এনটিভিতে আলম, আমি আর মোস্তফা কামাল সৈয়দ প্রিভিউ কমিটির সদস্য ছিলাম। তাই জীবনে যত নাটক দেখেছি তিনজন বসে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা সে এক বিশ্ব রেকর্ড হলেও হতে পারে। ২০০৩ সালের নভেম্বরে আলমের হাত ধরে আমি অনুষ্ঠান বিভাগে যোগদান করবার পর মোস্তফা কামাল সৈয়দের মতো একজন কিংবদন্তী মানুষের সঙ্গে সরাসরি কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। সে সময় আমরা তিনজন মানুষ এনটিভির সাততলার ছোট্ট দুটি রুমে পাশাপাশি থাকতাম। পাশাপাশি থাকার বিষয়টা পরবর্তী তেরটা বছরেও ছেদ পড়েনি। যে সময়ের কথা বলতে লেখাটি লিখছি, তখন সবে মাত্র একুশে টেলিভিশন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আউটসোর্সের নাটকগুলোর বেশির ভাগ জমা পড়তো এনটিভিতে। সাথে কিছু নন ফিকশনও। আমি, আলম, কামাল ভাই বিকাল তিনটার পর যে কোন সুবিধাজনক সময়ে প্রিভিউতে বসতাম। আমাদের সে সময়ে ভিএইচ এস ক্যাসেটে নাটক জমা হতো। আর সম্প্রচারের জন্য বেটাকম টেপে। তো আমি প্রিভিউতে ভিসিপি চালিয়ে দিতাম। তারপর তিনজন দরজা বন্ধ করে তিনখানা চেয়ারে অখন্ড মনোযোগে নাটক কিংবা টেলিফিল্মের কিংবা নন ফিকশনের নির্মাণ, গল্প, আবহসঙ্গীত, অভিনয়শিল্পীদের যথাযথ অভিনয়মান, সর্বোপরি নাটকটিতে নান্দনিকতার মিশেলে দর্শকদের জন্য সমাজের জন্য পরিবারের জন্য হতাশাগ্রস্ত মানুষের জন্য কোন পাজেটিভ ডিরেকশন বা পজেটিভ বক্তব্য আছে কিনা তা নিশ্চিত হয়ে তার ভাগ্য নির্ধারন করতাম। আমাদের তিনজনের সঙ্গে শুরুতে কিছুদিন সংযুক্ত হয়েছিলেন এনটিভির সে সময়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনায়েতুর রহমানের স্ত্রী লাবণী ভাবী, আর সম্মানিত চেয়ারম্যান মহোদয়ের স্ত্রী এনটিভির পরিচালক লিটা ভাবী। আমাদের ভাবতে আজ নস্টালজিক লাগছে যে তাঁদের দু’জনও কোনদিন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকার পরও কখনও আমাদের প্রিভিউ বোর্ডকে প্রভাবিত করেননি। কারণ তাঁরাও চেয়েছিলেন মোস্তফা কামাল সৈয়দের মতো একজন টেলিভিশন লেজেন্ডের সাথে বসে যদি কিছু অনুধাবন বা শেখার সুযোগ পাওয়া যায়।
কামাল ভাই, আমি, আলম আর ভাবীদ্বয় মিলে যে টিমটি ছিলাম কোয়ালিটির বিষয়ে আপোষহীন এবং সে জন্য আমরা এনটিভির নাটককে বিশেষ করে দর্শকের কাছে বিশেষ সম্মানজনক একটি স্থানে নিয়ে যাবার কৃতিত্বটুকু নিতেই চাই। কারণ সে জায়গাটিতে অনড় থাকবার মন্ত্রটা আমাদের মাথায় ঢুকিয়েছিলেন মোস্তফা কামাল সৈয়দ। যিনি ক্রমাগত কাগজে কলমে মুখে অভিব্যাক্তিতে নানা পন্থায় বোঝাতেন কেন ঐ নাটকের