নাফিসা কামাল ঝুমুর। বাংলাদেশি মিডিয়ায় বেশ জনিপ্রয় একটি নাম। তিনি একাধারে অভিনয় শিল্পী, মডেল। অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করে থাকেন। এই তারকা সম্প্রতি ভারতের বলিউডের তরুন জনপ্রিয় অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের অস্বাভাবিক মূত্যূতে শোকাহত। মিডিয়ায় খবর বেরিয়েছে সুশান্ত ডিপ্রেশন থেকে আত্মহত্যা করেছেন। এতে ঝুমুর খুবই মর্মাহত হয়েছেন। তিনি এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। এর পর তিনি নিজের ডিপ্রেশনের ভোগার কথা সরাসরি স্বীকার করে আরও একটি স্ট্যাটান দেন। সেখানে তিনি বলেছেন, “আমিও খুব বাজে রকমের ডিপ্রেশনের মধ্যে দিয়ে গেছি। লজ্জার কিছুই নেই স্বীকার করতে তা!”
শুধুই তাই-ই নয়, তিনি সেই ডিপ্রেশন থেকে মুক্ত হলেন তারও বিবরণ দিয়েছেন।
প্রিয় পাঠক, ডিপ্রেশস একটি ব্যাধি। এর কারণে আমাদের সমাজে প্রতিনিয়তই নানা দুর্ঘটনা ঘটছে। অনেকে এই রোগে ভূগে আত্ম হননের পথ বেছে নিচ্ছেন। সেই বিবেচনায় নাফিসা কামাল ঝুমুর-এর স্ট্যাটাসটি সময়োপযোগী ও যুক্তিসঙ্গত। চলুন তাঁর স্ট্যাটাসি থেকে জেনে নিই, কিভাবে এই তারকা তার ডিপ্রেশন থেকে মুক্ত হয়েছিলেন সেই গল্প।
আমিও খুব বাজে রকমের ডিপ্রেশনের মধ্যে দিয়ে গেছি। লজ্জার কিছুই নেই স্বীকার করতে তা!!
কয়েক বছর আগের কথাই বলছি, একেবারে ভয়াবহ অবস্থা ছিলো আমার। এতোটা ধাক্কা খাব জীবনে সেটা আঁচ ও করতে পারিনি! কাছের মানুষেদের কাছ থেকে অনেক অবজ্ঞা পেয়েছি, খোচাখোচা কথা শুনেছি, ভীষণ অপমানিত হয়েছি। টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিলাম। বাইরে থেকে দেখে কেউই বুঝতো না সেইটা। কারণ, আমি শিল্ড ফোর্স বানিয়ে রাখতাম। বুঝতে পারার কোন সুযোগই দিতাম না। হয়ত সেটাই ই ছিল ভুল! তারাই বুঝতে পারতো যারা আমাকে অনেক ভালোবাসেন। নিঃসন্দেহে তারাই আমার খুব কাছের মানুষ। আমি ব্যাথা পেলে আগেই তাদের ব্যাথা হয়। তাদের মোনাজাতে আমি থাকি সবসময়।
নিজেকে প্রায় বদ্ধ করে ফেলেছিলাম। একজন ঠিকই বলেছিল আমাকে সেলিব্রিটি লাইফের একটা প্রেসার ও আছে! ঐখান টায় দাড়িয়ে আপনি আপনার সুখের কথা গুলো খুব সহজেই শেয়ার করতে পারবেন সবার সাথে কিন্ত নিজের সমস্যা গুলো জানান দেয়া আসলে অতটাই কঠিন! তাছাড়া পাবলিক ইমেজ এর একটা ভয় তো থাকেই! নিজেকে সবকিছু ছেড়ে ঘরবন্দি করে ফেলেছিলাম নানাবিধ প্রশ্নের ভয়ে যার উত্তর আমার অজানা! অনেক সময় মনে হতো সমস্যাটা আমারই! প্রফেশনাল কাউন্সিলরের কাছে গিয়েছিলামও! কিন্তু কর্মহীন ঝুমুর তার মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য এতো এক্সপেনসিভ কাউন্সিলিং এর খরচের জন্য কারো কাছে চাইবো সাহসটা হয়ে উঠছিল না। দুয়েকবার গেলেও পরে আর যাইনি। তাহলে কিভাবে কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলাম? সিরিজ আকারে লেখা শুরু করবো ভাবছি????
