নির্মাতার বয়ানে “গেরিলা চলচ্চিত্রের একযুগ”

প্রকাশঃ ২৩-০৪-১৪ ৫:৪৪:১১ এএম
আপডেটঃ ২০২৪-১২-২১ ১১:৫১:১০ এএম
লেখকঃ নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু
নির্মাতার বয়ানে “গেরিলা চলচ্চিত্রের একযুগ”
গ্রাফিক ডিজাইন: Ayan

শুভ নববর্ষ।

আজ থেকে ১২ বছর পূর্বে নববর্ষের দিন ১ বৈশাখ ১৪১৮ বঙ্গাব্দ,১৪ এপ্রিল ২০১১ মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র ‘গেরিলা’ মুক্তি পেয়েছিলো দেশব্যপী। আজ গেরিলা চলচ্চিত্রের যুগপূর্তি।এই একযুগে গেরিলা চলচ্চিত্র বিশেষ দিনে সারা দেশে খোলামাঠ, স্টেডিয়াম, মিলনায়তন,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সিনেমা হল টেলিভিশন ও ইউটিউবে লক্ষলক্ষ দেশবাসী দেখে। বিশেষ দিন ছাড়াও প্রায় প্রতিদিন গেরিলা ছবির প্রদর্শনী চলছে কোথাও না কোথাও। ছবিটির জনপ্রিয়তা সম্ভবত ‘৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপকতার ও ভয়াবহতা, পাকিস্তানী সৈন্যদের গণহত্য- নারী ধর্ষণ,লুণ্ঠন-অগ্নিসংযোগ, মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের বীরোচিত যুদ্ধদৃশ্যের রূপালী পর্দায় বাস্তব রূপায়নেব কারণে। বাঙালির মহাকাব্যিক যুদ্ধের একটা চিত্রভাষ্য হয়তো মানুষের মন ছুঁয়ে গেছে।

জনপ্রিয়তা নিশ্চয়ই শিল্পের মাপকাঠি নয়। কিন্তু কোটি মানুষ যখন ছবি দেখতে দেখতে জয় বাংলা ধ্বনিতে মিলনায়তন অথবা মাঠ প্রকম্পিত করে তখন মনে হয় ছবিটা জরুরি ছবি। শিল্প বিচারে নয় একটি জাতির আত্মত্যাগ ও গৌরবগাঁথা জনমানসে প্রোথিত করে জাতিসত্ত্বা বিকাশে ভূমিকা রাখার কারণে গেরিলা জরুরি ছবি।আর তাই আমরা দেখি গেরিলা মুক্তির কিয়ৎকাল পরে নতুন প্রজন্মের যুবকরা গণজাগরণ মন্চে ৭১ এর গেরিলার মত সাহসী হয়ে ওঠে।৭১’র মত জয় বাংলা ও জয়বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে সারাদেশ মেতে ওঠে।আমার অভিজ্ঞতায় এ একেবারে নতুন ! যখন একযুগ পূর্বে গেরিলা মুক্তির দিন ও পরবর্তীকালে যখন শতশত দর্শক ছবি দেখা শেষে জয় বাংলা বলতে বলতে হল থেকে বেরিয়ে আসছে,অথবা মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়ের দৃশ্যে দর্শকের জয়্ধ্বনিতে চলচ্চিত্রের ধ্বনি চাপা পড়ে হারিয়ে যায়,এভাবে শিল্প ও দর্শকের আবেগ মিলেমিশে এক ভিন্ন রসায়ণ তৈরী আমার অভিজ্ঞতায় একেবারে নতুন।

এ সাফল্য আমার একার নয় । এ সাফল্য এসেছে গেরিলার সকল কলা-কুশলীদের শ্রম ও মেধায়। তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা।

