ক’জনই বা জানেন মোহিনী চৌধুরীর নাম। অথচও এখনও তুমুল জনপ্রিয় তার লেখা ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে’, ‘আমি দুরন্ত বৈশাখী ঝড়’, ‘দিনদুনিয়ার মালিক তোমার’, ‘ভালোবাসা মোরে ভিখারি করেছে’-সহ বহু গান। এখনো লোকের মুখে মুখে ফেরে সেসব৷ আবার নানা উপলক্ষে তার গান ছাড়া যেন চলেই না। কালজয়ী সেইসব গানের গীতিকার জন্মশতবর্ষেও অনেকটাই উপেক্ষিত।
বাংলা সংগীতে বরাবরই গীতিকাররা উপেক্ষিতই থেকে গেছেন। কখনো কখনো জনপ্রিয় গানের সুরকার কৃতিত্ব পেলেও আড়ালেই থেকে যান গীতিকার৷ এই আড়ালে থাকার বেদনা সারা জীবন বয়ে বেড়িয়েছেন মোহিনী চৌধুরী৷ স্বাধীনতা-উত্তর ভারতের বাংলা আধুনিক গানের জগতে বহু জনপ্রিয় গানের রচয়িতার জন্মশতবর্ষ পালিত হচ্ছে এ বছর৷
চলুন জেনে নিই কালজয়ী এই মোহিনী চৌধুরী।
১৯২০ সালে বাংলাদেশের গোপালগঞ্জে কোটালিপাড়ায় জন্ম মোহিনী চৌধুরীর৷ চল্লিশের দশকের গোড়া থেকে তাঁর গীতিকার জীবনের শুরু৷ এক দশক না ঘুরতেই বিপুল জনপ্রিয় হয়েছিল গীতিকবির লেখা অনেক গান৷ তিনি বেঁচে আছেন ‘শুনি তাকদুম তাকদুম বাজে বাজে ভাঙা ঢোল’, ‘পৃথিবী আমারে চায়’-এর মতো কালজয়ী, জনপ্রিয় গানের মধ্যে৷ সিনেমার গানেও তিনি প্রতিভার ছাপ রেখেছেন৷ ‘নায়িকা সংবাদ’ ছবিতে ‘কী মিষ্টি দেখো মিষ্টি’ বা ‘কেন এ হৃদয় চঞ্চল হলো’ আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে৷
জীবদ্দশায় অনেক উপেক্ষা সহ্য করেছেন মোহিনী চৌধুরী৷ তাঁর লেখা গান ‘প্রচলিত’ তকমা নিয়ে বাজারে চলেছে৷ তিনি যে গান লিখেছেন, তার গীতিকার হিসেবে প্রচারিত হয়েছে মীরা দেববর্মন বা কখনো প্রিয়ব্রতর নাম৷
গানের জগতে তার পথচলাও শুরুতে ছিল উপেক্ষিত।
ভারতের পশ্চিম বঙ্গের রাজধানী কলাকাতা থেকে প্রকাশিত স্বনামধন্য পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে তাকে নিয়ে রচিত প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়েছে, “বিস্তর ধুলো জমেছে দেরাজে, আর জমেছে কাঁড়ি কাঁড়ি খাতা, কাগজ। এইচএমভি-র কর্তা হেমচন্দ্র সোম হিমসিম খেয়ে যাচ্ছিলেন অফিসের আলমারিটা পরিষ্কার করতে। দমদমের এই অফিসে বহু লোক প্রতি দিন লেখা পাঠান। সেই সবই জমে রয়েছে অফিসে। পাতাগুলো ঝাড়তে গিয়ে আরও দশটা কাগজের সঙ্গে টুপ করে একটা খাতাও পড়ল মাটিতে। কী মনে করে খাতাটা খুললেন হেমবাবু। পড়তে পড়তে চমকে উঠলেন। যেমন সুললিত ভঙ্গি, তেমনই সুন্দর কবিতার কথাও। ওপরের পুরু ধুলো সরিয়ে দেখলেন, খাতার ওপরে লেখা ‘গুঞ্জন’ ১৯৩৮। নীচে লেখকের নাম, মোহিনী চৌধুরী।”
