করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বিপর্যস্ত মানবজাতি এখন উন্মুখ হয়ে চেয়ে আছে একটা সফল ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধকের অপেক্ষায়। অপেক্ষার শেষ কখন হবে জানা নেই। সফল টিকা আবিস্কারের সুখবরের সংবাদ পেতে আমরা অপেক্ষা করছি। তারই মধ্যে গণমাধ্যমে খবর এলো করোনাভাইরাস হানা দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রীড়াঙ্গনে।
ক্রিকেট বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা, মাশরাফি বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক সফল নেতৃত্বের নাম। নড়াইল এক্সপ্রেস মাশরাফি বিন মর্তুজার এর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্রীড়াঙ্গনে অনেক স্মরণীয় মুহূর্ত এবং জয়ের ইতিহাস রয়েছে। ক্রিকেট জীবনে ত্যাগী, পরিশ্রমী অধিনায়কের নাম মাশরাফি, কারণ তার খেলোয়াড়ি জীবনে বারবার অস্ত্রোপচার হয়েছে। তবুও এসব প্রতিবন্ধকতা তাকে থামাতে পারেনি। এমনকি চিকিৎসকদেরকে চ্যালেঞ্জ করে মাঠে খেলা চালিয়ে গিয়েছেন। কোন কোন সময় পেইন কিলার ইনজেকশন নিয়ে তিনি খেলেছেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটে তামিমের ভূমিকাও রয়েছে অনেক।
তামিম ইকবালের বড় ভাই সাবেক ক্রিকেটার নাফিস ইকবাল কোভিড-১৯ পজিটিভ হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল আরও আগেই। এবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বাংলাদেশের সফলতম ওয়ানডে প্রিয় অধিনায়ক ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা। কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত মাশরাফি। কিছুক্ষণ পরে শুনতে পারি আমাদের বর্তমান অধিনায়ক তামিম ইকবাল এবং নাজমুল ইসলাম অপু কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত, যা আমাদের ক্রিকেটপ্রেমী মানুষকে একটু চিন্তিত করছে।
বাংলাদেশের বর্তমান জাতীয় সংসদ সদসদের মধ্যে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় আমার চোখে এক ব্যতক্রমী সাংসদ মাশরাফি বিন মর্তুজা। করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই বেশ সক্রিয় ছিলেন মাশরাফি। তিনি তার নির্বাচনী এলাকা নড়াইল-২ আসনে দুস্থ-অসহায়দের পাশে অর্থ সহায়তা ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করেছেন। লাখো মানুষকে ত্রাণ বিতরণ, নিজ অর্থায়ন ও সরকারি খরচে রোগী ও ডাক্তারদের সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এক ও অনন্য উদাহরণের নাম মাশরাফি। নিজ হাতে ১৭ বছর ব্যবহৃত ব্রেসলেট বিক্রির ৪২ লাখ টাকা গরীবদের ত্রাণ তহবিলে দান, নড়াইলে রোগীদের চিকিৎসার জন্য ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা সেবা, ডক্টরস সেফটি পয়েন্ট, জীবাণুনাশক কক্ষ স্থাপনসহ নানা ধরনের যুগোপযোগী কল্যানকর দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নিয়েছেন প্রিয় মানুষটি। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছি আমরা। সারাদেশ যখন স্থবির তখন অসহায়দের পাশে ছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। নিজের নির্বাচনী এলাকায় মানুষের স্বাস্থ্য সেবার জন্য সব উদ্যোগ নিয়েছেন।