দুই বছরের দিবা রাত্রি নিদ্রাহীন,শিল্পের জটিল পথে ঘাম ঝড়িয়েছেন হাজারো শিল্পী কলা কুশলী ও শহর ও গ্রামের সাধারণ মানুষ।রেলগাড়ির দৃশ্যের জন্য ১৯৬০ এর দশকের পরিত্যক্ত বগি ও ইন্জিন মেরামত ও সচল করে পাকিস্তানী রেলওয়ের রূপ দিতে দু’মাসেরও অধিক সময় রেলকর্মকর্তা- কর্মচারী ও আমাদের শিল্প নির্দেশনা বিভাগের প্রাণান্তকর পরিশ্রম।রেলওয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা মন্জুর ভাইয়ের গেরিলা দৃশ্য শ্যুটের সর্বোত্তম সহযোগিতা মনে থাকবে।শুটিং এর সময় একাধিক দিন সকল রেল সময়সূচি বিলম্ব করে আমাদের কাজ সম্পন্ন করার জন্য সাধারণ যাত্রীদের অবিশ্বাস্য সহযোগিতা ভোলার মত নয়।বিলম্বের জন্য বিরক্ত হওয়ার পরিবর্তে আমাদের রেলগাড়ি দেখলে সাধারণ যাত্রীরা গেরিলা গেরিলা বলে চিৎকার করে ও তালি দিয়ে আমাদের স্বাগত জানাতো অভিনন্দিত করতো।মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মানুষের এ ভালোবাসা ও আবেগ আজ একযুগ পরেও আমাকে অশ্রুসজল করে।পার্বতীপর, দিনাজপুর, রংপুর, তিস্তা ও কাউনিয়ার রেল স্টেশনের অপূর্ব স্থাপত্য ও প্রকৃতি যেমন গেরিলার চিত্রভাষ্যে স্থান পেয়ে গেছে তেমনি অত্র এলাকার সাধারণ মানুষের নির্স্বার্থ ভালোবাসা আমদের মানস পটে চিরস্থায়ী আসনকরে নিয়েছে।

যুদ্ধ দৃশ্য বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চৌকষ পদাতিক বাহিনীর সদস্য, ট্যাংক বাহিনী ও আমাদের পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের দিনের পর দিন অমানুষিক পরিশ্রমের কথা ভুলবো কেমন করে।যুদ্ধদৃশ্যে ব্যবহাহৃত সকল অস্ত্র,গুলি ও বিস্ফোরক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনী তাদের নিয়ম ও বিধি মেনে আমাদের কাজে ব্যবহারে সুযোগ দিয়েছেন।কতটুকু মুক্তযুদ্ধ প্রেমী ও দেশ প্রেমী মানুষ হলে সেসময়ের কর্তৃপক্ষ এ ধরণের সহযোগিতার হাত বাড়ান।তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আমার মুত্তিযুদ্ধের বন্ধু মেজর(অবঃ) শামসুল আরেফীন ও কর্ণেল( অবঃ) সাজ্জাদ জহির বীর প্রতীক সামরিক বিষয়টি দেখভাল করেছেন। কর্ণেল সাজ্জাদ মুক্তিযোদ্ধা চরিত্রাভিনেতাদের মুক্তিবাহিনীর কৌশল সমূহ প্রশিক্ষণ দিয়ে অভিনেতা তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন।তারা আমার রণাঙ্গনের সাথী তাদের ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবোনা।পুলিশের তৎকালীন তরুণ অফিসার বর্তমানে এডিশনাল আইজি হাবীবুর রহমানের সহযোগিতার কথা কোনদিন ভুলবোনা।রেলওয়ের পাশাপাশি সড়ক পরিবহন অধিদপ্তর আমাদের কাজে দীর্ঘ সময় রাস্তা ব্যবহারে অনুমতি দিয়ে কাজে সহযোগিতা করেছেন।নরসিংদি, সোনার গাঁও, ধামরাই হয়ে উত্তর বঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় চিত্রগ্রহণ বাংলাদেশের মানুষ, গ্রাম, শহর,নদী, বৃক্ষ তৃণলতা প্রাণীকূল ও ঐতিহ্যের এক ও অভিন্ন দৃশ্যচিত্র এখন কালের সাক্ষী।

সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের নিষিদ্ধ লোবান উপন্যাস শর্তহীন চলচ্চিত্রায়ন করার অনুমতি দিয়ে আমাকে চিরঋণি করে গেছেন।

সমীরণ দত্তের ক্যামেরাবন্দী দৃশ্য কখনো কাব্যের সুষমা নিয়ে কখনো রক্তাত্ব প্রান্তরের ক্ষুব্ধতা নিয়ে একের পর এক ছবি এঁকেছে সেলুলয়েডে। শিমূল ইউসুফের সুর ও সঙ্গীত গেরিলার দৃশ্যাবলীকে বেদনা ও বিজয়ের যুগপৎ সাঙ্গীতিক স্রোতে ভাসিয়ে দিয়ে বন্দিশ করে দর্শককূলকে। শিমূলকৃত পোষাক পরিচ্ছদ ৭১ এর সময়কে ধারণ করে ছবিটিকে করেছে কালনিষ্ঠ। সামির আহমেদের সম্পাদনা গতি ও বেগ দান করেছে গেরিলাকে।