সেটা ১৯৪৩ সালের কথা। পাঁচ বছর ধরে এমন লেখা অনাদরে পড়ে আছে? মনে পড়ল, লাজুক চেহারার একটা ছেলে প্রায়ই আসত তাঁর কাছে। বহু দিন হল আসা ছেড়ে দিয়েছে সে। তৎক্ষণাৎ গানের খাতাটা সুরকার কমল দাশগুপ্তের কাছে পাঠিয়ে দিলেন হেমচন্দ্র সোম। মোহিনী চৌধুরীর প্রথম রেকর্ড, ‘রাজকুমারী ওলো নয়নপাতা খোল, সোনার টিয়া ডাকছে গাছে ওই বুঝি ভোর হল’, এই গানটি গাইলেন কুসুম গোস্বামী, কমল দাশগুপ্তেরই সুরে। এই গান আগে রেকর্ডিং হলেও পাঁচু বসুর সুরে অণিমা ঘোষের গাওয়া অন্য একটি গান কলম্বিয়া থেকে রিলিজ় হল আগে। ১৯৪৪ সালে কমল দাশগুপ্তের সুরে মোহিনী চৌধুরীর লেখা গান গাইলেন জগন্ময় মিত্র, ‘ভুলি নাই ভুলি নাই, নয়ন তোমায় হারায়েছি প্রিয়া স্বপনে তোমারে পাই’। জগন্ময় মিত্র-কমল দাশগুপ্ত জুটি, সঙ্গে মোহিনীবাবুর কথা। দারুণ জনপ্রিয় হল গানটি। গীতিকারকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। এর তার লেখা গানগুলো যেনো মনিমুক্তোর মতো ছড়াল আলো।
মোহিনী চৌধুরী ছাত্রাবস্থাতেই সপরিবার কলকাতা চলে আসেন। ছোটবেলা থেকেই গান লিখতেন, এক দিন বন্ধুর কথা শুনে গানের খাতা পাঠিয়ে দিলেন এইচএমভি অফিসে। কেটে গেল বছর পাঁচ, কোনও ডাকই এল না। তত দিনে জিপিও-তে চাকরি নিয়েছেন তিনি। এক দিন চিঠি বিলি করতে গিয়েছেন এক অভিজাত এলাকায়। সবুজে ঘেরা ছিমছাম একটা বাড়ি থেকে ভেসে এল গানের কলি, গ্রামোফোনে বাজছে— ‘বিদেশি এক রাজার কুমার তোমার পাশে জাগে।’ চমকে উঠলেন মোহিনী। ভীষণ চেনা লাইন!
এর দিন দুয়েক পরে এক সভাতে গিয়ে শুনলেন গ্রামোফোন কোম্পানি তাঁকে খুঁজছে। তাঁর গান এইচএমভি থেকে রেকর্ড হয়ে বেরিয়েছে। কিন্তু গানের খাতায় কোনও ঠিকানা লেখা ছিল না বলে তাঁরা গীতিকারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। কিছু দিনের মধ্যেই তাঁর লেখা গান গাইলেন জগন্ময় মিত্র, ‘ভালবাসা মোরে ভিখারি করেছে, তোমারে করেছে রাণী’। সেই গান হিট হল। গীতা দত্তের প্রথম বাংলা গানও মোহিনীবাবুর লেখা। ‘তুমি যদি বলো ভালবাসা দিতে জানি না, জানি সে তোমার অভিমান, তাই মানি না সে কথা মানি না।’
শৈলজানন্দন বন্দ্যোপাধ্যায় তখন বিখ্যাত চিত্রপরিচালক। এক দিন গানের খাতা নিয়ে মোহিনী সোজা চলে গেলেন শৈলজানন্দনের অফিসে। খাতা উল্টেপাল্টে দেখে শৈলজানন্দন বললেন, ‘‘গানগুলি চমৎকার ভাই। কিন্তু আমি নিতে পারব না এখন।’’ তিনি তখন তাঁর সিনেমার জন্য প্রধানত নজরুলের গানই নিচ্ছেন। মোহিনী চৌধুরী তা শুনে চলে আসছেন, শৈলজানন্দন ডেকে বললেন, ‘‘একটা গান লেখার সুযোগ দিতে পারি। ছবির সিকোয়েন্স অনুযায়ী একটা গান লিখে দিতে হবে।’’ দৃশ্যটা বুঝিয়েও দিলেন।
