প্রতিবছর ‘মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার’ বিশ্বব্যাপী পালিত হয় মা দিবস। সেই ধারাবাহিকতায় এ বছর ১০ মে পালিত হচ্ছে মায়েদের জন্য বিশেষ এই দিন। দিবসটি এমনি এমনি যে পালিত হয় তা কিন্তু না। এর রয়েছে একটি ঐতিহাসিক সত্য।
বিশ্বে মা দিবসের সূচনা হয় ১৯০৮ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার এক স্কুলশিক্ষিকা অ্যানা জারভিস সেখানকার পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা দেখে মর্মাহত হয়ে মায়েদের জন্য বিশেষ দিন পালনের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টির কথা ভেবেছিলেন। তার সেই ভাবনা বাস্তবায়নের আগেই ১৯০৫ সালের ৯ মে তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর পর মেয়ে অ্যানা এম জারভিস মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণের উদ্দেশ্যে কাজ শুরু করেন।
বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে ১৯০৮ সালে তার মা পশ্চিম ভার্জিনিয়ার গ্রাফটনে যে গির্জায় উপাসনা করতেন, সেখানে সব মাকে নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মা দিবসের সূচনা করেন অ্যানা। ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসনের অনুমোদন পেলে আনুষ্ঠানিকভাবে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে মায়েদের জন্য উৎসর্গ করে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে দিনটিকে মা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে সারা বিশ্ব।
প্রতি বছর দিনটি এলেই সন্তানেরা মায়েদের কৃতজ্ঞতা জানায়। কেউ কেউ মাকে সাথে নিয়ে কেক কাটে। মাকে নিয়ে ঘুরতে বের হয় বাইরে। মায়ের জন্যে কেউ কেউ বিশেষ শপিং করে। রেসটুরেন্টে মায়ের সাথে বসে ভালো মন্দ খাবার খায়। অনেকে মাকে সারপ্রাইজ দেয় অভিনব উপায়ে। এসবই সম্ভব যদি মা কাছে থাকেন, অথবা মায়ের কাছে থাকে কেউ। তবে যারা মাকে ফেলে কারণে অকারণে দূরে থাকে তাদের উদযাপন হয় ভিন্ন। কেউ কেউ দিনটিতে দূরে থাকা মাকে ফোন করে কথা বলে। কেউ কেউ দূরে থাকা মাকে চমকে দিয়ে নিজেই গিয়ে হাজির হয় মায়ের কাছে অথবা পার্সেলে পাঠিয়ে দেয় মায়ের উপহার। এমন নানা উপায়ে মায়ের জন্যে বিশেষ দিনটিকে উদযাপিত হয় বিশ্ব জুড়ে। যদিও স্রোতের বিপরীতে এমন সন্তানও আছে যারা মায়ের খোঁজটিও রাখার সময় পায় না। আদতে তারা হয় অভাগা নয়তো পাঁজির পা ঝাড়া। এমনদের কথা এই দিনে না বলাই ভালো।
এ বছর দিনটি ভিন্ন। সবার মাঝে এক ধরণের শঙ্কা আর অস্থিরতা। কোভিট-১৯ এর সংক্রমন থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সকলেরই নিরাপদে থাকার চেষ্টা। তবুও ভার্চূয়াল দুনিয়ার বাসিন্দারা যেনো ঘরবসতি গড়ে তুলেছেন অর্ন্তজালে। প্রতিনিয়ত দিন দুনিয়ার খবর, তাদের চারপাশের পরিস্থিতি, পর্যবেক্ষণ, মতামত, আড্ডা প্রভৃতি যেনো নতুন এই দুনিয়াকে মাতিয়ে রেখেছে। যেহেতু মা দিবসে অনেকেই মায়ের ছায়া থেকে দূরে আছেন তাই এবারের মা দিবস পালিত হচ্ছে ভার্চূয়াল জগতেই। সঙ্গত কারণে গত দুই দিন ধরে ভার্চূয়াল দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে মায়েদের মুখে। দেখতে অবশ্য দারুণ লাগছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, ইন্সট্রাগ্রামসহ প্রায় সব ধরণের সাইটেই মায়ের মুখের ছবি। এ যেনো মায়ের মুখ আঁকা ভালোবাসার ক্যানভাস।
