশাপাশি সেই দেশের সাদা মানুষ, এশীয় মানুষ, লাতিনো মানুষ। পুরুষের পাশাপাশি মহিলা, যুবার পাশাপাশি বয়স্ক, বৃদ্ধ। পৃথিবীর যে কোনো আন্দোলন থামানোর জন্য সেটাকে ভিন্নপথে ঘুরিয়ে দিতে হয়, এই আন্দোলনটিকেও ভিন্নপথে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য বর্ণ বিদ্বেষীরা ভিতরে ঢুকে উশৃঙ্খল হয়ে একটু ভাঙচুর আর লুটপাট করার চেষ্টা করলো, তাদের নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প হুংকার দিয়ে বললেন, ‘যখনই লুটপাট তখনই গুলি!’ সুবিচারের জন্য আন্দোলন যখন তীব্র থেকে তীব্রতর হতে শুরু করল, প্রেসিডেন্ট রাস্তায় মিলিটারি নামিয়ে তাদের দমন করার হুমকি দিলেন। ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউজের খুব কাছাকাছি যখন সহস্র মানুষের স্লোগানে মুখরিত হতে লাগলো তখন আতঙ্কিত প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউজের নিচে বাংকারে গিয়ে লুকিয়ে রইলেন।

শেষ পর্যন্ত হত্যাকারী পুলিশ অফিসারকে গ্রেপ্তার করা হলো। আন্দোলন যখন আরও তীব্র হয়ে আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়তে লাগল তখন সেই ঘটনার সময় উপস্থিত বাকি তিনজন পুলিশ অফিসারকেও গ্রেপ্তার করা হলো। কিন্তু এই আন্দোলনটি এখন শুধু কয়েকজন সাদা পুলিশ অফিসারের বিচারের দাবিতে নয়। আন্দোলনটি এখন শত শত বছরের শোষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে। আন্দোলনটি এখন আর শুধু আমেরিকার মাঝে সীমাবদ্ধ নেই, ধীরে ধীরে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে। করোনা ভাইরাসের তীব্র নিষেধাজ্ঞার মাঝে লক্ষ লক্ষ মানুষ ফেসবুকের মেরুদণ্ডহীন প্রতিবাদ না করে সত্যিকারের প্রতিবাদের জন্য রাস্তায় নেমে এসেছে।

পৃথিবীতে বর্ণবাদের কারণে যত অবিচার হয়েছে তার মূলোৎপাটন করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে পৃথিবীর মানুষ ভাইরাসের আতঙ্কের মাঝে পথে নেমেছে। কী হবে এখন পৃথিবীতে? কিন্তু পৃথিবী কীভাবে এরকম একটা জায়গায় পৌঁছেছে সেটা কী আমরা জানি? 

 

২.

বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন যখন ব্রিটেনে পৌঁছেছে তখন ব্রিস্টল শহরের মানুষেরা গত সপ্তাহে একদিন সবাই মিলে এডওয়ার্ড কলস্টন নামে একজন মানুষের ভাস্কর্য টেনে নিচে ফেলে দিয়ে রাস্তা দিয়ে গড়িয়ে নিয়ে নদীতে ডুবিয়ে দিয়েছে। এডওয়ার্ড কলস্টন দাস ব্যবসা করে অনেক সম্পদের মালিক হয়ে জনসেবা করে নামি-দামী হয়েছিল। ব্রিটেনের মানুষের প্রায় ৪০০ বছর সময় লেগেছে বোঝার জন্য যে, দাস ব্যবসায়ীদের মাথায় তুলে রাখতে হয় না। (আমি অপেক্ষা করে আছি দেখার জন্য উইনস্টন চার্চিলের একটা ভাস্কর্য কখন টেনে নিয়ে টেমস নদীতে ফেলা হয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় এই মানুষটার আদেশে খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য আমাদের দেশে দুর্ভিক্ষে ২০ লক্ষ মানুষ না খেতে পেয়ে মারা গিয়েছিল।) 

এডওয়ার্ড কলস্টনের মত মানুষেরা প্রায় সাড়ে তিনশ বছর পশ্চিম আফ্রিকা থেকে কালো মানুষদের ধরে জাহাজে করে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে এনে উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকায় ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করেছে। সব মিলিয়ে এক কোটি থেকে বেশি মানুষকে তারা তাদের দেশ এবং আপনজনদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে এসেছিল। জাহাজে পরিবেশ এত খারাপ ছিল যে, সমুদ্রপথেই না খেতে পেয়ে এবং রোগে শোকে আফ্রিকার প্রায় ২০ লক্ষ হতভাগ্য মানুষ মারা গিয়েছিল।