আমি প্রথমেই সিলেক্ট করে নিয়েছিলাম কার সাথে শেয়ার করলে ভালো লাগতে পারে তার "নামটি"। জায়নামাযে বসে আল্লাহ কে জানাতাম সব। সব মানে সবব্বব্বব। মুনাজাতে...... সিজদাতে গিয়ে..... তাহাজ্জুদ নামাযে...... প্রতি ওয়াক্তের নামাযে....☺ মানুষকে বললে তো এক কান থেকে আরেক কান, তিল থেকে তাল হয়ে যেতো। আর সবচেয়ে বড় কথা তারা কি আমার সমস্যা সমাধানের জন্য আসলেই সামর্থ্যবান কি? কাউকে কিছু শেয়ার করলে সে কিছু আপনাকে পরামর্শ দিবে হয়ত কিন্তু সেটা র ভালো খারাপ কনসিকোয়েন্স আপনাকেই নিতে হবে! সো সাবধান!!
নিজেই নিজের সাথে যুদ্ধ করতাম প্রশ্নোত্তরের বেড়াজালে! অবশ্যই কাউকে দোষী করে মনের শান্তি খুঁজতাম না। আমার শুধরে ওঠায় সবচেয়ে বেশি হেল্প করেছে আমার মা আর আমার ছোট্ট দুগ্ধপোষ্য সন্তান! জি হ্যা! আমার ছোট্ট শিশু ইনায়া! শুধুমাত্র দায়িত্ববোধ আমাকে তখন থেকে এখন পর্যন্ত সাহস যুগিয়েছে! এমনকি মাঝরাতে জ্বরের ঘোরে বিছানায় একা আমি যখন কাউকে ডাকতে পর্যন্ত পারছিনা, শুধু একটা দায়িত্ব বোধ আমি না থাকলে আমার শিশু সন্তানের কি হবে সেই ভয় আমাকে সেন্স এ ব্যাক করতে সাহায্য করেছে! আর মা পেছন থেকে সাহস- দিয়েছেন তুই পারবি। যখন ক্যারিয়ার লসের হীনমন্যতা, পোস্ট প্রেগন্যান্সির বিষন্নতা, প্রিয়জনের দেয়া চুরমার করা আঘাত- অপমান, সামাজিক প্রশ্নের সীমাহীন ভয়ে আমি ঘরের কোণে আবদ্ধ, তখন নতুন করে জীবনের মিনিং খুঁজার চেষ্টা করেছি। শুধুমাত্র আমার বেঁচে থাকায় আমার আপনজনের কার কি নির্ভরতা আমাকে ভাবিয়েছে! সবচেয়ে বেশি ভাবিয়েছে- আমার সন্তানের আমার প্রতি নির্ভরতা। আর সেটাই আমাকে নিজের প্রতি যত্ন নেয়া শিখিয়েছে!
খেয়াল করে দেখেছি, যতবারই কে কি ভাবলো না ভেবে এগিয়েছি, আমাকে কেউ আটকাতে পারেনি। তারপর শুরু করলাম পথচলা। সমস্ত নেগেটিভ এনার্জিগুলো আমি জিমে গিয়ে ইয়োগা আর ট্রেডমিলে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে আসতাম। অবশ্যই জীবনকে ভালোবাসার জন্য নিজেকে ভালবাসা টা জরুরি! তোমাকে নির্দিষ্ট কারো মত ই হতে হবে এটা ঝেড়ে ফেলা জরুরি! কাছের মানুষের সান্তনাটাও দিতে বন্ধ করতে বললাম! যেই জিনিসটা আমাকে পীড়া দেয় সেটা নিয়ে ভাবাই বন্ধ করলাম! নিজেকে নিজে বললাম- "আমি পারব, আমাকে পারতেই হবে!!" নিজের জন্য না হলেও সেই মানুষগুলোর জন্য যারা আমার উপর নির্ভরশীল! সত্যি বলছি!!! ডিপ্রেশানে থাকা আপনি আপনার জন্য সবচেয়ে উচ্ছিষ্ট একজন হতে পারেন কিন্তু সেই মানুষ গুলোর কথা ভাবুন যাদের কাছে আপনার উপস্থিতিই অনেক কিছু!!