অনিমেষ আইচের শিল্প নির্দেশনা যেন চিত্রকলাসম সময়ের নিখুঁত ভিজ্যুয়াল আর্ট।যা ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটের দৃশ্যকলা।

এবাদুর রহমানের স্ক্রিপ্টে গেরিলা চলচ্চিত্রের দৃশ্যকল্প পুতে দেয়া ছিলো। অপেক্ষা করছিলো আলোর। আমরা সকল কলাকুশলীরা সেই আলো প্রক্ষেপণ করেছি বই আর কিছু নয়।

রূপসজ্জার দায়িত্বে মোঃ আলী বাবুল নিষ্ঠুরাতা ও মায়ার দোলাচলে হেঁটেছেন সফলতার সাথে।

গেরিলা চলচ্চিত্রের যে বিষয়টি স্ববিশেষ লক্ষ্যনীয় তা হচ্ছে অভিনয়। প্রায় ১০০০ অভিনেতার নিঃশর্ত অংশ গ্রহণ গেরিলার মূল শক্তি।কায়িক ও মানসিক শ্রমের সাথে সকল অভিনেতাই ছবিটির প্রতি বিশ্বাসী ছিলেন। হয়তো সবার কথা স্বল্প পরিসরে বলা সম্ভব নয় । কিন্তু প্রতিনিধিত্বশীল ক’জনের সৃষ্টিশীল অভিনয়ের কথা নাবল্লেই নয়।

তসলিম সর্দারের চরিত্রে সম্প্রতি প্রয়াত অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জানের দ্রুপদী অভিনয় কদাচিৎ আমরা সাক্ষাত পাই আমাদের চলচ্চিত্রে।তিনি মৃত্যুর আগে বলেছিলেন- “আমি ৩৫০টির মত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি কিন্তু গেরিলাতে অভিনয় করে যে তৃপ্তি আমি পেয়েছি তা অন্যকোন ছবিতে পাইনি।”এ উক্তি আমার জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ।

জয়া আহসান তুঙ্গস্পর্শী অভিনয় করেছেন গেরিলায়।মক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস, চরিত্রের প্রতি অন্বিষ্টতা, ভলোবাসা , শুটিং এ সীমাহীন পরিশ্রম ও মেধার ব্যবহারে জয়া হয়ে উঠেছিলো ১৯৭১ এর বিলকিস।ব্যক্তি জয়া ও অভিনেয় চরিত্র বিলকিসের অদ্বৈত হয়ে ওঠা আমাদের চলচ্চিত্রে প্রায় বিরল ঘটনা।জয়া হয়ে উঠেছিলো গেরিলা চলচ্চিত্রের প্রাণ।

সাথে যে অভিনেতা সমানতালে গেরিলাকে নিয়ে গেছে ৭১ এর বাস্তবতার গভীরে সে হচ্ছে শতাব্দী ওয়াদুদ।পাকিস্তানী মেজর সারফারাজ ও ক্যাপ্টেন শামসাদের চরিত্রাভিনয়ের গভীরতা ও নিষ্ঠুর আচরণ মানুষের কাছে তাকে ঘৃণিত ব্যক্তি করে তুলেছিলো। অতিথি শিল্পী হিসাবে হাসানের চরিত্রে ফেরদৌসের পরিমিত সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

পীযূষ বন্দ্যোপধ্যায়, মিনু হক, মহসীন আহমেদ(প্রয়াত), আহমেদ রুবেল,মাসুম আজিজ, আজাদ আবুল কালাম, অপূর্ব মজুমদার, কচি খন্দকার, জয়শ্রী বন্দোপধ্যায়, সাজ্জাদ রাজীব,ঋতু সাত্তার, কামাল বায়েজীদ, মিরানা জামান,আসাদুজ্জামান, চন্দন চৌধুরি , বাবুল বোস, মনোয়ার, শিবলু , শ্যামল, ওমর আইয়াজ সহ হাজারো অভিনতার স্বল্প সময়ের পর্দা উপস্থিতি যে ভাবে দৃশ্যগুলো ও চরিত্রগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছিলো তা গেরিলা চলচ্চিত্রকে দিয়েছে শক্ত কাঠামো। যার ওপর দাড়িয়ে, এখনো গেরিলা দর্শকের হৃদয়ে আসীন।এদের অবদান আমি সদা স্মরণ করি।