নিজের দেশ, ভাষা, মানুষ, কালচার এমন কী নাম পর্যন্ত হারিয়ে এই কালো মানুষগুলো শত শত বৎসর ক্রীতদাস হিসেবে পশুর মতো খেটে আমেরিকাকে গড়ে তুলেছে। আব্রাহাম লিঙ্কন যখন দাসপ্রথা তুলে দেবেন বলে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন তখন আমেরিকার দক্ষিণের অনেকগুলো স্টেট আমেরিকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল, তারা কিছুতেই দাসপ্রথা তুলে দিতে রাজি না। আমেরিকায় চার বছর গৃহযুদ্ধ হলো, ১৮৬৫ সালে শেষ পর্যন্ত দক্ষিণের স্টেটগুলো পরাজিত হলো এবং আনুষ্ঠানিকভাবে দাসপ্রথা উঠে গেল। মানুষকে যে পণ্য হিসেবে বাজারে বিক্রি করা যায় না এই সহজ সত্যটা বুঝতে পৃথিবীর মানুষের কতো দীর্ঘ সময় লেগেছে ভেবে অবাক হয়ে যেতে হয়।

দাস প্রথা উঠে গেলেও কালো মানুষেরা কিন্তু মানুষের সম্মান কিংবা অধিকার পেলো না। এই ১৯৫০ সাল পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে কম করে হলেও একজন কালো মানুষকে সাদা মানুষেরা বিনা বিচারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মেরেছে। জর্জ ফ্লয়েড সেই একই ধারাবাহিকতায় প্রাণ হারিয়েছেন; একটু অন্যরকমভাবে কিন্তু আসলে তো একই ব্যাপার। এখনো আমেরিকায় কালো মানুষের প্রাণের কোনো মূল্য নেই, তাকে যখন খুশি মেরে ফেলা যায়। শুধু তাদের প্রাণটি বাঁচানোর জন্য এখনো সেদেশে আন্দোলন করতে হয়, পথে নেমে বলতে হয়, কালো হলেই তার প্রাণ মূল্যহীন নয়— Black Lives Matter! 

 

৩.

প্রাণ হচ্ছে খুবই মৌলিক একটা বিষয়। এই একবিংশ শতাব্দীতে শুধু সেই প্রাণটি বাঁচানোর জন্য আন্দোলন করতে হয়, সেটি যে কত বড় একটি পরিহাস সেটি কী সবার চোখে পড়েছে? হয়তো সারা পৃথিবীর এই আন্দোলনে পুলিশের কাজকর্মে কিছু নিয়ম-নীতি আসবে, পথে-ঘাটে যেকোনো মানুষ তার স্মার্টফোনে ভিডিও তুলে সেটা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিতে পারে, সেই ভয়ে তারা একটুখানি সংযত হবে, কিন্তু সেটাই কী যথেষ্ট?

