সর্বোচ্চ পর্বত চূড়া ‘এভারেস্ট’র নামকরণ হল যেভাবে

প্রকাশঃ ২০-০৮-২৭ ৭:১২:৩৪ পিএম
আপডেটঃ ২০২৪-১২-২১ ১২:০৭:৩৭ পিএম
লেখকঃ এমদাদ রহমান
সর্বোচ্চ পর্বত চূড়া ‘এভারেস্ট’র নামকরণ হল যেভাবে
অনলাইন থেকে সংগৃহীত ছবি

একটি চিঠিতে ভারতের গভর্নর জেনারেল এবং ভাইসরয় চার্লস ক্যানিং ১৮৬১ সালের ২ অক্টোবর লর্ড এলগিনকে লিখছেন, লেডি ক্যানিং দার্জিলিং ভ্রমণে যাবেন ঠিক করেছেন, তিনি এও জানিয়েছেন যে সিকিম যাবেন পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত দিউদুঙ্গা কিংবা মাউন্ট এভারেস্ট দেখতে, জরিপকারীরা বর্বরদের মতো এই পর্বতের খ্রিষ্টান নামকরণ করেছে। লেডি ক্যানিং পর্বতটির আদির নাম বদলে ইংরেজদের এভারেস্ট নামকরণকে কটাক্ষা করেছেন। প্রশ্ন হল আদি নাম কিভাবে বদলে গেল?

 

এভারেস্টের জরিপ কাজ শুরু হয় মেজর জেনারেল স্যার এন্ড্রু স্কট ওয়াহ্‌ এবং স্যার জর্জ এভারেস্টের পৃষ্ঠপোষকতায় যারা ভারতে সার্ভেয়ার জেনারেল এবং ইন্ডিয়ান বৃহৎ ত্রিকোণমিতিক জরিপ (Great Trigonometric Survey) কাজের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। স্যার এন্ড্রু স্কট ওয়াহ্‌ জন্মেছিলেন এক ইন্ডিয়ান মিলিটারি পরিবারে, ১৮১০ সালে; ১৮২৭ সালে তাকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে ক্যাডেট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, এবং তিনি বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ার্স-এ যোগ দেন। ১৮৩২ সালে তিনিই বৃহৎ ত্রিকোণমিতিক জরিপ কার্যক্রম শুরু করেন। 

 

সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে বৈজ্ঞানিক জরিপকাজ পরিচালনার লক্ষ্যে 'বৃহৎ ত্রিকোণমিতিক জরিপ' শুরু হয় ১৮০২ সালে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক। প্রথমে তারা ভেবেছিলেন মাত্র ৫ বছরের মধ্যেই সমগ্র ভারতকে এ জরিপের আওতায় নিয়ে আসতে পারবেন। কিন্তু বাস্তবে সে হিসেব ভুল প্রমাণিত হয়- জরিপ শেষ করতে লেগে যায় ৭০ বছর। ১৮২৩ থেকে এই জরিপকাজ জর্জ এভারেস্টের তত্বাবধানে পরিচালিত হয়, তিনিই ওয়াহ্‌-কে এই কাজে নিযুক্ত করেন। ১৮৪৩-এ এভারেস্ট অবসরে গেলে তিনি তার অনুগামী হিসেবে ওয়াহ্‌কে উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন। 

 

১৮৩০-এর শেষভাগে ‘বৃহৎ ত্রিকোণমিতিক জরিপ’ হিমালয় অঞ্চলে পৌঁছে যায়। নেপালে তখন বিদেশী নাগরিকদের প্রবেশের অনুমতি ছিল না। এর জন্য জরিপের প্রয়োজনীয় পর্যবেক্ষণ চলে তেরাই থেকে। ১৮৪৭ সালেই ওয়াহ্‌ এবং তার দল লক্ষ করলেন যে 'পিক বি' নামে পরিচিত ছিল যে পর্বতটি তা কাঞ্চনজঙ্ঘার চেয়েও উঁচুতে অবস্থান করছে। তারা মনে করেছিলেন এটাই 'পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত'।

 

‘চূড়া-১৫’-কে ঘিরে গণনা এবং পর্যবেক্ষণ অব্যাহত ছিল। ১৮৫২ সালে, জরিপকারকদের মধ্যে সবচে তুখোড় গণিতবিদ রাধানাথ সিকদার সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করলেন যে এই চূড়াই সর্বোচ্চ; মানুষ আবিষ্কার করল পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট। চূড়ার নামকরণের বেলায় খুব স্বাভাবিক একটা বিষয় ছিল স্থানীয় কোনও একটি নামকে শেষ পর্যন্ত গ্রহণের চেষ্টা করা।  