সেই রাতেই কথা বুনে নিলেন মোহিনী— ‘দিনদুনিয়ার মালিক তোমার দীনকে দয়া হয় না।’ গানের কথা শুনে মুগ্ধ শৈলজানন্দ আরও একটা গানের কথা লিখে দেওয়ার ফরমায়েশ করলেন। পরের সেই গানটি ছিল, ‘অভিনয় নয় গো, অভিনয় নয়।’ ১৯৪৫-এ ‘রূপবাণী’তে রিলিজ় করল ‘অভিনয় নয়’। মুক্তির সঙ্গে সঙ্গে রূপবাণী হাউসফুল। সুপারহিট সিনেমা, সুপারহিট গানও। সেই বছরই অক্টোবরে এইচএমভি থেকে পুজোর গান রিলিজ় হল— কমল দাশগুপ্তের সুরে আর সত্য চৌধুরীর কণ্ঠে, ‘পৃথিবী আমারে চায়।’ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেনাদের মনোবল অটুট রাখার জন্য বিভিন্ন ফ্রন্টে তখন নাচগান, নাটক-থিয়েটার চলছে, অপরেশ লাহিড়ী এই সময় বেরিয়ে পড়লেন গানের ঝুলি নিয়ে। ‘পৃথিবী আমারে চায়’ অনুবাদ করে বোঝাতে লাগলেন। সেনাদের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয় হল গান। আর ভারতের স্বাধীনতা লাভের ঠিক আগে আগে মোহিনী লিখলেন তাঁর সম্ভবত সব থেকে জনপ্রিয় গান- ‘মুক্তির মন্দির সোপানতলে কত প্রাণ হল বলিদান, লেখা আছে অশ্রুজলে।’ গানটি রেকর্ড হয়েছিল কৃষ্ণচন্দ্র দে-র সুরে, তাঁরই কণ্ঠে। গানটি মুক্তি পেল স্বাধীনতার ঠিক পরেই। এখনও সমান জনপ্রিয় এই গানটি সে যুগে জনমানসে অনন্য প্রভাব বিস্তার করেছিল। এর কিছু দিন পরেই শৈলজানন্দের ‘মানে না মানা’ ছবির জন্য মোহিনী লিখলেন, ‘মানবের তরে মাটির পৃথিবী, দানবের তরে নয়।’ এই গানটিও সাড়া ফেলেছিল।
এইচএমভি-তে একটা গানের রেকর্ডিং হচ্ছে, এমন সময় হেমচন্দ্র সোম এসে বললেন, শচীন দেব বর্মণ ডেকে পাঠিয়েছেন মোহিনীকে। শচীনকর্তার সুর আর অজয় ভট্টাচার্যের কথা, এই দুই নিয়ে বাংলা গান তখন মধু-মাখা। অজয় ভট্টাচার্য তখন সদ্য মারা গিয়েছেন। হিন্দুস্থান পার্কের বাড়িতে দেখা করতে এলেন মোহিনী। নীতিন বসু তখন ‘বোম্বে টকিজ’-এর ব্যানারে
বঙ্কিমচন্দ্রের ‘রজনী’ অবলম্বনে ‘সমর’ নামে একটা ছবি বানাচ্ছেন। তার জন্যই চাই একটা ঝুমুর গান। গানের সুরটা এসে গিয়েছে শচীন দেব বর্মণের মাথায়, কিন্তু ঠিক কী চাই, মোহিনীকে সেটা বোঝাতে ইচ্ছেমতো কয়েকটা কথা বসিয়ে নিলেন— ‘টঙ্গালি গো টঙ্গালি, নাকে মুখে চুনকালি।’ কিন্তু এই গান তবলার ঠেকা ছাড়া জমে না। পাঁচ বছরের রাহুল খেলছিল বাইরে। হাঁক পাড়লেন শচীনকর্তা। ছেলে এসে অদ্ভুত ঠেকা দিল, মুখে আওয়াজ করে। মোহিনী লিখলেন, ‘সুন্দরী লো সুন্দরী, দল বেঁধে আয় গান করি।’ গানটি গাইলেন কিশোরকুমারের ভাই অরুণকুমার আর গীতা দত্ত। কোরাসে ছিলেন কিশোরকুমার, রুমা গুহঠাকুরতা। পরে সুরের এই চলনই ‘অনুসন্ধান’ ছবিতে ব্যবহার করেছিলেন রাহুল। কথার ধাঁচও এক— ‘ফুলকলি রে ফুলকলি।’