যারা আমাকে কথার দোষ ধরে মানসিক পীড়ন করতো তারা আজও, আজকে পর্যন্ত তা-ই করে আসছেন আসবেন। কিন্তু তাতে তাদের মানসিক শান্তি আসলেও আমার কিচ্ছু যায় আসে না, আমি আরো বেশী শক্তিশালী অবস্থায় এখন! অনেক বেশি পরিণত!! জীবনের কঠিন সময় আমাকে হাতে ধরে পথ চলা শিখিয়েছে। আমি কৃতজ্ঞ সেই জীবনের প্রতি। কোনো অনিশ্চয়তা ভয় দ্যাখাতে পারেনা আর! এত ঘাত প্রতিঘাত পার করে এসেছি যে, নিজের ভালো থাকাটা এখন আমার কাছে ফার্স্ট প্রায়োরিটি। আমি বিশ্বাস করি আমি ভালো থাকলে কাউকে ভালো রাখতে পারব! আর দিন শেষে জীবনটা আমার।
মোবাইল গুতাই, ইউটিউব দেখি,রান্না করার জন্য খমখর চিল্লার পা্র্টি তো আছেই,গান শুনি, টিকটক করি..... বোঝাপড়া করি নিজের সাথে নিজেই। একদম অনলি মি টাইম আমার। আর জীবনের সবটুকু কৃতজ্ঞতা উজার হয়ে যায় যখন নিজের আড়াই বছরের ছোট্ট বাচ্চা র বিশ্বাস, নির্ভরতা, আর ভালোবাসা দেখি! ও আমার সবচেয়ে দামী সম্পদ!! সেটাকে রক্ষা করার জন্যে হলেও সকল প্রতিকূলতায় লড়াই করে যাব!
আর সৃষ্টি কর্তা আল্লাহর সাথে খুব ভালো একটা কানেকশন করা খুবই দরকার। বেচে থাকাটাই একটা অনিশ্চিত অন্ধকার যাত্রার মতই রহস্যময় ছিলো। সেইখানে আলহামদুলিল্লাহ বেচে আছি, আল্লাহ হাত, পা, চোখ নাক, কান, ব্রেইন সব ঠিক রেখেছেন।কাজ করতে পারছি কথা বলতে পারছি।ঠিকঠাক নামায পড়তে পারছি। আর বেশী কিছু কি চাই বলেন??? সকল সমস্যার সমাধান তো আপনার হাতে না, কিছু জিনিস ছেড়ে ই দিন উপর ওয়ালার হাতে! তিনি হয়ত এমন কিছু ভালো ভেবে রেখেছেন যা আপনার আমার ছোট্ট মস্তিষ্কে ধরবে না! যখনই মাথায় ডিপ্রেশন স্টোরিগুলা যখনই ঘুরতে থাকে তখনই আমি আল্লাহর দেয়া নিয়ামতগুলো গুণতে থাকি। গুণতে গুণতেই নিজেই নিজেকে শান্ত করে ফেলি। আর এক্সারসাইজ কাজ করে আমার ক্ষেত্রে টনিকের মতো। আল্লাহর দেয়া এত এত রহমত আর বরকত আছে আমার উপর আলহামদুলিল্লাহ, আর কি চাই বলেন??