এ দৃশ্যটি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, কেন ওরকম গুরুত্বপূর্ন দু’জন চরিত্রের টু শটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিকোয়েন্সটির মধ্যে ঝট করে কেটে টুকরো টুকরো করে দৃশ্যটার আবেদন ন্ষ্ট করে ফেললো, কেন ওরকম সফট একটি দৃশ্যে ওরকম অযাচিত আবেদনহীন আবহসঙ্গীত বাজলো কেন ওরকম উচ্চস্বরে চেঁচামেচি করলো, কেন এরকম বসে বসে দৃশ্যটার পুরোটা দায়সারা ভাবে অভিনয় করে দৃশ্যটার বারোটা বাজানো হলো, কেন ব্লকিংটা ঠিকমতো করে দৃশ্যটা টেক করলো না- ফোনে যোগাযোগ করে সে সব নির্মাতার সাথে ওগুলো নিয়ে সে কি বিশদ আলোচনা যেমন করে শিক্ষক ছাত্রকে একান্তে বোঝান তেমনি করে বোঝাতে সক্ষম হতেন। এভাবে কতবার যে কত নাটক পুনর্বার নির্মাতাদের কষ্ট করে রিশুট কিংবা এডিট করে কিংবা ডাবিং করে শব্দ ঠিক করে আবার প্রিভিউতে জমা দিতে হয়েছে তারপর আবার প্রিভিউ হয়েছে তারপর যদি চূড়ান্ত বিচারে মনে হয়েছে যে এ নাটক সম্প্রচার উপযোগি তবেই তা নির্বাচন করতাম। তার জন্য মাঝে মাঝে কত নির্মাতা ও প্রযোজক যে মনে মনে কষ্ট পেতেন আমরা কি বুঝতাম না। কিন্তু কামাল ভাইয়ের অবজারভেশনের উপরে কোন কথা চলতো না। তাই তাঁরা নাটকগুলো কষ্ট হলেও অবজারভেশনগুলো অক্ষরে অক্ষরে মেনে ঠিক করে নিয়ে আসতেন।
এরপর সে নাটক সম্প্রচারের পর যখন দর্শক আদৃত হতো তখন নির্মাতাদের মনের কষ্ট দূর তো হতোই সে সঙ্গে আমাদের এ টিমটার প্রতি তাঁদের আস্থা বহুগুণে বিস্তার লাভ করতো। সে আস্থা বিনির্মাণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন মোস্তফা কামাল সৈয়দ। আর আমরা ছিলাম তাঁর গুণমুগ্ধ একনিষ্ঠ ছাত্র। আমাদের শিক্ষককে বিদায় জানালাম। বিদায় কামাল ভাই। জানি না কতটা দূরে চলে গেছেন, ঠিক অনুমান করতে পারছি না। তবে আমি কিন্তু আপনাকে ঠিকই দেখতে পাচ্ছি। শুনতেও পাচ্ছি- ঐ যে আপনি বলছেন, “না না এ সংলাপ কোন ভাবেই দেয়া যাবে না অনএয়ারে। এটা ফ্যামিলি মিডিয়া। এটা ওদেরকে কেটে ঠিক করে দিতে বলেন।”
সব ঠিক হয়ে যাবে কামাল ভাই। শুধু যদি আপনি আমাদের হৃদয় থেকে মনন থেকে মগজ থেকে স্মৃতি থেকে অভিমান করে আরও দূরে মিলিয়ে না যান। আমাদের ভুল, আমাদের অপারগতা আপনি ক্ষমা করবেন। আমরা আপনাকে ভুলবো না। কেউ না। কখনো না।
Chairman Of The Board: Syed Shamsul Alam
Editor in Chief: Tahsen Rashed Shaon
SHOKHOBOR24.COM
2994 DANFORTH AVE. | SUITE# 201
TORONTO. ON. M4C 1M7. CANADA
COPYRIGHT © 2019. ALL RIGHTS RESERVED. BY Shukhobor24.com About Us Privecy & Policy Terms & Condition