এর পর মোহিনীর একের পর এক গান শচীন দেব বর্মণের সাথে। ‘পিয়া সনে মিলন পিয়াস’, ‘ঝিলমিল ঝিলমিল,’ ‘চৈতি সন্ধ্যা যায় বৃথা’, ‘হায় কী যে করি এ মন নিয়া।’ তখন দেশ স্বাধীন হয়েছে। দেশভাগের ক্ষত বাঙালির বুকে। শচীন দেব বর্মণ বললেন, গান লিখে দিতে হবে এই অনুভূতি নিয়ে। মোহিনীর জন্ম বাংলাদেশে, সেই দেশই আর নিজের রইল না। এ ব্যথা তাঁর থেকে ভাল আর কে বুঝবে? সারা রাত জেগে রইলেন গান নিয়ে। ভোরের আলো ফুটে উঠেছে যখন, মোহিনী লিখলেন, ‘শুনি তাকদুম তাকদুম বাজে বাজে ভাঙা ঢোল/ ও মন, যা ভুলে যা কী হারালি, ভোল রে ব্যথা ভোল।’
পরিচালক শৈলজানন্দনের সঙ্গে একের পর এক কাজ করার সময়েই আইডিয়াটা এসেছিল মোহিনীর মাথায়। ‘রায় চৌধুরি’ ছবিতে সহ-পরিচালকের কাজ শুরু করলেন মোহিনী। সেই সঙ্গে চলতে লাগল গান লেখা। এই সময়েই সরকারি চাকরিটাও ছেড়ে দিলেন। শচীন দেব বর্মণ তখন পাকাপাকি ভাবে মুম্বইয়ে থাকেন। মোহিনীকে সেখানে আসার প্রস্তাব দিলেন তিনি। সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন মোহিনী। কারণ তখন তাঁর ইচ্ছা, নিজে ছবি পরিচালনা করবেন। শুরু করলেন ‘সাধনা’ ছবির কাজ। কিন্তু ছবি শেষ করতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হলেন। ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স, স্ত্রীর গয়নাগাঁটি, সব চলে গেল। পাওনাদারদের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে তাঁর বাবা তাঁকে তাড়িয়ে দিলেন বাড়ি থেকে। স্ত্রী-পুত্র নিয়ে দেউলিয়া মোহিনী চেতলায় এক ভাড়াবাড়ির এক কামরার ঘরে কোনও রকমে মাথা গুঁজলেন। দুধের শিশু নিয়ে অসম্ভব দারিদ্রের সঙ্গে নিয়ত যুঝছেন যখন, বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি মুখ ফিরিয়ে নিল তাঁর থেকে। শৈলজানন্দনের কাছ থেকে অনেক টাকা পাওনা তখন, কোনও রকমে এক জনের কাছ থেকে আট আনা জোগাড় করে বাগবাজারের বাড়িতে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন টাকা পাওয়ার আশায়। শৈলজানন্দ পকেট থেকে এক টাকা বার করে দিলেন। অপমানিত লেখক সেই টাকা ফিরিয়েও দিতে পারলেন না। ছেলের দুধ খাওয়ার টাকাটা তো অন্তত জোগাড় হল!