তবে কি করোনা পরবর্তি পরিস্থিতির পৃথিবীর এ এক প্রতিচ্ছবি! অনেকেই বলছেন এই সংকট কাটিয়ে উঠতে উঠতে পৃথিবীর অনেক কিছুই বদলে যাবে। স্যোসাল ডিস্টেনসিং বাড়বে, মানুষে মানুষে যে যোগাযোগ তা বদলে যাবে। দুরুত্ব তৈরি হবে সম্পর্কেও। নিজে নিজে বাচাঁর চেষ্টা, অন্যের থেকে দূরে থাকা, নিজের মতো করে পৃথিবী সাজানো; মোদ্দাকথা বিশেষ এক আত্মকেন্দ্রিক দুনিয়ার শুরু হয়তো এখান থেকেই। শুধু তাই-ই নয়, যে কারণে দিবসটির সূচনা হয়েছিল সেই কারণটি আরও অনেক নতুন সংকটের কারণ হয়ে দাড়াবে। এমনিতেই সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীতে পরিবার ভেঙ্গে যাচ্ছে। হৃদতা কমে যাচ্ছে পৃথিবীর মানুষের মাঝে। ফলে দুরুত্ব তৈরি হয়েছে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে। এখন এমন ঘটনাও বিরল নয় যে দাদা চেনে না নাতিকে। আবার সন্তান জানে না তার বংশের পরিচয়। আপাত দৃষ্টিতে সেসব স্বাভাবিক মনে হলেও, এ ধরণের নানা কারণে সামাজিক বন্ধনগুলো নড়বড়ে হয়ে পড়ছে। আত্মকেন্দ্রিক দুনিয়ার ব্যপ্তি বাড়ছে। মানুষের মনে মায়া মমতা কমে যাচ্ছে, সে হয়ে পড়ছে অনুভূতিহীন জড় পর্দাথ। এতে করে সমাজে বাড়ছে প্রতিহিংসা, হানাহানী। রাষ্ট্র হয়ে উঠছে অসহিষ্ণু। ফলে বাড়ছে অপরাধ প্রবনতাও। আদতে আজও কিছুটা হলেও সমাজে মানুষের মাঝে পারস্পরিক সম্পর্ক টিকে আছে বলেই মানব জাতিকে বলা হয় সৃষ্টির সেরা জীব।
সঙ্গগত কারণেই মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, দিনে দিনে মায়ের আদর, স্নেহের স্থানে শুধু মুখচ্ছবিটাই সত্য হয়ে যাবে নাতো? মমতা, ভালোবাসা মাখানো মায়ের স্পর্শ্ব অথবা মায়ের আঁচল তলে সন্তানের আশ্রয় খোঁজার কি কেউ থাকবে না? মাকে জড়িয়ে ধরে সন্তানের ভালোবাসার দিন কি তবে ফুরালো। তাহলে কি মনের মণিকোঠায় মায়ের যে রূপ তাকি মলিন হবে পরের দিনগুলোতে।
এ সবই সংকটকালের ভাবনা। এমনটা যেনো কোনো দিন না আসে, যেদিন সন্তান তার মাকে স্মরণ করবে শুধুই ভার্চূয়াল দুনিয়ায়। মা থাকুক সবার হৃদয়ে, মনের গহীনে। মা থাকুন অঙ্গে জড়িয়ে। মায়ের মুখ যেনো কোনোদিন না ভুলে সন্তানেরা। সব সময় আমাদের মনের বীণায় বাজুক- “মা তোর বদনখানি মলিন হলে আমি নয়ন জলে ভাসি”। ভালোবাসা নিও আমার মা, তোমার মা, সকল মা। আর বুকের মাঝে জেগে থাকুক প্রত্যয়- শুধু মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার নয়, বছরের প্রতিটি দিন মায়েদের হোক। জয় হোক মাতৃত্বের, মায়ের ভালোবাসার।
মায়েদের জয় হোক একালে, আগামীতেও।
Chairman Of The Board: Syed Shamsul Alam
Editor in Chief: Tahsen Rashed Shaon
SHOKHOBOR24.COM
2994 DANFORTH AVE. | SUITE# 201
TORONTO. ON. M4C 1M7. CANADA
COPYRIGHT © 2019. ALL RIGHTS RESERVED. BY Shukhobor24.com About Us Privecy & Policy Terms & Condition