আমি ১৮ বছর আমেরিকা ছিলাম। ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনে পিএইচ.ডি করার সময় আমার সাথে কোনো কালো ছাত্র বা ছাত্রী ছিল না। আমার কোনো কালো শিক্ষক ছিল না, কোনো কালো গবেষক ছিল না। ক্যালটেকে পোস্টডক করার সময় সেখানেও কোনো কালো সহকর্মী ছিল না, কালো শিক্ষক ছিল না, কালো গবেষক ছিল না। ক্যালটেকের বাইরে পর্বতারোহী দলের সাথে আমি পাহাড়ে উঠেছি, সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের অসংখ্য মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে কিন্তু কখনো কোনো কালো মানুষের সাথে পরিচয় হয়নি। আমি প্রথম আন্তরিকভাবে কথা বলার মতো একজন কালো মানুষকে পেয়েছি বেল কমিউনিকেশন্স ল্যাবে এসে। সেখানকার অসংখ্য বিজ্ঞানী ও গবেষকদের মাঝে একজন অল্প শিক্ষিত টেকনিশিয়ান ছিল আমার পরিচিত প্রথম কালো মানুষ। ভিয়েতনাম যুদ্ধ ফেরত হাসিখুশি একজন, কাজের ফাঁকে ফাঁকে অবাক হয়ে তার কাছে যুদ্ধের গল্প শুনতাম। (অবিশ্বাস্য গল্প, যেমন পথ হারিয়ে মাঠে ঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে, অভুক্ত এবং ক্লান্ত, একটা গরু পেয়ে তার গলার একটা রগ কেটে কয়েক চুমুক রক্ত খেয়ে গরুটাকে ছেড়ে দিল!) আমি কালো মানুষদের নিয়ে কোনো গবেষণা করিনি তারপরও জোর দিয়ে বলতে পারি আমি বিদেশী একজন মানুষ হয়ে আমেরিকাতে যে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছি একজন কালো মানুষের জন্য সেই সুযোগ-সুবিধাটুকু নেই। আমি হয়তো সব স্তরের সব ধরনের মানুষের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাইনি, তারপরেও এটা তো অস্বীকার করতে পারব না, আমেরিকায় আমার ১৮ বছরের জীবনে আমি পুরোপুরিভাবে আমার সমপর্যায়ের একজনকেও পাইনি।

আমার ধারণা আমেরিকার কালো মানুষদের সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় সমস্যা। আমেরিকার ঐশ্বর্য দূরে থাকুক, কালো মানুষদের একেবারে মৌলিক বিষয়গুলো— শিক্ষা কিংবা স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগটিও নেই। সাদা এলাকায় একজন কালো মানুষ চলে এলে সবার মাথা খারাপ হয়ে যায়, স্কুলে একটা কালো শিশু ভর্তি হলে তাকে কীভাবে সরিয়ে দেয়া যায় সেই ষড়যন্ত্র হতে থাকে। কালোদের বেশির ভাগ পরিবারের পুরুষ মানুষটি জেলে, তার সন্তানেরা বড় হচ্ছে কোনো স্বপ্ন এবং আশা ছাড়া। আমি কোনো বিশেষজ্ঞ নই কিন্তু আমার মনে হয় কালো মানুষদের এখন দরকার বড় একজন নেতার, যিনি তাদের সংগঠিত করে, অনুপ্রাণিত করে, স্বপ্ন দেখিয়ে, শিক্ষিত করে, সম্মানিত করে, আত্মবিশ্বাসী করে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। বারাক ওবামার উপর সবাই অনেক আশা করেছিল, কিন্তু তিনিও মূলধারার আমেরিকানদের মতো চিন্তা করেছেন বলে কালোদের কোনো লাভ হয়নি, তারা আগে যেখানে ছিল এখনো সেখানেই আছে। 

কালোদের জন্য সত্যিকারের একজন নেতা ছিলেন মার্টিন লুথার কিং। তাকে আততায়ীর গুলিতে প্রাণ দিতে হয়েছে। তার মতো এতো বড় মাপের না হলেও আরেকজন নেতা ছিলেন ম্যালকম এক্স, তাকেও আততায়ীর হাতে প্রাণ দিতে হয়েছে। ফ্রেন্ড হ্যাম্পটন নামে আরও একজন কালোদের সত্যিকারের নেতা হওয়ার সম্ভাবনা দেখিয়েছিল, তাকেও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এখন প্রমাণিত হয়েছে তাকে হত্যা করেছিল এফ.বি.আই! ঘটনাগুলো কী বিচ্ছিন্ন নাকি তার মাঝে কোনো যোগসূত্র আছে? কে সেই প্রশ্নের উত্তর দেবে?

পৃথিবীর অনেকের কাছে আমেরিকা হচ্ছে স্বপ্নের দেশ। ক্রীতদাস হিসেবে নিয়ে আসা কালোদের কাছে সেটি একসময় শুধু দুঃস্বপ্নের দেশ ছিল, এতোদিন পরেও সেটি এখনো কি দুঃস্বপ্নের দেশই হয়ে থাকবে?

Chairman Of The Board: Syed Shamsul Alam

Editor in Chief: Tahsen Rashed Shaon

SHOKHOBOR24.COM

2994 DANFORTH AVE. | SUITE# 201

TORONTO. ON. M4C 1M7. CANADA

COPYRIGHT © 2019. ALL RIGHTS RESERVED. BY Shukhobor24.com About Us Privecy & Policy Terms & Condition