১৯৫৪ সালে কলকাতা ছেড়ে মোহিনী চৌধুরী চলে গেলেন দিল্লি- বিজ্ঞানী তথা সাংসদ মেঘনাদ সাহার সংসদীয় সচিবের পদ নিয়ে। ভেবেছিলেন কলকাতা আর এখানকার সংস্কৃতি-জগতের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক চুকিয়ে দেবেন। কিন্তু মন টিকল না দিল্লিতে। তত দিনে ‘সাধনা’র মুক্তির সময় হয়েছে। সিনেমা ফ্লপ হল। মেঘনাদ সাহাকে কিছু না জানিয়েই হঠাৎ এক দিন চাকরি ছেড়ে কলকাতায় ফিরে এলেন মোহিনী। ভাগ্যবিপর্যয় পিছু ছাড়ল না। বিখ্যাত শিল্পপতি দেবেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের কাছে চাকরি পেলেন। সামান্য কিছু টাকা আসতে লাগল মাসে মাসে, কিন্তু গান আর ফিরে এল না সে ভাবে। এরই মধ্যে দুই বছরের শিশুপুত্র আগুনে পুড়ে মারা গেল। শোকে দুঃখে পাগলের মতো হয়ে গেলেন মোহিনী। আত্মহত্যাও করতে গিয়েছিলেন। ঘটনাচক্রে হাতে এল স্বামী বিবেকানন্দের ‘রাজযোগ’। ফিরলেন।
দেবেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য তখন বেশ কিছু সিনেমার প্রযোজক। পরিচয় করিয়ে দিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। হেমন্ত ‘নায়িকা সংবাদ’ ছবির জন্য দুটো গান লিখতে বললেন মোহিনীকে। উত্তমকুমারের লিপে কোনও গান লিখতে না পারায় মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন গীতিকার। ভেবেছিলেন তাঁর গান শ্রোতাদের মনে ধরবে না। কিন্তু সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গলায় ‘কী মিষ্টি দেখো মিষ্টি কী মিষ্টি এ সকাল’ আর ‘কেন এ হৃদয় চঞ্চল হল’, দুটো গানই সুপারহিট। এর পর ‘শুকসারী’ ছবিতে উত্তমকুমারের লিপে মোহিনীর লেখা গান গাইলেন মান্না দে- ‘সখি চন্দ্রবদনী, সুন্দরী ধনি...’
এই গান ক’টিই মোহিনীর লেখা শেষ সাড়া জাগানো গান। দেবেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের চাকরিটা যখন চলে গেল, তখন তাঁর বয়স একান্ন। ফের অসহনীয় দারিদ্র। জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। বাংলা গানের জগতের জ্যোতিষ্ক ছিলেন এক সময়। ভেবেছিলেন, সেই সময়ের খানিকটা আলো শেষ জীবনে ছুঁয়ে যাবে। সেই আশা পূর্ণ হয়নি। দিন গুজরানের জন্য কাজ করে গেছেন বৃদ্ধ বয়সেও। না পেয়েছেন সম্মান, না সাম্মানিক। ১৯৮৭ সালের ২১ মে যে দিন মারা যান, সে দিনটাও স্টুডিয়োতে কাটিয়েছেন। রাতে ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক।
দাহ করে ফিরে এসে বাবার ঘরে এক টুকরো কাগজ পেয়েছিলেন তাঁর মেজ ছেলে। ‘নায়িকা সংবাদ’-এর প্রমোশনের বিজ্ঞাপন। প্রাপ্য পয়সা পেতেন না বলে লিখতে বারণ করেছিলেন বাড়ির লোক। প্রযোজকের অনুনয়ে বাড়িতে কিছু না জানিয়েই লিখে দিয়েছিলেন মোহিনী। যে সৃষ্টির কোনও স্বীকৃতি ছিল না, মৃত্যুর দিন সেটা নিয়েই নাড়াচাড়া করছিলেন বোধহয়।
মোচড়ানো বিবর্ণ কাগজে লেখা ছিল- ‘হৃদয় দোলানো, নয়ন ভোলানো ছবি/ রামধনু আঁকা, প্রজাপতি পাখা সম/ স্বপ্নমিনারে সে এক তরুণ কবি/ লিখে লিখে যায়, প্রিয়া আর প্রিয়তম!’
Chairman Of The Board: Syed Shamsul Alam
Editor in Chief: Tahsen Rashed Shaon
SHOKHOBOR24.COM
2994 DANFORTH AVE. | SUITE# 201
TORONTO. ON. M4C 1M7. CANADA
COPYRIGHT © 2019. ALL RIGHTS RESERVED. BY Shukhobor24.com About Us Privecy & Policy Terms & Condition