বিদায় জানাবেন ওয়ানডে ক্রিকেটকে, আগে থেকেই তা জানিয়ে রেখেছিলেন। সেই ঘোষণা শুনে ক্রিকেট অন্যতম বরপূত্র লাথিস মালিঙ্গাকে বিদায় জানাতে কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে নেমেছিল ক্রিকেটপ্রেমীদের ঢল। সবার মন ভরিয়ে দিয়েই শেষদিনটি স্মরণীয় করে রাখলেন তিনি।
ব্যাট হাতে ৬ বলে ৬ স্কোর করলেও নতুন বল হাতে নিয়েই দুর্দান্ত ইয়র্কারে বোল্ড করেছেন তামিম ইকবালকে। আরেকটি অসাধারণ ইয়র্কারের প্রতিরোধের কোনো ভাষা খুঁজে পাননি সৌম্য সরকার। নিজের শেষ স্পেলে ফিরে আরেকটি উইকেট নিয়ে ইতি টেনেছেন নিজের ক্যারিয়ার ও ম্যাচের। তার দল জিতেছে ৯১ রানের বড় ব্যবধানে।
১৫ বছর আগে এই জুলাই মাসেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছিলেন মালিঙ্গা। ২০০৪ সালের ১ জুলাই টেস্ট অভিষেক অস্ট্রেলিয়ায়। ১৭ জুলাই ওয়ানডে অভিষেক ডারউইনে। শুরুতে নজর কেড়েছিলেন তার ব্যতিক্রমী স্লিঙ্গিং অ্যাকশন দিয়ে। সঙ্গে ছিল গতি, বল স্কিড করে নাড়িয়ে দিত ব্যাটসম্যানদের।
ক্রমে তার বোলিংয়ে যোগ হয় দারুণ সব স্কিল। যার মধ্যে দুটি ছিল বলা চলে মারণান্ত্র, বিধ্বংসী ইয়র্কার ও নিখুঁত স্লোয়ার।
নতুন বল বা পুরোনো, ইনিংসের শুরুতে মাঝে বা শেষে, উইকেটের জন্য তার দিকে তাকিয়ে থাকতেন অধিনায়ক। তিনি নিরাশ করেছেন কমই।
স্কিলফুল বোলিংয়ে এগিয়ে চলার এই পরিক্রমায়ই ধরা দিয়েছে দারুণ সব কীর্তি। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, তিনটি ওয়ানডে হ্যাটট্রিক। ওয়ানডে ইতিহাসে দুটির বেশি হ্যাটট্রিক নেই আর কারও। সেই তিন হ্যাটট্রিকের প্রথমটিতে উইকেট নিয়েছিলেন টানা চার বলে। ওয়ানডে ইতিহাসে তেমন কিছু নজির নেই এখনও।
ক্যারিয়ারের শেষ ওয়ানডে শুরু করেছিলেন ওয়ানডে ইতিহাসের দশ সফলতম বোলার হিসেবে। শেষ ম্যাচের ৩ উইকেটে ছাড়িয়ে গেছেন অনীল কুম্বলের ৩৩৭ উইকেট। ক্যারিয়ার শেষ করেছেন ৩৩৮ উইকেট নিয়ে, নবম সফলতম ওয়ানডে বোলার হিসেবে। শ্রীলঙ্কানদের মধ্যে তার চেয়ে বেশি ওয়ানডে উইকেট আছে কেবল মুত্তিয়া মুরালিধরন (৫৩৪) ও চামিন্দা ভাসের (৪০০)।
ম্যাচ জেতানোর ক্ষেত্রে কতটা অবদান রাখতেন, সেটা ফুটে ওঠে একটি তথ্যে। দলের জয়ের ম্যাচে ২১৫টি উইকেট নিয়েছেন ২৪.০৬ স্ট্রাইক রেটে। দলের জয়ের ম্যাচে কমপক্ষে দেড়শ উইকেট নেওয়া বোলারদের মধ্যে তার স্ট্রাইক রেটই ইতিহাসের সেরা।
২০০৭ ও ২০১১, টানা দুটি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার ফাইনালে খেলায় তার ছিল বড় অবদান। ৫৬ উইকেট নিয়ে তিনি বিশ্বকাপ ইতিহাসে তৃতীয় সফলতম বোলার।
অ্যাকশনের কারণে কখনও তার নাম হয়ে গেছে ‘স্লিঙ্গা মালিঙ্গা’, দুর্দান্ত সব ইয়র্কারের জন্য কখনও বলা হয়েছে ‘ইয়র্কার কিং’। সবসময় পাদপ্রদীপের আলোয় থেকেছে তার চুলের স্টাইলও। সব মিলিয়ে তিনি ছিলেন জনপ্রিয় তারকা।
টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন অনেক আগেই। চোটের কারণে টেস্টে কখনোই সেভাবে টানা খেলতে পারেননি। ৬ বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারে খেলেছেন তাই কেবল ৩০ ম্যাচ, সবশেষটি সেই ২০১০ সালে।
ওয়ানডেকে বিদায় জানালেও টি-টোয়েন্টি খেলে যেতে চান। এখন থেকে অস্ট্রেলিয়ায় থিতু হবেন বলে খবর শোনা যাচ্ছে। সেখানেই অনুষ্ঠেয় ২০২০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলতে চান শ্রীলঙ্কার
মালিঙ্গা নিজেও জানেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত দৃশ্যপটে নাও থাকতে পারেন। জানে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটও। তাই এই ম্যাচ দিয়েই সেরে নেওয়া হলো বিদায়ের সব আয়োজন। গ্যালারি ভরা দর্শক তো ছিলই, মালিঙ্গার পরিবার ছিল মাঠে। ছিলেন বর্তমান-সাবেক অনেক ক্রিকেটার থেকে শুরু করে শ্রীলঙ্কার অনেক শীর্ষ রাষ্ট্রীয় ব্যক্তিত্বও।
ম্যাচ শেষে তাকে সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হলো। মাঠে বিদায়ী মুহূর্ত উপভোগ করলেন স্ত্রী-পরিবারের সঙ্গে। পরে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে লম্বা বক্তৃতা দিলেন সিংহলী ভাষায়। দর্শকেরা তালি দিয়ে, গর্জন করে জানাল তাদের ভালোবাসা।
বক্তৃতার এক পর্যায়ে বললেন চম্পাকা রামানায়েকের কথা। ডেকে নিলেন তাকে। সাবেক এই শ্রীলঙ্কান পেসার এ দিন মাঠে ছিলেন বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত বোলিং কোচ হিসেবে। তবে মালিঙ্গার কাছে তার পরিচয় ‘গুরু’।
১৭ বছর বয়স পর্যন্তও ক্রিকেট বলে খেলেননি মালিঙ্গা। কিন্তু প্রতিভা খুঁজতে সে সময় শ্রীলঙ্কার নানা প্রান্তে ঘুরে বেড়ানো রামানায়েকে পাকা জহুরির মতোই ভুল করেননি সোনা চিনতে। মালিঙ্গাকে দেখে তিনি তুলে আনেন। সহজাত অ্যাকশন ও ধরন বদলে না দিয়ে ঘষে-মেজে তৈরি করে দেন বড় মঞ্চের জন্য। ক্যারিয়ার জুড়ে অসংখ্যবার রামানায়েকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন মালিঙ্গা। শেষ ওয়ানডের পর গুরুর হাতে তিনি তুলে দিলেন কৃতজ্ঞতার একটি স্মারক, ফ্রেমে বাঁধাই করা তার জার্সি।
বোলিং ইনিংসের শুরুতে মাঠে নামার সময় তাকে ‘গার্ড অব অনার’ দিয়েছিল সতীর্থরা। ম্যাচ শেষে মাঠ ছাড়ার সময় একই সম্মান দিল প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ।
সব মিলিয়ে তার বিদায়টা হলো স্মরণীয়। যেমন বিদায় ছিল তার প্রাপ্য। তিনি পেয়েছেন, আদায় করে নিয়েছেন!
Chairman Of The Board: Syed Shamsul Alam
Editor in Chief: Tahsen Rashed Shaon
SHOKHOBOR24.COM
2994 DANFORTH AVE. | SUITE# 201
TORONTO. ON. M4C 1M7. CANADA
COPYRIGHT © 2019. ALL RIGHTS RESERVED. BY Shukhobor24.com About Us Privecy & Policy Terms & Condition