জনসচেতনতা তৈরি করতে শান্তি’র পদযাত্রা

প্রকাশঃ ১৯-০৮-৩০ ১২:১০:০১ পিএম
আপডেটঃ ২০২৪-০৫-১৯ ৯:৪০:৪১ এএম
লেখকঃ রাশেদ শাওন
জনসচেতনতা তৈরি করতে শান্তি’র পদযাত্রা
জনসচেতনতা তৈরি করতে প্লেকার্ড হাতে সাইফুল ইসলাম শান্তি

গুজবের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করতে সাইফুল ইসলাম শান্তি পায়ে হেঁটে চলেন টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া । দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এই শিক্ষার্থী টিউশনির জমানো টাকায় শুরু করেন তার পদযাত্রা।

গলায় ও মাথায় পেঁচানো একটি লাল-সবুজ পতাকা, পিঠে ঝুলানো কলেজ ব্যাগ। এক হাতে উঁচিয়ে ধরে রাখা একটি প্ল্যাকার্ড, অন্য হাতে ছোট হ্যান্ডমাইক। প্ল্যাকার্ডটিতে লেখা ‘ব্যক্তি স্বার্থকে ভুলে যান, প্রশ্নপত্র ফাঁস ও গুজবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। পরীক্ষার আগে যে বলবে প্রশ্নপত্র আছে আমার কাছে, তাকে পুলিশে ধরিয়ে দিন।’ তার এই বেশ পথের মানুষকে কৌতূহলী করেছে। ফলে পথিমধ্যে ছোট হাট-বাজার ও চায়ের দোকানগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে হ্যান্ডমাইকে জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেই জমে যেত মানুষ। তখন সাইফুল সবার উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতেন। সবাইকে বুঝিয়ে বলতেন গুজবের ক্ষতিকর দিকগুলোর কথা। এছাড়া প্রকাশ্যে কুপিয়ে বরগুনার রিফাতকে হত্যার মতো ঘটনা যেন কোথাও আর না ঘটে এবং বর্তমান সময়ের আতঙ্ক ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধেরও উপায় নিয়ে তিনি কথা বলতেন।

কৃষক বাবা ও গৃহিণী মায়ের সন্তান সাইফুল এই একক পথযাত্রায় খাওয়া এবং অন্যান্য খরচ বহন করেছেন টিউশনির জমানো টাকা দিয়ে। সারাদিন হেঁটে রাতে থাকার জন্য বিভিন্ন উপজেলার ইউএনও’র মাধ্যমে সার্কিট হাউজে থাকার ব্যবস্থা করে নিতেন। কিন্তু সব সময় এমন সম্ভব হতো না, তখন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে রাতে থাকার জন্য আশ্রয় চাইতেন এবং আশ্রয় মিলেও যেত। কিন্তু সবখানেই যে তিনি আতিথেয়তা পেয়েছেন এমন নয়— উল্টোটাও ঘটেছে। শান্তি জানান, এক বাজারে প্রচারণা চালানোর সময় স্থানীয় দুজন তাকে ছেলেধরা বলে সন্দেহ করে। পরে তারা ব্যাগসহ সব কিছু চেক করে সন্দেহজনক কিছু না পেয়ে তাকে ছেড়ে দেয়। এক বাজারে বক্তব্য দেবার সময় দুই ব্যক্তি ক্ষিপ্ত হয়ে তার ওপর চড়াও হন। তখন স্থানীয় কয়েকজন এসে তাকে বাঁচান।

পদযাত্রার এই ৩১ দিনে বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতায় ভুগেছেন সাইফুল ইসলাম শান্তি। প্ল্যাকার্ড ধরে রাখতে রাখতে হাতে ফোস্কা পড়েছিল, পায়ের একটি আঙুলের নখ মরে গেছে। দুই পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলিতেও পড়েছে ফোস্কা। পিঠে ব্যাগ রাখতে রাখতে ব্যাক পেইনে ভুগেছেন। কিন্তু তিনি মনোবল হারাননি। শান্তি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার আব্বা আম্মা আমাদের তিন ভাই-বোনকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শিখিয়েছেন। তারা আমার পথযাত্রায় সবসময় খোঁজখবর নিয়েছেন। আম্মা আমাকে সজাগ থেকে পথ চলার পরামর্শ দিতেন এবং আমার জন্যে দোয়া করতেন। এছাড়া আমার আত্মীয়-স্বজন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু-বান্ধবী, শিক্ষক, পরিচিত সাংবাদিক ভাইয়েরাও আমার খোঁজখবর নিতেন।’

গত ২১ জুলাই বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার তেঁতুল তলা থেকে শুরু হয় এ পথযাত্রা। পরের দিন পঞ্চগড় জেলায় সংবাদ সম্মেলন করে দেশবাসীকে জানিয়ে দেন মনের কথা। পণ করেন আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দৈনিক হাঁটবেন ৪০ কিলোমিটার। রোদ-ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে পঞ্চগড় ঢাকা হাইওয়ে দিয়ে বগুড়া হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করেন, এরপর সাভার গাবতলী দিয়ে নারায়ণগঞ্জ হয়ে কুমিল্লা রোড দিয়ে হেঁটে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার অতিক্রম করে চলতে থাকেন টেকনাফের পানে। থাকা-খাওয়ার প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দিয়েই চলে তার পদযাত্রা। এর মধ্যেই এসে যায় ঈদ। পরিবারের সঙ্গে ঈদ না করতে পারার ব্যাকুলতাও তাকে দমাতে পারেনি। ২০ আগস্ট ৩১তম দিনে শান্তি পৌঁচ্ছে যান টেকনাফ। শান্তি জানান, তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত পৌঁছাতে তাকে ১৭টি জেলার আনুমানিক ১ হাজার কিলোমিটার পথ হাঁটতে হয়েছে। টেকনাফেই সংবাদ সম্মেলন করে পদযাত্রার সমাপ্তি ঘোষণা করেন তিনি।

শান্তি বলেন, ‘টেকনাফে পৌঁছে আমার খুব ভালো লাগছিল। কিন্তু আফসোস হচ্ছে এ আন্দোলনটা আমার করার কথা না। এটা যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, লেখক, বুদ্ধিজীবী ও মানবাধিকার কর্মী করতো তাহলে ভালো লাগত। কিন্তু আজ তারা চুপ! তাদের সামাজিক কাজে খুঁজেই পাওয়া যায় না। তাই আমার বড় আফসোস হচ্ছে তাদের ভূমিকা নিয়ে। আমি দেশবাসীকে অনুরোধ করছি আপনারা সবাই অন্যায়, অবিচার, জুলুম, দুর্নীতি, প্রশ্নফাঁস, গুজব ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে নিজ নিজ জায়গা থেকে আওয়াজ তুলুন এবং বাংলাদেশকে কলুষমুক্ত করুন।’

Chairman Of The Board: Syed Shamsul Alam

Editor in Chief: Tahsen Rashed Shaon

SHOKHOBOR24.COM

2994 DANFORTH AVE. | SUITE# 201

TORONTO. ON. M4C 1M7. CANADA

COPYRIGHT © 2019. ALL RIGHTS RESERVED. BY Shukhobor24.com About Us Privecy & Policy Terms & Condition