 

স্যার এন্ড্রু স্কট ওয়াহ্‌ ভাবনায় পড়লেন। আবিষ্কার হলো সর্বোচ্চ চূড়া, কিন্তু নাম কী দেয়া যায়? ওয়াহের কাছে এখন নামই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি লিখলেন- 'শ্রদ্ধেয় পূর্বসূরি জরিপ প্রধান স্যার জর্জ এভারেস্ট আমাকে প্রতিটি ভৌগলিক উপাদান স্থানীয়ভাবে প্রচলিত নামকরণ করতে শিখিয়েছিলেন। কিন্তু এই পর্বতচূড়াটি, খুব সম্ভবতঃ যা পৃথিবীর সর্বোচ্চ, তার কোনো স্থানীয় নাম আমরা খুঁজে পাইনি, কারণ নেপালে আমরা প্রবেশ করতে পারছি না, আর এ কারণে আমাদের পক্ষে নিশ্চিতভাবে এর স্থানীয় নাম জানা সম্ভব নয়। এখন এ চূড়াটির নামকরণের সুযোগ আমি পেয়েছি, এর পাশাপাশি আরও কিছু দায়িত্ব আমার কাঁধে বর্তেছে। এখন আমাকে গ্রহণ করতে হবে এমন একটি নাম যা সারা পৃথিবীর ভূগোলবিদরা জানবে এবং সভ্য জাতিগুলোর মুখে মুখে ফিরবে। 

 

তিনি প্রস্তাব করলেন স্যার জর্জ এভারেস্টের নামানুসারে সর্বোচ্চ চূড়ার নাম মাউন্ট এভারেস্ট। তিনি এই নাম বেঝে নিলেন তার সম্মানীয় পূর্বসূরির প্রতি উৎসর্গ এবং স্মৃতি হিসেবে। এই নামটিকে, ১৮৬৫ সালে 'রয়েল জিওগ্রাফিক সোসাইটি' আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। 


সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গের স্থানীয় নাম কি ছিল?

নেপালে প্রবেশ করতে না পারায় স্থানীয় নাম গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি, স্কটের এই দাবী ততটা জোরালো নয়। কারণ আঠারো শতকের মানচিত্রে সর্বোচ্চ এই শৃঙ্গের নাম রেকর্ড হয়েছিল, তিব্বতি নাম কোমোল্যাঙমা (কিংবা, চোমোলঙমা) নামে। দার্জিলিংয়ে স্থানীয়ভাবে বলা হত দিউদুঙ্গা যার অর্থ হলো পবিত্র পর্বত; নেপালের প্রকৃতিবিদ এবং এককালের বাসিন্দা ব্রায়ান হটন হগসন এই নামটির সঙ্গে সুপরিচিত ছিলেন।  

 

এমনকি স্যার জর্জ এভারেস্ট নিজেই আপত্তি করেন। তিনি পর্বতটি কখনও দেখেননি, এর আবিষ্কারের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন না। তিনি তার নাম ব্যবহারের বিরোধী ছিলেন। 'রয়্যাল জিওগ্রাফিকাল সোসাইটি'কে জানান যে, এভারেস্ট নামটি হিন্দিতে লেখা যায় না ও ভারতীয়রা উচ্চারণ করতে পারেন না। হিন্দি ভাষায় তার নামের উচ্চারণ করা ছিল কঠিন। মজার বিষয় হলো, তিনি পরিচিত হয়েছিলেন তার নামের এ-ভরেস্ত উচ্চারণে, এভার-এস্ট নয়। 

 

এন্ড্রু স্কট ওয়াহ্‌ ১৮৫৬ সালে 'রয়্যাল জিওগ্রাফিকাল সোসাইটি'র স্বর্ণপদক গ্রহণ করেন, ১৮৫৮ সালে সোসাইটির সদস্য নির্বাচিত হোন। ১৮৬১-তে তিনি অবসর গ্রহণ করলে তাকে মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে সম্মান জানানো হয় এবং একই বছর নাইট খেতাব দেওয়া হয়। ইংল্যান্ডের দক্ষিণ কেনসিংটনে ১৮৭৭ সালে স্যার এন্ড্রু স্কট ওয়াহ্‌ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

Chairman Of The Board: Syed Shamsul Alam

Editor in Chief: Tahsen Rashed Shaon

SHOKHOBOR24.COM

2994 DANFORTH AVE. | SUITE# 201

TORONTO. ON. M4C 1M7. CANADA

COPYRIGHT © 2019. ALL RIGHTS RESERVED. BY Shukhobor24.com About Us Privecy & Policy Terms & Condition