সর্বশেষে প্রযোজক ফরিদুর রেজা সাগর ও এশা ইউসুফের কথা বলতেই হবে। এ দু’জন না হলে গেরিলার মত বিশাল ও ব্যাপক চলচ্চিত্র আমার পক্ষে করা সম্ভব হতোনা।সাগর দাড়িয়েছিলো সাগরের বিশালতা নিয়ে। আর এশা আমার কন্যা বটে কিন্তু গেরিলার প্রযোজক ও নির্বাহী প্রযোজক হিসাবে নিদ্রাহীন দুটি বছর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে অমানুষিক পরিশ্রম ও ভালোবাসা দিয়ে ৩০০ শত চলচ্চিত্র কর্মী ও হাজারো শিল্পীকে নিয়ে যে গেরিলা অভিযাত্রা করেছে তা তুলনাহীন।১২৩ দৃশ্য ১২১ টি শুটিং স্পটে এই বিরাট লটবহর নিয়ে গমন ও প্রস্থান মাঝে রাত্রি যাপন ও খাবার ব্যবস্থা এসব একহাতে এশা ইউসুফ তার প্রযোজনা কর্মীদের নিয়ে বিশ্রামহীন বিরামহীন করেছে বলে গেরিলা চলচ্চিত্র নির্মিত হতে পেরেছে।ভালোবাসা এশা ও সাগর।

সবাইকে নিয়ে,গেরিলাকে নিয়ে,এত কথা লিখেছি এ কারণে যে, দেশকে ভালোবেসে, মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস রেখে, চলচ্চিত্রের প্রেমে যে মানুষগুলো ১২ বছর আগে রাতকে দিন আর দিনকে রাত করে কাজ করেছে তাদের বলা হয়নি ধন্যবাদ। ধন্যবাদ,তোমাদের ভালোবাসি। তোমাদের জন্যই গেরিলা চলচ্চিত্র নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। আর দর্শক যারা সেদিন পাগলের মত হলে দিয়ে গেরিলা দেখে উত্তেজিত চোখে মুখে শ্লোগান দিতেদিতে হল থেকে সিনেমা শেষে বের হয়েছিলেন এবং এখনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অথবা কোন মিলনায়তনে গেরিলা দেখে প্রায়শ ফেসবুকে আপনাদের আবেগ প্রকাশ করেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।

আমি বিশ্বাস করি চলচ্চিত্র বা যেকোন শিল্পকর্ম বেঁচে থাকে দর্শক হৃদয়ে, স্মৃতির মণি কোঠায়। হে দর্শক আপনারা গেরিলাকে যে ভাবে ধারণ করেছেন তাতে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের প্রতি আপনাদের আস্থা ও বিশ্বাসের বহিপ্রকাশ দেখে আমি অভিভূত। আপনাদের অভিনন্দন।

গেরিলা নন্দনতত্বের আলোকে হয়তো শিল্পোত্তীর্ণ চলচ্চিত্র হয়ে ওঠেনি।কালোত্তীর্ণ হবে সে দূরাশাও আমার নাই এবং আমিও এ দাবী করিনা। কিন্তু দর্শক হৃদয়ে যে আসন গেড়ে গেরিলা আজ এক যুগ অতিক্রম করেছে এবং এখনও বিরতিহীন প্রতিনিয়ত প্রদর্শিত হচ্ছে তা একজন মুক্তিযাদ্ধা শিল্পকর্মী হিসাবে আমি মানুষের কাছে নতজানু হই।

দর্শক প্রিয়তায় যুগোত্তীর্ণ গেরিলা পরিচালক হিসাবে সকল কলাকুশলী, শিল্পী, শুভানুধ্যায়ী, দর্শকদের জানাই অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা।

জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।

 

রচনাটি লেখকের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া।

 

লেখা: নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু

মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা।

Chairman Of The Board: Syed Shamsul Alam

Editor in Chief: Tahsen Rashed Shaon

SHOKHOBOR24.COM

2994 DANFORTH AVE. | SUITE# 201

TORONTO. ON. M4C 1M7. CANADA

COPYRIGHT © 2019. ALL RIGHTS RESERVED. BY Shukhobor24.com About Us Privecy & Policy Terms & Condition