এছাড়াও মাশরাফি বিন মতুর্জার নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন নড়াইল সদর হাসপাতাল গেটে স্থাপন হয়েছে ডিজইনফেক্টর চেম্বার। হাসপাতালে প্রবেশের মুখে এই চেম্বারের মধ্যে দিয়ে কেউ প্রবেশ করলে তার শরীরে জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটানো হবে। স্টিম বা বাষ্প ছিটানো এ স্প্রে জীবাণু ধ্বংসের একটি কার্যকর পদ্ধতি, যা ছিটালে শরীর ভিজে যাবে না আবার জীবাণুও মরে যাবে, যা প্রশংসার দাবি রাখে। চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, রোগী, সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া সাংবাদিক, অ্যাম্বুলেন্স চালক, হাসপাতালে প্রবেশ ও প্রস্থানকারী সকলের জন্য এই পদ্ধতি বেশ কার্যকর। সকলে জীবাণুর হাত থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারবেন। জীবাণুনাশের এমন আধুনিক ও ব্যয়বহুল পদ্ধতি নড়াইলে চালু করায় মাশরাফিকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন সবাই। অনন্য এবং এক ভিন্ন ধরনের উদ্যোগের জন্য নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় সাধারণ নাগরিক।
নড়াইলে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহে অভিজ্ঞ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) পদের জন্য যথাসংখ্যক জনবল ছিল না। ফলে গোটা জেলায় কিছুদিন প্রয়োজন অনুযায়ী নমুনা সংগ্রহ করা অসম্ভব ছিল। এ সংকটে মাশরাফি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এবং নিয়েছেন প্রয়োজনীয় উদ্যোগ। কিছুদিন আগেও করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহে ভিন্নধর্মী এই উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। যেমন মাশরাফির প্রতিষ্ঠিত ‘নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন’- এর আর্থিক সহায়তায় নড়াইল জেলার তিন উপজেলায় ২ জন করে মোট ৬ টেকনিশিয়ানকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত তিন মাসে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি। জনকল্যাণে নিবেদিত এই একনিষ্ঠ সমাজসেবক, বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রাণ আজ নিজেই কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত। দুই অধিনায়কের করোনাভাইরাসের আক্রান্তের খবর শুনে খুবই বিস্মিত হয়েছি।
আশা করি খুব দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবেন তারা। সবাইকে মাশারফি ও তামিমসহ সকল নাগরিকের সুস্থতার জন্য দোয়া করতে বিনীত অনুরোধ করছি। কারণ সকল মানুষের জন্য দ্রুত রোগমুক্তি কামনা করা আমাদের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব।
মাশরাফি নেতা হিসেবে ছিলেন ব্যতিক্রমী, কারণ কোন খেলোয়াড় বিপদে পড়লে তাকে সহযোগিতা করেছেন, বিপদের সময় আগলে ধরেছেন, যেমন তামিম, তাসকিন, মোসাদ্দেক, মাহমুদুল্লাহ প্রত্যেকের দু:সময়ে মাশরাফি তাদের পাশে ছিলেন। অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফির যে উদারতা ছিল, তা এখন জনপ্রতিনিধি হিসেবে মানবতার কাজে লাগাচ্ছেন বলে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রশংসাও পেয়েছেন।
মাশরাফি ছিলেন নির্লোভ ও নির্মোহ; জাতীয় সংসদের সদস্য হয়েও লাল পাসপোর্ট, বাড়ি ও গাড়ি কিছুই নেননি। এমনকি নিজেকে সংসদ সদস্য পরিচয়ে অহংকার করার কোনও অনুভূতি বা চিহ্নও প্রকাশ করেননি। এরকম উদাহরণসহ কয়জন জনপ্রতিনিধি বাংলাদেশে আছেন তা বলাই বাহুল্য! তাই সব খেলোয়াড় বা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে মাশরাফিকে অনুকরণ করে তাদের জীবনে বাস্তবায়ন করা উচিত। পরিশেষে মাশরাফি, তামিমসহ করোনা আক্রান্ত সবার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।
লেখক: মো. শফিকুল ইসলাম- পিএইচডি ফেলো, জংনান ইউনির্ভাসিটি অব ইকোনমিকস অ্যান্ড ল, উহান, চীন। শিক্ষক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।
Chairman Of The Board: Syed Shamsul Alam
Editor in Chief: Tahsen Rashed Shaon
SHOKHOBOR24.COM
2994 DANFORTH AVE. | SUITE# 201
TORONTO. ON. M4C 1M7. CANADA
COPYRIGHT © 2019. ALL RIGHTS RESERVED. BY Shukhobor24.com About Us Privecy & Policy Terms & Condition