মানুষের জন্য দোয়া করি, ভালো কাজ করার চেষ্টা করি। পেছনের দিনের ভুলগুলো থেকে শুধরে নেয়া শিখি! মানুষ তো,ভুল ত করবেনই, এজন্য মরে যেতে হবে নাকি? জীবনের সবচাইতে বেশি ভয়ংকর দিনের কথা মনে করে বর্তমান নিয়ে শুকরিয়া আদায় করি।যেগুলা আমাকে বেচে থাকার, ভালো থাকার অনুপ্রেরণা দেয় সেইগুলাই মেমোরিতে রেখে দিয়েছি। খারাপ জিনিস এ মেমরি জ্যাম’র কি দরকার!
ডিপ্রেশন জয়ের গল্পটা অনেক সিম্পল আমার কাছে-সেটা হল দায়িত্ববোধ। ভেতরের গল্পটা আপাতত উহ্য থাকুক। কোনো একদিন লাইভে শোনাব না হয়। ভালো আছি, অনেক ভালো আলহামদুলিল্লাহ! আমাদের আশেপাশেই হয়ত কেউ না কেউ আছেন ডিপ্রেশান এ ভুগছেন! তাদের কে জানানোর জন্যই গল্পটা বলা। ডিপ্রেশান জিনি টা যে কারো হতে পারে তাতে সংকোচের কিছু নেই!
কার সাথে কতটুকু শেয়ার করবেন ভাববেন! একবার না, অনেকবার ভাববেন!! যা চলে গেছে সেটাকে ভাবেন নতুন আরও বেশি কিছু প্রস্তুতি! মনে রাখবেন খারাপ সময় আসবে আবার চলে ও যাবে! শুধু দরকার আপনার একটুখানি প্রিপারেশন!
আত্মহত্যা কখনোই কোন সলিউশন হতে পারে না। আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম, নিজেই নিজেকে ভেংগে চূড়ে গড়ে নিয়েছি। এখন ভাঙ্গার মধ্যেই নতুন গড়াকে খুঁজি!✌️
আপাতত এতটুকুই থাকুক!
মনটা প্রচন্ড রকম খারাপ!
প্রিয়জন হারানোর শোক!
প্রিয়জনের দেয়া আঘাত
প্রিয়জনরা করোনায় আক্রান্ত!
প্রিয় অভিনেতার আত্মহত্যা!
সারাদিন নেগেটিভ নিউজ!
কিছু মানুষের অবহেলা ...........!
কিন্তু দিন শেষে আমার একটা শান্তি আছে।মনের শান্তি। যেইটা অনেকেরই নাই। আমি নিজের কাছে পরিষ্কার- কখনো জেনেশুনে কারো অপকার করি নাই। বিপদের দিনে চেস্টা করি পাশে দাড়াবার সবার। তাই যতটুকুই ঘুম হয় খুবই শান্তির ঘুম হয় আলহামদুলিল্লাহ ☺ এখন না, আমার খুব বাচতে ইচ্ছে করে।নতুন ভাবে, নতুন করে সব কিছু নিয়ে। ভালোবাসার মানুষগুলো কে নিয়ে। সুন্দর করে বাচতে ইচ্ছে করে! ❤
কারও যদি মন খারাপ হয় প্লিজ লোনলি ফিল করবেন না,আমাকে মেসেজ করুন।কথা বলুন।প্লিজ, নিজেকে শেষ করবেন না।আমি আছি.....আমি আছি ☺
পৃথিবীটা অনেক ক্ষিপ্ত,একটু ঠান্ডা হোক আগে!!
আমাকে পায় কে আর ????
ঊড়াল দিবো আকাশে????
কেউ সঙ্গি হলে হলেও হতে পারো! ;)
নাফিসা কামাল ঝুমুর
১৫/০৬/২০২০
Chairman Of The Board: Syed Shamsul Alam
Editor in Chief: Tahsen Rashed Shaon
SHOKHOBOR24.COM
2994 DANFORTH AVE. | SUITE# 201
TORONTO. ON. M4C 1M7. CANADA
COPYRIGHT © 2019. ALL RIGHTS RESERVED. BY Shukhobor24.com About Us Privecy & Policy Terms & Condition